হ্যালোডেস্ক
গায়ে হলুদের আলাপচারিতা
ষড়ঋতুর পরিক্রমায় এখন চলছে শীতকাল। গ্রামের বাতাসে এখন পিঠা আর রসের গন্ধ। এ সময়ে দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই বিয়ের ধুম নামে। গ্রাম কিংবা শহর সব জায়গায় এখন বিয়ে বিয়ে রব। আর বিয়ে মানেই ব্যস্ততা। বর-কনের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা; মেহমানদের খাবার আয়োজনসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় পরিবারের সদস্যদের।
বিয়ের অন্যতম অংশ মেহেদী রাত; যা গায়ে হলুদের রাত নামেও পরিচিত। মেহেদী রাতের আয়োজনকে সংস্কৃতির অংশই বলা চলে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দূর-দূরান্ত থেকে বর-কনের বাড়িতে ছুটে যান নিকট আত্মীয়রা। সবার উপস্থিতিতে নাচ-গান-ঠাট্টা-হুল্লোড়ে মেতে উঠে বিয়ে বাড়ি। কাজ আর আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রায় সবাই ওই রাতের ঘুম বিসর্জন দেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের আয়োজনের প্রথম ধাপও বলা চলে মেহেদী রাতকে। একটা সময় দুপুরের খাবারের আগেই বর ও কনের মেহেদী রাতের প্রস্তুতি শুরু হতো। মেহেদী পাতা সংগ্রহ, মেহেদী পাতা বাটা, হলুদ বাটা, ৭ পুকুরের পানি সংগ্রহসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকতেন কনে ও বরের বাড়ির সদস্যরা। এখন আর সেই দিন নেই। মেহেদী পাতা সংগ্রহ; মেহেদী পাতা ও হলুদ বাটার কাজ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বাড়ির মেয়েরা। সে জায়গা দখল করেছে প্যাকেটজাত মেহেদী ও হলুদ গুঁড়া। আগে মেহেদী রাতের সন্ধ্যা থেকে কনে সাজানোর প্রস্তুতি চলতো। শুধু কনের ঘরেই নয়; তার প্রতিবেশীর ঘরেও এর রেশ ছড়িয়ে পড়তো। তবে সেই দিন এখন আর নেই। আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সেই চিত্র এখন আর দেখা যায় না। আগের মতো সন্ধ্যায় কনের সাজগোজ শুরু হলেও সেটা ঘরের পরিবর্তে পার্লারে। মেহেদীর রাতে পার্লারে গিয়ে ভারী মেকআপ করতে দেখা যায়। এটা কোনোভাবেই উচিৎ নয়। মেহেদী রাতে কনেকে দীর্ঘ সময় স্টেজে থাকতে হয়, তাই যত সম্ভব কম মেকআপ করলে ভালো হয়। মেহেদী রাতের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে ফেসিয়াল, ফেয়ার পলিশ, ওয়্যাক্সিং করিয়ে নেওয়া ভালো। এতে মোটামোটি উজ্জ্বল দেখাবে। আর ছবিতেও ভালো দেখা যায়।
মেহেদী রাতে হলুদ রঙের প্রাধান্য থাকে। আগে এ রাতে লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পরতো মেয়েরা। তবে যুগের পরিবর্তনে মেহেদী রাতে হলুদের পাশাপাশি লাল, কমলা, বেগুনি রংয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে গায়ে হলুদের রাতে মেয়েদের তাঁত, জামদানি ও কাতান শাড়ি পরতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই কনের গায়ের রঙের সঙ্গে মানানসই শাড়ি বেছে নিতে হবে।
কনেকে সাজাতে একটা সময় কাঁচা ফুলের গহনার বিকল্প ছিল না। বর্তমানে কাঁচা ফুলের ব্যবহার না থাকলেও শাড়ির সঙ্গে মিল রেখে কাপড়ের তৈরি ফুল ব্যবহার করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, কনেকে সাজাতে কোনোভাবেই ভারী ফুল দেওয়া যাবে না। ভারী ফুল দেওয়া হলে দীর্ঘ সময় ধরে তা রাখতে কনের কষ্ট হয়। আবার ফুলের পরিমাণ বেশি হলে কনের চেহারা ভালোভাবে দেখা যায়। তাই যথাসম্ভব হালকা এবং কম ফুল দিয়ে কনেকে সাজালে ভালো দেখায়।
গায়ে হলুদের অন্যতম আকর্ষণ মেহেদি লাগানো। মেহেদী রাতে কনের বোন এবং বান্ধবিরা মিলে কনের হাতে মেহেদীর আলপনা আঁকে। অনেকেই মনে করেন, মেয়েদের হাতে মেহেদীর গাঢ় আলপনা ভালো দেখায়। সে ধারণা সঠিক নয়। সব সময় মনে রাখতে হবে, পরিমিত সব কিছুই সুন্দর। মেহেদীর আলপনার ক্ষেত্রেও এটি অনুসরণীয়। হাতজুড়ে হালকা আলপনা দেওয়া হলে তা অনেক ভালো দেখায়। আর ছবিও সুন্দর হয়।
Add Comment