-বিপ্লব রেজা
এক
১৯৮৮ সালে সিউল অলিম্পিকে চারশ’ মিটার দৌঁড় শুরু হবার মাত্র দেড় মিনিট আগে ইনজুরির কারণে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন ডেরেক এন’নি রেডমন্ড। এদিকে টানা চার বছর অর্থাৎ এক হাজার চারশ’ ৬০ দিনের ঘন্টার পর ঘন্টা সাধনা ও বুকের মধ্যে লালিত স্বপ্ন মুহুর্তের মধ্যেই গুড়োগুড়ো হয়ে যায়। অথচ আগের তিন বছর ধরে ভালো ফর্মেই ছিলেন তিনি। ১৯৮৫ সালের ব্রিটেনে চারশ’ মিটার দৌঁড়ে রেকর্ড করেন। ১৯৮৬ সালে অন্য আরেকজন সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিলেও ১৯৮৭ সালে আবার সেই রেকর্ড নিজের দখলে নেন। ওই বছর তিনি কমনওয়েলথ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চারশ’ মিটার রিলে দৌঁড়ে গোল্ড মেডেল পান।
অলিম্পিকে দৌঁড় হচ্ছে এমন একটা জিনিস, যেখানে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হয় ৪৫ সেকেন্ডে আর প্রিপারেশন নিতে হয় ৪ বছর ধরে। ইনজুরি থেকে সেরে উঠতে ডেরেককে ৮টা অপারেশন করতে হয়। ১৯৯১ সালে টোকিওতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে চারশ’ মিটার রিলে দৌঁড়ে গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। তারপর, ১৯৯২ সালে বার্সলোনা অলিম্পিকে চারশ’ মিটার দৌঁড়ের প্রথম রাউন্ডে সবার আগে সবচেয়ে কম সময়ে দৌঁড় শেষ করেন।
কোয়াটার ফাইনালও চমৎকারভাবে শেষ করলেন। বেশ ফুরফুরে মনে শুরু করলেন সেমি-ফাইনালের দৌঁড়। সবাই জানতো, ডেরেক, কমপক্ষে একটা না একটা মেডেল পাবেই। আর গোল্ড পেয়ে গেলেও, অবাক হবার কিছু থাকবে না।
সেমি ফাইনালে দৌঁড় শুরু করলেন। দেড়শ’ মিটার যাওয়ার পর তার পায়ের মাংসপেশী ছিড়ে যায়। তারপরও দৌঁড় চালিয়ে নিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মাটিতে লুটিয়ে পরেন। ব্যথায় কাতরাতে থাকেন। ছুটে আসেন চিকিৎসকসহ অনেকে। কিন’ ওই ভাঙ্গা পা নিয়ে ডেরেক উঠে দাঁড়ালেন। পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করেন। ঠিক দৌঁড় না, খুড়িয়ে খুড়িয়ে, সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে, জানপ্রাণ দিয়ে হেঁটে, একটাই লক্ষ্য ফিনিশিং লাইনে পৌঁছানো। বাকি প্রতিযোগীরা সেই কবেই দৌঁড় শেষ করে ফেলেছেন। ডেরেক খুড়িয়ে খুড়িয়ে দৌঁড়াতে লাগলেন। ছেলের এমন অবস্থা দেখে, গ্যালারীতে বসা ডেরেকের বাবা নিজেকে আটকে রাখতে পারলেন না। সিকিউরিটির বাধা কাটিয়ে ছুটে গেলেন তার খুড়িয়ে খুড়িয়ে ফিনিশিং লাইনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছেলের কাছে। ডেরেক মেডেল জিতেনি কিন’ যে মিশন তিনি শুর্ব করেছিলেন সেটা তিনি শেষ করেছেন।
দুই
পরের দুই বছর সর্বমোট ১১টা অপারেশন করেন ডেরেক। তার চিকিৎসক তাকে স্রেফ জানিয়ে দেন, তুমি আর দৌঁড়াতে পারবে না। এরপর তিনি তার লৰ্যকে সামান্য পরিবর্তন করে বাস্কেটবল ক্লাবের দরজায় কড়া নাড়তে শুর্ব করলেন। শুন্য হাতে ফিরে, রিজেকশন খেয়েও, বাস্কেটবলে সাধনা চালায় যান। কয়েকবছর পর তিনি ঠিকই গ্রেট বিটেনের ন্যাশনাল বাস্কেটবল টিমে জায়গা করে নেন। মানবজীবনে অনেক সময় এ ধরনের পরিসি’ আসে, যে বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন বা দক্ষ অর্জন করেছেন, সেখানে পুষিয়ে উঠতে পরতেছেন না। আপনি হয়তো ফ্যাশন ডিজাইনার হতে চান কিন’ পড়তেছেন বিবিএ বা আপনি প্রোগ্রামিং করতে চান কিন’ আপনার ডিগ্রি ইতিহাসে। তাই যে বিষয় ভালো লাগে না, সেটা নিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর না করে, বরং আপনার সখ বা লক্ষ্য পূরণের জন্য এগিয়ে যান। একদিন ঠিকই সুযোগ আসবে। তখন সেই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে দিন। আপনার পাশেই এমন হাজারো হাজারো উদাহরণ আছে। মনে রাখবেন, অন্যরা পারলে আপনিও পারবেন।
এ ক্ষেত্রে ডেরেক রেডমন্ডের কথা মনে রাখতে ভুলবেন না, তিনি বলেছেন তুমি তোমার লক্ষ পূরণের জন্য ইতিপূর্বে যে কাজটি শুরু করেছ, সে কাজটি যত কঠিনই হোক না কেন সে কাজটিকে সমাপ্ত করো।
লেখক: গবেষক ও সাংবাদিক
Add Comment