কবিতা

চিঠি

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

-সুমিতা বিশ্বাস

জয়িতা, কেমন আছো?
না না, জানতে চাইবো না।
ভালো থাকাটা ছিলো শুধু
তোমার নিজের পাওনা।

ভালো থাকবে বলে
ভালোবাসা তুচ্ছ করে
চলে গেছো বহুদূরে,
ভালোবাসা গিয়েছে বিফলে।

তুমি হয়তো ভুলে গেছো
শৈশবের সব কথা।
পথ চলতে হঠাৎ যখন
পেতে তুমি ব্যাথা,
পাজা কোলে তুলে নিতাম
বুকে রাখতে মাথা।

মা বকতো, পাজি ছেলে…
দিতো আমার কান মলে।
সব ব্যাথা ভুলে যেতে
খিলখিলিয়ে উঠতে হেসে।
দৌড়ে পালাতে তোমার বাড়ি
অভিমানে দিতাম আড়ি।
দু’দিন বাদে যখন হতো দেখা
ভুলে যেতাম আড়ির কথা।

আচ্ছা, কোলে উঠার লোভে …
তুমি কি এখন পড়ে যাও?
কেউ কি পাজা কোলে নেয়?
দুর!!! এসব কি লিখছি আমি?
তোমার আছে কোটিপতি বিলাতী স্বামী।
দু,কদম হাটো কিনা সন্দেহ।
রয়েছে দামী গাড়ি, বিশাল বাড়ি।
কার্পেটে মোড়ানো তোমার পথ
ওখানে কি কেউ পড়ে?

আমিও বেশ আছি।
গোলপাতার ঘর, খেজুর পাতার মাদুর,
মায়ের রেখে যাওয়া নকশী কাঁথা।
আমার ঘরের ভাঙ্গা জানালা দিয়ে
যখন চাঁদের আলো বুকে পড়ে,
আজো দেখতে পাই তোমার মুখ
আমার বুকের মাঝে।

আচ্ছা, তুমি কি এখন কাঁচের চুড়ি পরো?
পায়ে নুপুর, রক্ত রাঙ্গা আলতা?
নীল শাড়ী, কপালে কালো টিপ?

ধুর! এসব কি লিখছি আমি?
তুমি তো এখন বিলাতী মেম,
এসব তুচ্ছ নেই কোন দাম।

যেদিন প্রথম তুমি বলেছিলে….
ভালোবাসি, ধরেছিলে হাত।
জীবনে এসেছিলো নব প্রভাত।
ভুলে গিয়েছিলাম দরিদ্র আমি
সংসারে অভাব।

অভাবী সংসারে দারিদ্রতা
ছিলো বারমাস,
বাবা হঠাৎ চলে গেলো
অর্ধাহারে অনাহারে
মা ছেলের উপবাস।
মা-ও একদিন ওপারে…

তারপর তোমার হলো প্রস্থান
সুখে আছো বিলাতে অবস্থান।
অভিযোগ করিনি কখন আমি,
বিলাতী বাবু আমার থেকে দামী।
ভালোবাসার করেছো অপমান।

ভালোবেসেছিলাম, আজো ভালোবাসি
বুকের মাঝে রেখেছিলাম, স্মৃতি নিয়ে বাঁচি।
জানি, আসবে না কোনদিন ফিরে,
আমার গোলপাতার ছোট ঘরে।
রাখবে না হাত আমার হাতে
দেখবো না মুখটি মিষ্টি প্রভাতে।

আমার লেখা চিঠিখানি
পড়বে যখন তুমি
হয়তো তখন থাকবো না আর
ধরনী মাঝে আমি।
ভালো থেকো তুমি।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930