হ্যালোডেস্ক
ঈদের আমেজ শেষের দিকে। কিন্তু বর্ষার আমেজ এখনও শেষ হয়নি। শ্রাবণ বিদায় নিয়ে ১ ভাদ্র আগমনি বার্তা নিয়ে হাজির হয়ে প্রকৃতির সাথে সক্ষতাও শুরু করেছে ইতিমধ্যে। হঠাৎ হঠাৎ কয়েক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে স্বস্তির শীতল হাওয়া। জুড়িয়ে যাচ্ছে দেহমন। বর্ষাকাল মানেই মেঘলা আকাশ। আকাশের মর্জির কোন বালাই নেই। এই হয়ত মেঘের আড়ালে সূর্য উঁকি দিল, আবার পরক্ষণেই কালো মেঘের দাপটে সূর্যের হাসি হারিয়ে গেল। মেঘের কালো চাদরে আকাশ ছেয়ে যায়। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে, ক্লান্তিহীন বৃষ্টি। শ্রাবণের চরিত্রই এমন! ঘরের জানালা খুলে বাইরে বৃষ্টি পড়া দেখবেন, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দ শুনবেন আপনি। বৃষ্টির হালকা ছটা এসে পড়বে আপনার গায়ে। বৃষ্টি নিয়ে এ ধরনের রোমান্টিক চিন্তা আপনি করতেই পারবেন। তবে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে বৃষ্টিকে ঘিরে যতই কল্পনার ফানুস ওড়ান না কেন ঘরের বাইরের বাস্তবতার কিন্তু ভিন্ন। বর্ষার দিনগুলোতে ঘর থেকে বাইরে পা রাখলেই এ বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় ঘটবে আপনার। বৃষ্টি মানেই রাস্তাঘাট কাদায় সয়লাব, যানবাহনের আকাল, তাছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে সিজনাল রোগ বালাই সর্দি-জ্বর-কাশি বাঁধানোর সম্ভাবনা তো রয়েছেই।
বর্ষার দিনে বাইরে যেতে কোন পোশাক পরবেন? হয়ত ভাবছেন, কোন পোশাকটি পরলে আপনার সমস্যা হবে না। দুর্যোগের এ দিনগুলোতে জর্জেট সিল্ক অর্থাৎ সিনথেটিক কাপড়ই হলো আদর্শ পোশাক। সিনথেটিকে বড় সুবিধা হলো কোন কারণে ভিজে গেলে চট করে সেটা শুকিয়ে যায়। এ ছাড়া এ ধরনের কাপড়ে কাদা বেশিক্ষণ আটকে থাকতে পারে না। ফলে তিলা পড়া, কাপড়ে ভাঁজ পড়া বা দুর্গন্ধ হওয়া ইত্যাদি কাপড় সংক্রান্ত জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় না। বর্ষার দিনে হাতঘড়ির দিকে একটু বেশি নজর দিতে হবে। খেয়াল রাখবেন, আপনার ঘড়িটি যেন ওয়াটারপ্রুফ হয়। বৃষ্টির দিনগুলোতে প্রতিদিনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিন ছাতাকে। বাজারে এক রঙা ছাতার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রিন্টের ছাতা পাওয়া যায়। তবে প্রিন্ট বা এক রঙা যে ধরনের ছাতা কিনুন না কেন, এখন কিন্তু ফোল্ডিং ছাতার কদরই বেশি।
বর্ষার দিনগুলোতে শখের জুতোর বেহাল অবস্থা কারও সহ্য হয় না। বর্ষাকাল এলেই আপনার সুন্দর জুতোগুলো বাক্সবন্দী করে ফেলুন। চামড়ার সুন্দর জুতোকে আপাতত বিদায় জানিয়ে র্যাাকসিন, রবার তার প্লাস্টিকের জুতোর আপন করে নিন। বর্ষাবান্ধব এসব জুতো চলার পথে আপনাকে দেবে যেমন স্বচ্ছন্দ তেমন স্থায়িত্ব। এসব জুতোর দামও আপনার আয়ত্বের মধ্যে থাকে। বৃষ্টির দিনগুলোতে মেকআপ সামগ্রীগুলো যাতে ওয়াটারপ্রুফ হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখুন তা না হলে বৃষ্টিতে ভিজে আপনার মেকআপের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই মেকআপ নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। বৃষ্টির দিনে হালকা মেকআপ নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বর্ষা মানেই তো শুধু বৃষ্টি দিনে হালকা মেকআপ নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বর্ষা মানেই তো শুধু বৃষ্টি নয়। বৃষ্টির পরপরই অনেক সময় ভ্যাপসা গরম স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। বর্ষার মৌসুমে রুজ বা পাউডার ব্যবহার না করাই ভাল। চোখ সাজানোর জন্য যে আইলাইনার ও মাশকারাটি ব্যবহার করবেন তা ওয়াটারপ্রুফ কিনা দেখে নিন।
ঘরে বসে রূপচর্চা
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ধারাবাহিকতায় দিন দিন ফ্যাশনসচেতন হয়ে উঠছে মানুষ। নিজেকে পরিপাটি রাখতে এখন ব্যস্ত সবাই। রূপ শুধুই জন্মগত প্রাপ্তি নয়। নানা ধরনের পরিচর্চায় হয়ে ওঠা যায় আকর্ষণীয়।
পরিমার্জনার দ্বারা ত্বককে এমন মাত্রায় তুলে নিয়ে যাওয়া যায় যখন পাশ দিয়ে চলে যেতে যেতে আনমনা মানুষটি ফিরে তাকাতে বাধ্য হয়। কিন্তু জানতে হবে পরিমার্জনার পদ্ধতি। এ জন্য এখন কষ্ট করে দূরে কোথাও গিয়ে শিখে আসার প্রয়োজন নেই। নিজে ঘরে বসেই ইউটিউব দেখে রুপচচ্চার আইডিয়া নিতে পারেন।
১. ঘুম থেকে উঠে কাঁচা দুধ, শশার রস ও পাতিলেবুর সর কিছুক্ষণ মুখে লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২. ব্রণের সমস্যা থাকলে শশা ও আঙুরের রস, চন্দন বাটা, পাতিলেবুর রস, কমলালেবুর খোসা বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো মুখে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
৩. পীচ ফল কুরিয়ে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে মুখ উজ্জ্বল দেখায়। এছাড়া, এটি মুখে লাগালে মুখের বলিরেখা দূর হয়। এটি মুখে টোনার হিসেবেও কাজ করে থাকে।
৪. পীচ ফলের নির্যাস মুখে বাড়তি ময়েশ্চার দেয়। মুখ পরিষ্কার করতে দুধ, পাতিলেবুর রস ও কাঁচা হলুদ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
৫. শশা ও তরমুজের রস সমপরিমাণে মিশিয়ে মুখে লাগন। ১৫-২০- মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। গরমে যে কোন ত্বকেই ভাল এই ময়েশ্চার।
৬. মুখে শুধু শশা বাটা লাগালেও ভাল টোনারের কাজ দেয়।
৭. দই আর বেসন একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকে এটি আদর্শ।
৮. মুলতানি মাটি ও ঠান্ডা গোলাপজল একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান।
৯. রোদে বেরুনোর আগে এবং রোদ থেকে ঘুরে এসে মসুরডাল বাটা ও টমেটোর রস মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
১০. ঠোঁটের কালো দাগ দূর করতে প্রতিদিন পাতিলেবুর রস চিনি দিয়ে ঠোঁটের চারপাশে ঘষুন যতক্ষণ না চিনি গলে যায়।
বর্ষায় খাবারেও থাকে একটু বাড়তি চাহিদা। ঘরে বসেই রান্না করতে পারেন যে খাবার-
ভুনা খিচুড়ি
যা লাগবে: পোলাওর চাল ২০০ গ্রাম, ভাজা মুগ ডাল ১০০ গ্রাম, রসুন ও আদা বাটা দুইচা চামচ, আদা, গরম মসলা (দারুচিনি, এলাচ), কয়েকটা তেজপাতা, ২টা পেঁয়াজ বেরেস্তা, ঘি দুই টেবিল চামচ, তেল এক কাপ, লবণ, চিনি, স্বাদ মতো, কাঁচামরিচ ৪-৫ টি এবং পানি পরিমাণ মতো।
যেভাবে করবেন: হাঁড়িতে তেল দিন। এতে আস্ত গরম মসলা, তেজপাতা দিন। পোলাওয়ের চাল, ভাজা ও সেদ্ধ করে রাখা মুগডাল দিন। ভাজা ভাজা হলে অর্ধেক পেঁয়াজ বেরেস্তা ও আদা-রসুন বাটা দিন। পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢেকে দিন। যদি এক কাপ চাল ও ডালের মিশ্রণ হয় তবে দেড় কাপ পানি দিতে হবে। নামানোর আগে কাঁচামরিচ, লবণ ও পেঁয়াজের বেরেস্তা দিন। এই খিচুড়ি পোলাওয়ের মতো ঝরঝরে হবে। উপরে ঘি ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
ইলিশ খিচুড়ি
যা লাগবে: খিচুড়ির মোটা চাল ৫০০ গ্রাম মসুর এবং মুগডাল মিলিয়ে ৪০ গ্রাম ইলিশ মাছ ৪ পিস পেঁয়াজ মিহি করে কাটা ১/২ বাটি রসুন বাটা ১ চা চামচ, কাঁচামরিচ ৮-১০ টি লবণ স্বাদ অনুযায়ী তেজপাতা ২ টি রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ আদা কুচি ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজ মোটা করে কাটা ১ বাটি হলুদ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ সরিষার তেল পানি পরিমাণমতো।
যেভাবে করবেন: প্রথমে চাল এবং ডাল একসঙ্গে ভালো করে ধুয়ে নিন। একটি পাতিলে তেল গরম করে পেঁয়াজ এবং বাকি সব কুচি করা ও গুঁড়া মসলা এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে মসলা ভালো করে কষিয়ে চাল ও ডাল দিয়ে ভালো করে ভেজে তাতে পরিমাণমতো পানি এবং কাঁচামরিচ দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। এখন একটি কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করে তাতে ইলিশ মাছের টুকরার সঙ্গে অন্যান্য সব বাটা ও গুঁড়া মসলা, কালিজিরা, কাঁচামরিচ এবং স্বাদ অনুযায়ী লবণ দিয়ে মাখা মাখা করে রান্না করে ফেলুন ইলিশ মাছ। তারপর খিচুড়ি রান্না হয়ে এলে অর্ধেক খিচুড়ি তুলে নিয়ে রান্না করা মাছ বিছিয়ে উপরের বাকি রান্না করা খিচুড়ি ঢেকে দিয়ে আর ১০ মিনিট চুলায় রেখে রান্না করে গরম গরম পরিবেশন করুন ইলিশ খিচুড়ি।
এমন বর্ষা মৌসুমে নিজেকে যত্নে রাখুন ও বাসায় নিজের তৈরি সুস্বাদু খাবার রান্না করে পরিবারের সবাইকে উপহার দিন।
Add Comment