হ্যালোডেস্ক: শাস্ত্রীয় নৃত্যের জীবন্ত কিংবদন্তি দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী ও পরিচালক শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের স্নাতক ডিগ্রী, কলকাতার মনিপুরী নৃত্যালয়ের শিক্ষক নৃত্যবিশারদ গুরু বিপিন সিংহ ও কলাবতী দেবীর তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের পর ‘নর্তন বিশারদ’ উপাধীতে ভূষিত হন। ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও লোকজ নৃত্যে অভিজ্ঞ এই শিল্পী ওয়ার্ল্ড ড্যান্স এলায়েন্স বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি ও ছায়ানটের নৃত্যশিক্ষক। খ্যাতিমান এই শিল্পীর নৃত্যশৈলী পরিবেশন, পরিচালনা ও কথনে বেঙ্গল আর্টস প্রিসিঙ্কটে আজ সন্ধ্যা ৭টায় আয়োজন করা হয়েছে শাস্ত্রীয় নৃত্য উপলব্ধির পঞ্চম পর্ব। এবারের বিষয় ‘রবীন্দ্র নৃত্যধারা’ বিষয়ে গুণী এই শিল্পীর সঙ্গে কথা হয়।
রবীন্দ্র নৃত্যধারার বিকাশ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় : বাঙালীর নাচ বলতে আমি রবীন্দ্র নৃত্যধারাকে বুঝি। তিনি ১৯২৬ সালে তাঁর ‘নটীর পূজা’তে প্রথম দেখিয়েছেন। তিনি নৃত্য-শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠাসহ এ সম্পর্কিত নাটকও রচনা করেছেন। শিক্ষার্থীদের শাস্ত্রীয়-নৃত্যকলা শিক্ষায় তিনি শান্তিনিকেতনের আশ্রমে নানাবিধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে তাল (সুর) ও ভাবের (অভিব্যক্তি) সংমিশ্রণে একটি অনন্য নৃত্যধারার বিকাশ ও উন্নয়ন ঘটে। তিনি নির্দিষ্ট কোন নৃত্যরূপ অনুসরণ করেননি। তাঁর রচনায় খুঁজে পাওয়া যায় লোকজ, শাস্ত্রীয় ও বিদেশী নৃত্যরূপ। রবীন্দ্রনাথের জীবিতকালে তাঁর তত্ত্বাবধানে শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় এ নৃত্যশৈলীটি প্রতিষ্ঠিত হয় বলে একে রবীন্দ্র-নৃত্যধারা বলা হয়ে থাকে, এটি বাঙালীর নৃত্যধারা বলেও পরিচিত।
বিষয়গুলোকে কিভাবে উপস্থাপন করা হবে?
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় : অভিনয়ের সঙ্গে ছন্দোময় অঙ্গ সঞ্চালন, রবীন্দ্র-নৃত্যের ঐতিহাসিক বিবর্তন যা বাঙালীর জন্য যথার্থ, শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলীর নিজস্ব বাণী, রবীন্দ্র প্রচেষ্টায় সুর-সঙ্গীত ও নৃত্যে ধারণ, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীত ও নৃত্যে বাংলার বিভিন্ন লোকরূপ ধারণ, বিদেশী যে নৃত্যধারায় রবীন্দ্রনাথের ঝোঁক ছিল, সেগুলো নিজ সঙ্গীত ও নৃত্যে ব্যবহারে রবীন্দ্রনাথের প্রয়াস। এছাড়া থাকবে নৃত্য ও পোশাকের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সর্বদা সারল্যকে প্রাধান্য দেয়ার অভিপ্রায়। অনুষ্ঠানে অডিও-ভিজুয়াল প্রদর্শনী, নৃত্যবিষয়ক বক্তব্য ও নৃত্যকলা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র-নৃত্যের ভাব এবং বিভিন্ন ধারার নৃত্যকলা থেকে এ ধারায় আগত খুঁটিনাটি বিষয়াবলি, যা বাঙালীর আবেগ-প্রকাশক এগুলো বর্ণিত হবে।
রবীন্দ্র নৃত্যের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে যদি বলেন
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় : শুধুমাত্র রবীন্দ্রনৃত্য নয়, গোটা রবীন্দ্রনাথ সব সময় প্রাসঙ্গিক এবং আধুনিক। সব অবস্থায়ই রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন ধরা যায় রবীন্দ্রনাথের ‘দিকে দিকে নাগিনীরা ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস’ বর্তমান সময়ে এটা বেশি প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ গানটির মূল তাৎপর্য হলো হে প্রভু তুমি আমাকে শান্ত করে দাও। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথকে আরও সুগম করে তোলে। তাঁর গান আমাদের শান্তি দিতে পারে। শুধু গান বা নৃত্য নয়, তার কবিতা ও বিভিন্ন লেখা সব সময়ই আমাদের পথ চলার সাথী।
আমাদের দেশে শাস্ত্রীয় নৃত্যের বর্তমান অবস্থা কেমন।
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় : আগের তুলনায় শাস্ত্রীয় নৃত্যের চর্চা অনেক বেড়েছে। দেশের অনেকই ইন্ডিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সেই আঙ্গিকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আমরা ছায়ানট থেকেও নতুনদের মধ্যে শাস্ত্রীয় নৃত্য সম্পর্কে আরও বেশি প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করছি। এই নৃত্য প্রশিক্ষণ শুধুমাত্র ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে ভাল ভাল নৃত্যশিল্পী তৈরি হচ্ছে।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে নাচের কোন বাধ্যবাধকতা আছে কি?
শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় : শিল্পীর যেমন স্বাধীনতা আছে, তেমনি রবীন্দ্র নৃত্যভাবনার প্রতি দায়বদ্ধতাও আছে। খেয়াল রাখতে হবে আমার নৃত্য যেন তাঁর ভাবনাকে ছাড়িয়ে না যায়। রবীন্দ্রনাথের সুরুচী মাত্রাবোধ নৃত্য পরিকল্পনায় একটু সংযম মেনে তাঁর নাচ তৈরি করতে হয়। তাঁর নাচ- বাণীর পুরোপুরি রূপায়ণ নয়, অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ নয়। গানের স্বরলিপি আছে, নাচের নাই। সে ক্ষেত্রে শিল্পীর অনুভব ও রসবোধ কম্পোজিশনের জন্য তাকে যথাযথ প্রকাশ ভঙ্গিমা ও মুদ্রা যোগাবে।
তথ্য: জনকণ্ঠ
Add Comment