হ্যালোডেস্ক
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সাধারণ ছুটি ও লকডাউনের কারণে চলাফেরায়ও আছে কড়াকড়ি। ফলে এক ধরনের ঘরবন্দি দেশের প্রায় চার কোটি শিশু-কিশোর। এ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় একাডেমিক পড়াশোনায় মন বসছে না তাদের। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খেলাধুলা, ঘোরাঘুরির আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত। হঠাৎ ছন্দপতনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তাদের জীবনে। এ অবস্থায় শিশু-কিশোরদের আনন্দময় পরিবেশ দিতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও মনোবিদরা। ঘরবন্দি শিশু-কিশোরদের আনন্দ দিতে সাহিত্যের মজার বই ও ইনডোর গেম খেলার সুযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, মানস-বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় শৈশব-কৈশোর। এ সময়টিই সব কিছু নতুন আলোক নিয়ে উপস্থিত হয়। তাই এ পর্বটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় বেশির ভাগ শিশু-কিশোর খুব যান্ত্রিক হয়ে উঠছে, হাঁপিয়ে উঠছে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে। তাদের জগৎ হয়ে যাচ্ছে বর্ণহীন। তাদের জগত্টা উজ্জ্বল করতে শিশু-কিশোর সাহিত্য হতে পারে সহায়ক। সততা, নৈতিকতা আর আপসহীনতার বীজ শিশু-কিশোর মনে বপন করতে হয়, বস্তুত এ কাজটি করতে পারে পাঠাভ্যাস। পাশাপাশি ইনডোর গেম তাদের জগৎ আনন্দময় করতে পারে।
চার দেয়ালে বন্দি থেকে শিশু-কিশোররা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে বলে রাজধানীর একাধিক অভিভাবকদের কাছ থেকে এমন তথ্য জানা যায়। তাই তাদের ভালো লাগার জন্য কখনও কার্টুন, কখনও রংতুলি বসে ছবি আঁকা আবার কখনও ঘরে বসে খেলাধুলা ও বই পড়ে সময় পার করছে। এই যেমন বৃত্ত ও বিন্দু দুই ভাই-বোন টানা লকডাউন সময়টা ঘরবন্দি থেকে সময় কেটেছে তাদের। তারাও বাসায় বসে কার্টুন দেখা, গেমস্ খেলা, বই পড়া আবার মায়ের কাছে আবদার সাজগোজ করিয়ে দেওয়া তারপর ছবি তোলা এভাবেই তাদের প্রতিদিন সময় পার করতে হচ্ছে।
মহামারিকে ঘিরে বাংলা সাহিত্যের বেশির ভাগ লেখক কলম ধরেছেন শিশু-কিশোরদের জন্য। তাদের জন্য লিখেছেন নানা স্বাদের গল্প-উপন্যাস, কবিতা-ছড়াসহ নানা রচনা। অত্যন্ত সমৃদ্ধ আমাদের শিশু ও কিশোর সাহিত্য। অনেক বাড়িতে রয়েছে শিশু-কিশোর সাহিত্যের বই। ঘরবন্দি শিশু-কিশোরদের এখন অফুরন্ত অবসর। পাঠ্যবই পড়ার ফাঁকে অনেকেই শিশু-কিশোর সাহিত্যের বই পড়তে পারে। এ জন্য অভিভাবকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদের হাতে তুলে দিতে হবে মজার মজার বই।
অনেক বাসা-বাড়িতে থাকে ইনডোর গেমের নানা উপকরণ। স্কুল বন্ধ থাকায় মা-বাবার সঙ্গে শিশু-কিশোররা মেতে উঠতে পারে ইনডোর গেমসেও। ইনডোর গেম যেমন—দাবা, লুডু, মনোপলি, পাজল গেম, ওয়ার্ড বিল্ডিং, লেগো সেট ও বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেম।
শিক্ষাবিদরা বলেন, করোনার প্রভাবে সামাজিক বিপত্তি ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে গোটা সমাজেই। সমাজের সব শ্রেণিতেই পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। শিশু-কিশোররাও তার ব্যতিক্রম নয়। ঘরে থাকতে থাকতে তাদের অনেকেই বিরক্তি ও বিমর্ষ হয়ে উঠছে। এ জন্য তাদের আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাতে পারেন অভিভাবকরা। এ সময় তাদের সঙ্গে আড্ডা, গল্প-গুজব ও নানা ইনডোর গেম খেলতে পারেন। পাশাপাশি শিশু-কিশোর সাহিত্যের বই পাঠে তাদের উৎসাহ দিতে পারেন। তাতে সুন্দর সময় কাটবে শিশু-কিশোরদের।’
শিশু-কিশোররা আমাদের অমূল্য সম্পদ। হঠাৎ করে তাদের জীবনে একটা ছন্দপতন হয়েছে। এ সময় তাদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। দিতে হবে আনন্দময় পরিবেশ। এছাড়া শিশু-কিশোরদের সাহিত্যের নানান বই পড়ার জন্য অভিভাবকদের উৎসাহ দিতে হবে।
করোনার সংকটকালে শিশু-কিশোরদের সঙ্গে কাটানো সময়গুলো যেন ইতিবাচক হয়, অভিভাবকদের সেদিকে লক্ষ রাখতে বলেন অনেক মনোবিদ। শিশু-কিশোরদের সঙ্গে যত বেশি কোয়ালিটি টাইম কাটাবেন, কথা বলবেন, তত বেশি তাদের উদ্বেগ কমবে।
Add Comment