তরঙ্গটুডে

নায়করাজের মহাপ্রয়াণের তিন বছর আজ

ফাইল ছবি

 বাংলা চলচ্চিত্রের এক মহাঅধ্যায়: নায়করাজ রাজ্জাক

হ্যালোডেস্ক

যার মহাপ্রয়াণ ঘটে ২০১৭ সালের এই দিনে (২১ আগস্ট)। দিনটি ঘিরে বেশ কিছু আয়োজন করেছে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। থাকছে পারিবারিক আয়োজনও।

নায়করাজের ছোট ছেলে সম্রাট বলেন, ‌‘বাবার জন্ম ও মৃত্যুদিন আমাদের জন্য খুবই বিশেষ। চলে যাওয়ার এ দিনটিতে আমরা চেষ্টা করি গরিবদের খাওয়ানোসহ দোয়া-খায়ের করতে। এবার উত্তরায় আমাদের মার্কেটের (রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স) আশপাশের গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। মার্কেটে আব্বার তৈরি একটি মসজিদ আছে। সেখানে দোয়ার আয়োজন থাকছে। পাশাপাশি বাড়িতে মিলাদ ও দোয়া পড়া হবে।’

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ছাড়া বড় দুই সংগঠন শিল্পী ও প্রযোজক সমিতি পক্ষ থেকে শুক্রবার সকালেই বনানী কবরস্থানে ফুল দেওয়া হবে। এরপর আগামীকাল (২২ আগস্ট) শিল্পী সমিতি এফডিসিতে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন রেখেছে।

অন্যদিকে প্রযোজক সমিতি ২৩ অথবা ২৪ তারিখ একই আয়োজন করবে বলে দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতেও থাকছে।

বাংলা চলচ্চিত্রকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া রাজ্জাকের জন্ম ১৯৪২ সালের (২৩ জানুয়ারি) পশ্চিমবঙ্গের টালিগঞ্জে।

নায়করাজ নামে সুপরিচিত হলেও তার আসল নাম আব্দুর রাজ্জাক। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। সেই নাটকের জন্য তার গেম-টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা ‘বিদ্রোহী’ নামের ঐ নাটকে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়করাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।

তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসেন। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। এরপর সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের ‘১৩ নং ফেকু ওস্তাগর লেন’ চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে ‘কার বউ’, ‘ডাক বাবু’, ‘আখেরি স্টিশন’-সহ আরও ক’টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন।

নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে নায়করাজের যাত্রা জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ ছবি দিয়ে। এতে তার বিপরীতে ছিলেন কোহিনূর আক্তার সুচন্দা। প্রযোজক হিসেবে নায়করাজের যাত্রা হয় ‘রংবাজ’ ছবিটির মাধ্যমে। এটি পরিচালনা করেছিলেন জহিরুল হক। রাজ্জাকের বিপরীতে ছিলেন কবরী। ববিতার সঙ্গে জুটি বেঁধে নায়করাজ প্রথম নির্দেশনায় আসেন ‘অনন্ত প্রেম’ চলচ্চিত্র দিয়ে। এই ছবিটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। নায়ক হিসেবে এ অভিনেতার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিলো শফিকুর রহমান পরিচালিত ‘মালামতি’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূতন। এক জীবনে তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।

১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সঙ্গেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব। অর্জন করেন একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা। এছাড়াও, রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন।

তার প্রযোজনা সংস্থা রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি নির্মাণ করেছিলেন। এরমধ্যে রয়েছে- ‘আকাঙ্ক্ষা’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘পাগলা রাজা’, ‘বেঈমান’, ‘আপনজন’, ‘মৌচোর’, ‘বদনাম’, ‘সৎ ভাই’, ‘চাঁপা ডাঙ্গার বৌ’, ‘জীনের বাদশা’, ‘ঢাকা-৮৬’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘সন্তান যখন শত্রু’, ‘আমি বাঁচতে চাই’, ‘কোটি টাকার ফকির’ প্রভৃতি।

১৯৭২ থেকে ৮৯ সাল পর্যন্ত রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে— ‘স্লোগান’, ‘আমার জন্মভূমি’, ‘অতিথি’, ‘কে তুমি’, ‘স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা’, ‘প্রিয়তমা’, ‘পলাতক’, ‘ঝড়ের পাখি’, ‘খেলাঘর’, ‘চোখের জলে’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অবাক পৃথিবী’, ‘ভাইবোন’, ‘বাঁদী থেকে বেগম’, ‘সাধু শয়তান’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘মায়ার বাঁধন’, ‘গুণ্ডা’, ‘আগুন’, ‘মতিমহল’, ‘অমর প্রেম’, ‘যাদুর বাঁশী’, ‘অগ্নিশিখা’, ‘বন্ধু’, ‘কাপুরুষ’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সখি তুমি কার’, ‘নাগিন’, ‘আনারকলি’, ‘লাইলী মজনু’, ‘লালু ভুলু’, ‘স্বাক্ষর’, ‘দেবর ভাবী’, ‘রাম রহিম জন’, ‘আদরের বোন’, ‘দরবার’, ‘সতীনের সংসার’ প্রভৃতি।

অন্যদিকে নায়করাজ সর্বশেষ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ‘আয়না কাহিনী’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রে জুটি হিসেবে অভিনয় করেছিলেন তারই ছোট ছেলে সম্রাট ও কেয়া।

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930