‘শ্রী সুধীর দাস’ সিরাজগঞ্জ চলনবিল এলাকায় গত ৩৮বছর ধরে এতিহ্যবাহী বেত শিল্পের সাথে জড়িত। তাঁর জীবনের কথা শুনেছেন, রফিকুল ইসলাম সবুজ
সুষ্ঠ রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে বেত শিল্পের জন্য বিখ্যাত সিরাজগঞ্জ চলনবিল এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বেত ঝাড়। আর সেই সাথে বেতের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্প। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। বেত দিয়ে তৈরি হয় কৃষকের প্রয়োজনীয় দাড়িঁপাল্লা, মুড়ি খাওয়ার টুরী, চাউল মাপার কাঠা এবং সৌখিন খেলনা সামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। বাজারে বেতের তৈরি সামগ্রী’র রয়েছে আলাদা কদর।
এক সময় গ্রামের মানুষ বেতের তৈরি সামগ্রী উপর নির্ভরশীল ছিল। মাত্র এক দেড় দশক আগেও গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় প্রচুর পরিমান বেত ঝাড় চোখে পড়ত। বেত ঝাড় এখন শুধুই সৃতি। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলেও এখন তা আর চোখে পরে না। বেত যেন দুর্লভ বস্তুতে পরিনত হয়েছে।
বেত শিল্পের সাথে জড়িত সিরাজগঞ্জ তাড়াশ উপজেলার কোনাই পাড়ার বাসিন্ধা ‘শ্রী সুধীর দাসে’র সাথে কথা হয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দশ পনেরো বছর আগেও বেত শিল্পের ছিল আলাদা এক ঐতিহ্য। তখন মানুষ বেত ও বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করত। ওই সময়ে এ শিল্পের সাথে জড়িতরাও সাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল ছিল অনেকেই। কিন্ত বর্তমানে বেতের অভাবে অনেকেই পেশা বদল করে অন্য পেশায় জড়িত হয়েছে। ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বেত শিল্পটি আজ ধ্বংশের দ্বার প্রান্তে পৌঁছছে।
সুধীর দাস বলেন, আমি গত ৩৮ বছর বেত শিল্পের সাথে জড়িত। এই শিল্প আমার জীবনের সাথে মিশে আছে। তাই ইচ্ছে করলেও পেশাটি ছাড়তে পারছি না। তিনি আরো জানান, বেতের দুষ্প্রাপ্যতার ফলে নতুন বেত দিয়ে কোন সামগ্রী তৈরি করতে পারছি না। এখন বেতের তৈরি পুরাতন দাড়িঁপাল্লা, ও কাঠাসহ বিভিন্ন সামগ্রী মেরামত করে জীবিকা চলে। আধুনিক যুগে, যে সময় প্লেনসীট , প্লাষ্টিকের তৈরী দাড়িঁপাল্লা ও মিটার যেখানে মাপের কাজে সবাই ব্যবহার করছে।
বেতের তৈরি পুরাতন দাড়িঁপাল্লা ব্যবহার প্রসঙ্গে এক কৃষক জানান, প্লেনসীট ও প্লাষ্টিকের তৈরি দাড়িঁপাল্লা দিয়ে ধান মাপতে অনেক কষ্ট ও হাতে ফসকা পরে। কিন্ত বেতের তৈরি দাড়িঁপাল্লা দিয়ে দিনের পর দিন ধান মাপলেও কোন সমস্যা হয় না তাই এটাতেই আমি সাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
Add Comment