মিলন মাহমুদ রবি
২৮ জুন ২০২১
এই বাংলাদেশেই আমরা দেখতে পাচ্ছি আর্থসামাজিক ও মানবিক উন্নয়ন ছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন সূচকেও উন্নতি ঘটছে। পৃথিবীর অন্য দেশের মতো নারীরা বাংলাদেশেও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, নারীর এগিয়ে চলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি হলো সমাজ ও মানব উন্নয়নে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে স্বপ্ন পূরণে তারই কন্যা গণতন্ত্রের মানষকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের এগিয়ে চলায় সাহস দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের মাধ্যমে।
বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশন নারীর স্বাস্থ্য, চরিত্র গঠন মানবিক গুণাবলীর বিকাশসহ যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার বিশ্বজনীন উপযুক্ত একটি সংস্থা। যা গাইড শিক্ষা আন্দোলনের গতিপথ নির্ধারণ এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বের নাগরিক হতে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়। সংস্থাটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে ও গাইড সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংস্থাটির জাতীয় কমিশনার কাজী জেবুন্নেছা বেগম দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সংস্থাটির কার্যক্রম এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বের দরবারেও নাম ফলক ঝুলছে।
তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ গার্ল গাইডস্ এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ২৬ জুন শনিবার রাজধানীর জাতীয় কার্যালয়ের অডিটোরিয়মে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাইডিং সম্প্রসারণ বিষয়ক মত বিনিময় সভার আয়োজন করে। সভার মূল লক্ষ্য ছিলো নারীকে গাইডিং প্রশিক্ষণের আওতায় আনা।
সভায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব জনাব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান প্রধান অতিথি হিসেবে জুমে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণকারীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব কে এম রুহুল আমীন। অনুষ্ঠানে ডিজিটাল মাধ্যমে আরো যুক্ত ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অধীনে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মোঃ হেলাল উদ্দিন এনডিসি।
অনুষ্ঠানে গাইডিং সম্পর্কিত কথা তুলে ধরেন প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আহমেদ ডেপুটি জাতীয় কমিশনার (প্রোগ্রাম), শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাবিনা ফেরদৌস ডেপুটি জাতীয় কমিশনার (প্রশাসন)। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শাহানাজ মালিক আহমেদ প্রকাশনা কমিশনার ও নুরজাহান আরা বেগম গাইড কমিশনার। এছাড়া মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল ও প্রধান শিক্ষকরা। জাতীয় কমিশনার কাজী জেবুন্নেছা বেগমের সভাপতিত্বে চলে অনুষ্ঠানটি।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে রাজধানীর স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আসা শিক্ষকরা খোলা প্রশ্ন পর্বে জাতীয় কমিশনার কাজী জেবুন্নেছা বেগমের গাইডিং সম্প্রসারণে নিরলস পরিশ্রমের প্রশংসনীয় ভূমিকা তুলে ধরে বলেন প্রতিটি স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগগুলোতে গাইডিং কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এতে করে আমাদের মেয়েরা সকল প্রতিকূলতায় পথ চলতে সাহস পাবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তাদের সহজ হবে।
শিক্ষকদের সাথে আলোচনার সমাপনী পর্বে জেবুন্নেছা বেগম বলেন, নারীকে ছোট করে না দেখে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের সম্মান দেখানো উচিত। বসে না থেকে তাঁদের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। তাই শিক্ষাঙ্গনে গাইডিং কার্যক্রম চালু করে তাদের মানষিক দূর্বলতা কাটাতে হবে। আমাদের সমাজে এখনো নারীকে বিভিন্ন ভাবে ছোট করা দেখা হয়, তা না করে তাঁদের কাজগুলোকে যথাযথ সম্মানের সাথে দেখা উচিত।
নারীরা যখন ঘর ছেড়ে বেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে, তখন থেকেই তাঁদের কর্মক্ষেত্র বেড়েছে। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া নারীর সংখ্যা এখনও সামান্যই। একসময় স্কুল কলেজে পড়ানোর বাইরে নারীর কাজের কথা ভাবাই যেত না। সেই ভাবা- না ভাবার জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে নারীরা আজ হিমালয় জয় করছে। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে পিছু ফিরে না থেকে ‘নারীকে তাঁর অধিকার অর্জন করে নিতে হবে’।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সংসারে নারীকে বিভিন্ন ভাবে আমরা ছোট করে দেখি। বাসা বাড়ির অনেক কাজ যা মেয়েদের দিয়েই করাতে হবে, কেমন জানি একটা গথবাধা সিস্টেমে চলে আসছি আমরা। পরিবারে সেটা না করে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদেরও সব ধরনের কাজ করার মানষিকতা এখন থেকেই তাদের ভিতরে তৈরি করতে হবে।
নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে ঘর থেকেই। নির্যাতিত মেয়েরা শারীরিকভাবে দুর্বল নয়, তারা দুর্বল মানষিকভাবে। তাই প্রত্যেকটি নারীকে ঘর ও শিক্ষাঙ্গন থেকে সাবলম্বি করার মানষিকতায় গড়ে তুলতে হবে। হাতের কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। কোন কাজকে ছোট করে না দেখে ছোটবেলা থেকে তাদের সাহস যোগানোর নেতৃত্ববোধ তৈরী করতে হবে। সমাজে বুক উঁচু করে দাঁড়ানোর মানষিকতায় তাঁদের গড়ে তুলতে হবে।
নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, অনেক প্রতিকূলতা পার করে এসে দাঁড়িয়েছি! যে সময়টা বাবাকে হারিয়েছি মনে হলো আঁধারে ঘিরে ধরেছে সবকিছু। কিন্তু পিছু ফিরে না তাকিয়ে সামনের আলোকে ধরার জন্য ছুটেছি। শুধু মাত্র মানষিকতাকে শক্ত করে ধরে রেখে প্রত্যেকটি কাজকে গুরুত্ব দিয়েছি। সব ধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। তাই শিক্ষাঙ্গনে গাইডিং সম্প্রসারণ বাড়াতে শিক্ষকদের প্রতি বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, নারীর অধিকার ফিরে পেতে কেবল সহনশীলতা থাকলে চলবে না। সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে প্রত্যেকটা কাজ শিখে নেওয়া জরুরী। ঘরের কাজের পাশাপাশি বাইরের কাজের প্রতি মনোযোগি হতে হবে। সময় এসেছে এখন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার। তাই সমাজ ও পরিবেশের সাথে মিল রেখে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে হবে। আর এটাই এখন নারীর বড় চ্যালেঞ্জ।
Add Comment