সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার
-ফরিদ আহমদ দুলাল
এই শহরে আমার স্বজন থাকে না কেউ
যদিও এখানে জন্ম-জনপদে আছে প্রিয় ব্রহ্মপুত্র ঢেউ,
এ শহরে প্রতিটি ক্ষয়িষ্ণু বাড়ি প্রবীণ টিনের ঘর
সবাই আমার চেনা আমিও ছুঁয়েছি একদা প্রস্তর-ভাস্কর্য-অন্তর।
এখানে বিপন্ন অশোক কানন পারিজাত সারি
লবঙ্গ বৃক্ষের মৃত করোটিও বলে, যেনো ছুঁয়ে দেখি নাড়ি!
শতবর্ষী বৃক্ষদের কতো অভিযোগ
কে কাকে হৃদয়ে রাখে আমাদের সাময়িক ব্যাধি ক্ষণিক সম্ভোগ!
এ শহরে বালুচরে যে খঞ্জনা পদচ্ছাপ রেখে যেতো হেঁটে
নদী-তীরে সে নেই এখন, তাকে পাবে নেট ঘেঁটে;
সে-ও আমার প্রেয়সী ছিলো পাখা হাতে রইতো অপেক্ষায়
কতো দীর্ঘ পথ হেঁটে আমি পৌঁছাতাম ওর আঙিনায়।
দোল-পূর্ণিমায়-ঝুলনযাত্রায় ছুটে গেছি ঢাকে আমন্ত্রণ ধ্বনি এলে
আজ যখন এখানে কেউ নেই তবু প্রশ্ন করি- তুমি কার কাছে এলে?
যত পথ হেঁটেছি এ জনপদে সেখানেই ঝরেছে কষ্টের ঘাম
প্রদীপ জ্বেলেছি মঞ্চে মানুষের পায়ে কত রেখেছি প্রণাম
ফুলে ফুলে ঘুরে এখানে সঞ্চয় করেছি সৌরভ
সেখানে এখন গরলের ছড়াছড়ি এ কোন রৌরব!
মহল্লায় মহল্লায় চলে উৎসবে স্বার্থান্ধ স্তব বিরচণ
আর শুনি স্তাবকতা স্থুল সম্ভাষণ।
বেগানা পুরুষ যেন আমি পরিযায়ী পাখি খাদ্য-সন্ধানী অচেনা আগন্তুক
আমি যেনো ঘোর অমানিশায় এসেছি দূরের পরিব্রাজক!
অথচ এখানে কতো অসংখ্য আঁচল মুছে দিতো ঘাম
“মুখটা শুকিয়ে কাঠ!” বলে দুধ ও পলান্ন দিতো ছিলো মুক্তির সংগ্রাম।
সদাচার-শুদ্ধতা ও প্রেম মারা গেছে এখানে এখন
কবরে আগরবাতি ধূপারতিসহ জ্বলে শ্মশান-প্রাঙ্গণ;
তবুও এসেছি মৃত্তিকার কাছে এখানে নাড়ির টান
অবহেলা-অনাদরে ফিরে যাবো জানিয়ে সম্মান।
Add Comment