রফিকুল ইসলাম সবুজ, সিরাজগঞ্জ:
সংগীতের লোক ধারা হাজার বছর ধরে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেধ্য অংশ হিসেবে মিশে আছে; অবিচ্ছেধ্যভাবে বয়ে চলেছে বহমান নদীর মতো। আর এই ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন ফকির লালনসহ নাম না জানা অনেক বাউল সাধকেরা। তেমনি একজন বাউল সাধক ইয়ার উদ্দীন। ৮৭ হাজার গ্রাম বাংলার চিরাচরিত ঢোল-তবলা, একতারা, সরাজের ঝংকারে দির্ঘ ৩৩ বছর ধরে বাউল সংগীত পরিবেশ করে আসছেন ইয়ার উদ্দীন সেখ (ইয়ার পাগলা)। দেশের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ঘুরে বাউল গান গেয়ে যা পায় তা দিয়েই চলে তার জীবন। সিরাজগঞ্জ রায়গঞ্জ উপজেলার কাঠাল বাড়িয়া গ্রামের মৃত মোসলেম উদ্দীন সেখের ছেলে ইয়ার উদ্দীন। গানের পাগল বলে দর্শক তাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন ইয়ার পাগলা। সেই নামেই তাকে ডাকে এবং চিনে।
বাউল ইয়ার উদ্দীন পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে লেখা পড়া করতে পারেনি। ছোটবেলা থেকেই সে যাত্রা দলে অভিনয় করতো। প্রশ্নের জবাবে ইয়ার উদ্দীন বলেন, আমার বয়স যখন ১৪/১৫ বছর তখন থেকেই আমি যাত্রা পালায় অভিনয় করি। কিন্তু আমাকে বার বার শুধু মেয়ের চরিত্র দেওয়ার কারণে যাত্রা দল থেকে বের হয়ে আসি, আর তখন থেকেই আমার গানের জিবন শুরু। ৩৩ বছর হলো এই সরাজ আমার সঙ্গী। কি ধরনের গান গায়? সে ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, বাংলা লোক গানের বিভিন্ন ধারা যেমন পালা গান, মুর্শিদি, বিচ্ছেদ, জারি-সারি সবই।
গান গেয়ে তার সংসার কিভাবে চলে? এমন প্রশ্নের জবাব বলেন, পরিবারে সদস্য ৬ জন, গান গেয়ে যা পাই তা খুবই সামান্য, তা দিয়ে আমার একদমই চলে না। স্ত্রী সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে দিন জাপন করছি। বাংলার এই অমূল্য সম্পদ “লোকগান” আজ বিলুপ্তের পথে। যা সংরক্ষন করার তেমন কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। আর যারা এগুলো রক্ষা করে চলেছে সেই বাউল শিল্পিদেরও দেখাশোনার কেউ নেই। ফলে মানবেতর জিবন যাপন তাদের করতে হয়।
তাই লোকগানের যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে খুব শিগগরই বাংলার এই অমূল্য সম্পদ হারিয়ে যাবে এ দেশ থেকে।
Add Comment