সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার
-তানজারীন ইফফাত স্বাতী
আমি ফিরে এসেছি আবার। যেখানে ছিলাম আগে। সেখানে– যেখানে দিন রাত কাটতো একদা। সেখানে–যেখানে স্বামী ছিল সন্তান ছিল। ঘরটি আজ বড্ড ফাঁকা। ধুলো ময়লা আর মাকড়সার জালে ছেয়ে আছে। বিছানার বালিশ চাদর ময়লা ছেঁড়া। এতদিন কোথায় ছিলাম জানো? হাসি পায় আমিনার—-। কোথায় ছিলাম জানো?
ঘরের চারপাশটা ঘুরে ঘুরে দেখে। এই ঘর থেকে আমিনার স্বামী ওকে একদিন বের করে দিয়েছিল ঘার ধাক্কা দিয়ে।
সত্যিই কি ও সেদিন ব্যভিচারী হয়েছিল? স্বামীর মন বুঝতে চায় নি তা। আজ এই ঘরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকতে বড্ড মন চাইছে। আমিনার স্বামী সাতদিন পরেই বিয়ে করেছিল। দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় চলে গেছে খোঁজ পায় নি, আর কোন খোঁজ করেও নি। কি হবে আর! সব শেষ হয়ে গেছে। যে স্বামী ওকে সেচ্ছায় বের করে দিয়েছে, যার চোখে কোন মায়া ছিল না, সন্তানের দোহাই দিয়েও যেখানে ঠাঁই হয় নি। সেখানে আর যাই হোক——। সেখানে সব থাকতেও ও আজ সর্বহারা। এখানে আসতে আসতে লোকের মুখে শুনেছে, সন্তানরা ওকে ভুলে গেছে। মা বলে কেউ ছিল তা ওরা জানেও না। সৎ মা এত খাতির করে ওদের? আসলে ও সন্তানদের কোন দোষই দেয় না। যখন চলে গিয়েছিল তখন ওরা খুব ছোট। আমিনার স্বামী হয়ত সন্তানদেরকে ওদের মায়ের কথা মনেই করতে দেয় নি।
কিন্তু আমিনা!! সে কোথায় ছিল কেউ কি জানতো? আমিনার বাবা মা মারা গিয়েছিল অনেক আগেই। এক খালা ছিল। সে আমিনাকে ঘরে যায়গা দেয় নি। পথে বের হয়ে গিয়েছিল ও। কি করবে কোথায় যাবে কোন কুল কিনারা ছিল না। গ্রাম থেকে ঢাকার ট্রেন ধরে। ট্রেনেই আলাপ হয় একজনের সঙ্গে। সে আমিনাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। যাবার যায়গা না পেয়ে আমিনা ঔ লোকের সঙ্গেই গিয়েছিল। লোকটি ওকে অনেক যায়গায় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একটি একতলা বাড়িতে এনে তোলে। তারপর কি হয়েছিল আর জানে না। মনেও করতে চায় না। শরীর! সব থেকে বড় শত্রু। প্রতি রাতেই নিজেকে আবিষ্কার করতো বেশ্যা হিসেবে। হাজার লোকের ভীড়ে আমিনাকে আর চেনা যায় না।
কোথাও যাবার যায়গা নেই। প্রতি রাতে দাড়িয়ে থাকে পার্কের আশেপাশে। যদি কারো দরকার হয়! সেখানেই যায়। কিন্তু তারপরও লোকটি ওকে ছাড়ে নি। বিয়ের প্রলোভন দেখায়। আমিনা গা ঘিনঘিন করতে করতে বলে, ” তগো মত হারামজাদা এই শহরের ওলিতে গলিতে ঘুরে। আর আমিও তাগো সাধ মিটাই। অরা হগ্গলে আমার স্বামী লাগে। তুই কে? কোন খানকার কোন খানকীর পোলা? তর লগে আমার শুইলেই কি, না শুইলেই কি? আমি তরে চাই না।”
কি আর করার আছে আমিনার। আজ বহু বছর পরে স্বামীর ঘরে এসেছে। খাটের এক কোনে বসে থাকে। আর ভাবে, সোয়ামীর ঘর, আমার সোয়ামীর ঘর। এই ঘরে একদিন ওর আশা ছিল স্বপ্ন ছিল। বাঁধ ভাঙা জোয়ারও ছিল শরীর জুড়ে। আজ কিছুই নেই। আছে শুধু স্বপ্ন ভাঙ্গা দৃষ্টি।
Add Comment