সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার
পৃথিবীতে তোমার আগমন হয়েছিল এইতো সেদিন!! অথচ দেখতে দেখতেই অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে। কোথা হতে তোমার আগমন আর কেনইবা তোমার আবির্ভাব তা অজানা। তুমি এতো অদ্ভুত সুশ্রী যে, তোমাকে দেখে কেউ চোখ ফিরিয়ে নেবে, ভাবাই যায় না। কখনও তুমি গোলাপের কাঁটার মতো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছ বেঁচে থাকার একমাত্র যন্ত্রটাকে। আবার কখনও বা ছুটে চলেছো সমুদ্রের বুকের ওপর তীব্র বেগে বয়ে চলা শো শো বাতাসের মতো। তোমার সেই ছুটে চলায় নেই কোনো বিরাম নেই কোনো ছুটি। সে যেন এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে নিরন্তর যাত্রা।
কে জানতো এতোটা অর্থবহ হয়ে প্রকৃতিতে তোমার আগমন ঘটবে! গোটা পৃথিবী যেন থমকে গিয়েছে তোমার পদচারণায়। সমস্ত উচ্ছ্বাস, আবেগ, প্রতিশ্রুতি, দায়বদ্ধতার মৃত্যু ঘটেছে তোমার আগমন হেতু। কত শত মৃত্যু দেখেছে এ প্রকৃতির মানব সন্তানরা। কত অশ্রুর বিনিময়ে বিদায় দিতে হয়েছে তাদের প্রিয়জনদের। কত প্রভাবশালী, শক্তিধররা, আর কারও কাছে না হোক তোমার কাছে ধরাশায়ী হতে বাধ্য হয়েছে। হয়তো এদের কাউকে ছাড় দিয়েছ আর কাউকে বা অন্তিম যাত্রায় শামিল করেছ। কর্মক্ষম মানুষকে তুমি ঠেলে দিয়েছ কর্মহীন অভিশপ্ত জীবনের ছায়ায়। কত শত মানুষ হারিয়েছে তার মাথা গোঁজার ছোট্ট আশ্রয়টুকু। কত স্বপ্নের বলী হয়েছে তোমার পদতলে।
তুমি যেন সকলের কাছে এক জীবন্ত অভিশাপ। তোমার তীক্ষ্ণ ছোবলের আঘাতের দরুন গোটা মনুষ্য জাতির কাছে তুমি আজ এক “আতঙ্ক” নামে আবির্ভূত হয়েছো। তাইতো তোমাকে জয় করার জন্য এতো আয়োজন, এতো প্রস্তুতি। তোমার অবাধ বিচরণ রুখে দিতে এ ধরণীর সন্তানরা যতটা প্রস্তুতি নিয়েছে ততটা প্রস্তুতি নিয়ে হয়তো তারা সশস্ত্র যুদ্ধের মুখোমুখিও হয়নি। কিন্তু তবুও তোমার ছোবলের বিষাক্ততা থামেনি। কখনও শান্ত কখনওবা অশান্ত। অদম্য শক্তি নিয়ে তুমি যেন বিচরণ করেই চলেছো এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।
তবে তোমার আগমন পৃথিবীর মনুষ্য জাতির জন্য যতোটা তিক্ততার জন্ম দিয়েছে ঠিক তার উল্টোটি হয়েছে পৃথিবীর বাকি সব সৃষ্টির জন্য। হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে তার আগের রূপ। প্রকৃতির রস, গন্ধ আর স্বাদ আহরণ করতে সেই সৃষ্টিকূল যেন মরিয়া হয়ে উঠেছে। কথায় বলে প্রকৃতির সাথে বিরূপ আচরণ করলে সে তার প্রতিশোধ নেবেই। হয়তো তাই আজ তোমার হঠাৎ আগমন….
সকলেই তোমার ভয়ে ভীত সন্তস্ত্র। কিন্তু তবুও, আমি বলি, তুমি সকলের কাছে ক্ষণিকের জন্য হলেও “শাপে বর” হয়েই এসেছ। তুমি ধরণীকে করেছ কোলাহল মুক্ত। বিষাক্ত বাতাসকে করেছ কিছুটা বিশুদ্ধ। কোথাও কোনো তাড়া নেই। অপরিচ্ছন্ন জীবনকে করেছ পরিচ্ছন্ন। মধুর সম্পর্কগুলোকে করেছ আরও মধুর, সুদৃঢ়। নিত্যকার অবিশ্রান্ত ছুটে চলা জীবনকে তুমি করেছ প্রশান্তিময়। আর কি চাই এক জীবনে। তবে কী জানোতো, আমার এ চাওয়া কখনই তোমার অপর পৃষ্ঠের কুৎসিত কালো ছায়ার বিনিময়ে নয়।
হয়তো পৃথিবী থেকে একসময় তুমি বিদায় নেবে, হয়তোবা থেকে যাবে। আবার, কখনও হয়তো ফিরে আসবে অন্য কোনো নামে, অন্য কোনো রূপে। আর এটাই বাস্তবতা, যার কাছে নতজানু আমরা সকলে। ভালো আর মন্দ নিয়েই ভালো থাকুক আমার ধরণী…
-করোনা তোমাকে
লেখক- বেনিন স্নিগ্ধা
Add Comment