গল্প

বেদানা

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

-মোহাম্মদ জসিম

অতপর মহিমা একটি সন্দেহ ও দুইটি মার্বেল লইয়া ঘুমাইতে গেল

বেশি পাকলে যা হয়, ফেটে যায়—আর সেই ফাটা বেদানাটি টুপ করে মাটিতে পড়ে, লাল লাল দানাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় চারদিকে।
বেদানার দানার মতোই ছড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। সারা রাস্তায়। হাঁটছে, দাঁড়াচ্ছে, বসছে।
এতগুলো বেদানার দানার মধ্যে মহিমা একটি দানা। দাঁড়িয়ে আছে। বাস আসলেই উঠে বসবে, চলে যাবে অন্য কোথাও, ছড়িয়ে পড়বে।
আরেকটা দানার নাম বিশু পাগলা। বেদানা কিংবা বেদনা কোনটাতেই তার কিছু যায় আসে না। কখন দাঁড়ায়, কখন বসে, হাঁটে নাকি দৌড়ায় তার হিসেব কাউকে রাখতে হয় না।

দাঁড়ি তো নয়, যেন একমুঠি শুকনো ঘাস। লম্বা কোঁকড়া চুল—তাতে আবার বিচ্ছিরি জটা। কালো চেহারা, নাকের ওপর কাটা দাগ। হলদেটে দাঁত, ততোদিক হলুদ তার চোখ। বিশু পাগলার চোখের দিকে তাকিয়ে ধক করে ওঠে মহিমার বুক! মার্বেলের মতো দুঁটো চোখ, যেন অগ্নি বর্ষণ করছে।
রিক্সার টুং টাং বাজে, মানুষের কথা বাজে, রাস্তার সাথে জুতার কথাবার্তা বাজে। বেচাকেনা চলে, খাওয়া দাওয়া চলে।
নানা মানুষ, নানান দৃশ্য। মানুষ কিংবা বাজার অথবা গাড়িঘোড়া না দেখতে চাইলে সোজা উপরদিকে আকাশ ছিলো। অথচ—বিশু পাগলার দিক থেকে মহিমার চোখ সরে না। কারনও আছে। বিশু পাগলা এক দৃষ্টিতে মহিমার দিকে তাকিয়ে আছে।
মহিমা ভাবে, পুরুষ পুরুষই! পাগল হলেও। হারামী কোথাকার! কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়ে গিলে খাবে শরীরটা।
কণ্ঠ বাজে, আইসক্রিম খাবো মা।
বিশু পাগলা ভাবে, মা বোধহয়।
মহিমা ভাবে, পুরুষ মাংসাসী। পাগল হলেও।
আবার কণ্ঠ, রিক্সা নেবো আপু?
বিশু পাগলা ভাবে, বোন বোধহয়।
মহিমা ভাবে, পুরুষ কুত্তা। পাগল হলেও।
আবার কারো কণ্ঠ, আর কিছু কিনবি নাকি রুবি!
বিশু ভাবে, রুবি! মেয়ে বোধহয়।
মহিমা বুকের ওপর ভাল করে ওড়না টেনে দয়। দুজনার মাঠখানে একটা বাস এসে থামে।
মহিমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বিশু পাগলার ধ্যান ভেঙে যায়। মার্বেলের মতো চোখ দিয়ে কাকে যেন খোঁজে।

দিনশেষে মহিমা সবকিছু ভুলে যায়। শুধু ভোলে না বিশু পাগলার নোংরা মুখটি। মহিমা একটি সন্দেহ আর দু’টো হলদেটে মার্বেল সাথে নিয়ে ঘুমুতে যায়। এবং সেই রাতে মহিমা তার মৃত বাবাকে বহুদিন বাদে স্বপ্ন দেখে।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930