হ্যালোডেস্ক
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা মেঘের রাজ্য নীলগিরি। বান্দরবন জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ২২০০ ফুট উঁচু পাহাড়টিই হচ্ছে বাংলাদেশের দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি পাহাড়। প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয় জায়গা এটি। প্রকৃতি তার সবটুকু সৌন্দর্য সাজিয়ে দিয়েছে পর্যটকদের জন্য। সবুজ পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরিতে এক অসাধারণ সৌন্দর্য যে কাওকেই করবে বিমোহিত। পাহাড়ের চুড়া থেকে মেঘের কাছাকাছি গিয়ে মেঘ ছোঁয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে চাইলে অবশ্যই ঘুরে আসুন মেঘের এই রাজ্যে।
বাংলার দার্জিলিং খ্যাত নীলগিরি বাংলাদেশের বান্দরবন জেলায় অবস্থিত একটি উঁচু পাহাড় এবং পর্যটন কেন্দ্র। পাহাড়টি বান্দরবন জেলা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ২২০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। পাহাড়ের চুড়া থেকে চারদিকে তাকালে দেখতে পাবেন সারিসারি মেঘ সবুজে ঘেরা পাহাড়ে আছড়ে পড়ে আছে। সারিসারি মেঘের পাশাপাশি খুব দূরে তাকালেই চোখে পড়বে কেওক্রাডং, বগালেক, চট্রগ্রাম বন্দর, সাঙ্গু নদী ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। পাহাড়ের গোড়া থেকে চূড়া অবধি সবুজের চাদরে মোড়া এবং মেঘের আনাগোনা। উঁচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ পদ্ধতিতে জাম্বুরা, পেঁপে, জলপাই, আম, কাঁঠাল, কমলালেবু, কলা, আনারস ও পেয়ারার বন সাজিয়েছেন পাহাড়িরা। ব্যস্থময় জীবনে স্বস্তি আনতে পাশাপাশি পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে একান্ত সময় কাটাতে পর্যটকদের কাছে নীলগিরি হচ্ছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং পছন্দনীয় জায়গা।
নিরাপত্তা
নীলগিরিতে রয়েছে আর্মিদের ক্যাম্প তাই পরিবার নিয়ে ঘুরার জন্য অত্যন্ত নিরাপদ এই নীলগিরি। এই পর্যটনকেন্দ্রটি আর্মি বা সেনাবাহিনিদের দ্বারা পরিচালিত। পর্যটকদের জন্য আর্মিরা এখন আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছেন মেঘের রাজ্য নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রকে।
কখন যাবেন
নীলগিরি সারাবছরই তার রুপ ছড়াতে থাকে। এই রোদ এই মেঘ এই বৃষ্টি এভাবেই প্রকৃতি রুপ বদলাতে থাকে নীলগিরিতে। একেক সময় একেক রুপ ধারণ করে নীলগিরি। সারাবছরই মেঘের আনাগোনা চলতে থাকে তবে বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ও শীতে মেঘের মেলা বসে। এইজন্য শরৎ, হেমন্ত, শীত এবং বর্ষাকালে নীলগিরি সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। শরৎ এবং হেমন্তে নীল আকাশ ও মেঘের লুকোচুরি এবং শীতে কুয়াশার চাদরে মুড়ে থাকা চারপাশ, এ যেন প্রকৃতির এক অসাধারণ রূপ। তাই নীলগিরি যেকোন সময়ই যেতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন
নীলগিরি যেতে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে প্রথমেই বান্দরবন যেতে হবে। ঢাকা থেকে বাস কিংবা ট্রেনে করে বান্দরবন যেতে পারেন। বাসে করে গেলে বান্দরবন পৌঁছাতে ৭-১০ ঘন্টা লাগবে। ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবন যেতে কোন ট্রেন নেই। চট্রগ্রাম নেমে বদ্দরহাট নামক স্থানে পূর্বানী ও পূবালী বাসে করে বান্দরবন যেতে পারবেন।
থেকে নীলগিরি কিভাবে যাবেন
বান্দরবন থেকে নীলগিরি যেতে অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে। জীপ, মহেন্দ্র, সিএনজি, লোকাল বাস অথবা চান্দের গাড়ি দিয়ে যেতে পারেন নীলগিরি। পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে গেলে সবচেয়ে ভালো হয় রিজার্ভ গাড়ি নিয়ে নিলে। এতে নীলগিরি যাওয়ার পথের অন্যান্য জায়গায়ও ঘুরে দেখতে পারবেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে জীপ নিয়ে নিতে পারেন। এইসব জীপ আপনি বান্দরবন জীপ স্টেশন থেকে বিভিন্ন গাড়ি অনুযায়ী ৩০০০-৬০০০ টাকা ভাড়ায় নিতে পারবেন। এছাড়াও চান্দের গাড়ি, সিএনজি, ছোট জীপ ইত্যাদি দিয়েও যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা না থাকলে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন। তবে নীলগিরিতে মেঘের মেলায় হারিয়ে যেতে চাইলে খুব সকালে চলে যাবেন যেন ৫-৬ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে যেতে পারেন।
নীলগিরিতে যাওয়ার নিয়মাবলী ও টিকিট মূল্য
নীলগিরি যাওয়ার পথে সেনা চেকপোষ্টে পর্যটকদের নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করতে হয়। এটি পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য রাখা হয়। সাধারণত বিকেল ৫টার পর থেকে নীলগিরির পথে আর কোন গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হয় না। তাই সময়ের দিকে লক্ষ্য রাখবেন। নীলগিরি পর্যটনকেন্দ্রে যেতে জনপ্রতি টিকেট বাবদ রাখা হয় ৫০ টাকা এবং গাড়ির জন্য রাখা হয় পার্কিং বাবদ ৩০০-৪০০ টাকা।
যেভাবে থাকবেন
বেশিরভাগ পর্যটকরাই বান্দরবন থেকে নীলগিরি ঘুরে দিনে দিনেই আবার বান্দরবন ফিরে আসেন। বান্দরবনে বেশকিছু আবাসিক হোটেল এবং রিসোর্ট রয়েছে। শহর ও তার আশেপাশেই এইসব রিসোর্ট এবং হোটেলগুলো রয়েছে। এছাড়াও যারা নীলগিরিতে থেকে মেঘের আনাগোনা উপভোগ করতে চান তাদের জন্য রয়েছে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত কটেজ। এ কটেজ সবার কাছেই খুবই আকর্ষনীয় তাই মাসখানিক আগেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে।
অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থান
নীলগিরি যাওয়ার পথে আরও অনেকগুলো আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। নীলগিরি যেতে শৈল প্রপাত ঝর্ণা, মিলনছড়ি ভিউ পয়েন্ট, চিম্বুক পর্যটন কেন্দ্র, স্বর্ণ মন্দির ও সাইরু হিল রিসোর্ট পার হয়ে যেতে হয়। আপনি রিজার্ভ গাড়ি না নিলে এইসব স্পটগুলো ঘুরে যেতে পারেন। অথবা গাড়ি ঠিক করার সময় আগে থেকেই বলে নিবেন। খুব ভালো হয় যদি আগে সরাসরি নীলগিরি চলে যান। মেঘের কোলে ঘুরে আসার পথে অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন। আর যদি বিকেলে নীলগিরিতে সময় কাটাতে চান তাহলে যাওয়ার পথেই সব আকর্ষণীয় রিসোর্ট ও পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে তারপর নীলগিরি যেতে পারেন।
ঘুরে আসুন মেঘের রাজ্য নীলগিরিতে। পরিবার, বন্ধু কিংবা পছন্দের মানুষের সাথে একান্ত সময়গুলো উপভোগ করুন প্রকৃতির বুকে।
Add Comment