অনু গল্প

বাবার আঙুল, বাবার ছায়া

পৃথিবীর সকল বাবার প্রতি রইল শ্রদ্ধা

আমি মনে করি শুধু এক আধটা দিন নয় আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত জুড়ে থাকে বাবা মার স্নেহচ্ছায়া। পৃথিবী পরিক্রমার এই সফরে যতটুকু পাওয়া সবই তো তাদের হাত ধরে। তবু কখনও কখনও কিছু কথা বলার উপলক্ষ্য দরকার হয়। কোন একটা বিশেষ দিন, নির্জনে যে কথাগুলো ভাবি, সেই কথাগুলো নিবিড় ভাবে লিখতে ইচ্ছে করে এমন একটা দিনে ।

বাবা। দু অক্ষরের একটা শব্দ। তার এত ব্যপ্তি। ভাবি আর আশ্চর্য হয়ে যাই। কবি মোহিনীমোহন সম্পর্কে লিখতে গিয়ে আমি বাবা মোহিনীমোহনকে তার চেয়ে আলাদা করে রাখি। সযত্নে আলাদা করে রাখি। বাবাকে আমরা চার ভাইবোনই ছোটবেলায় খুব ভয় পেতাম। শুধু ছোটবেলা কেন অনেক বড় অবধিই।গম্ভীর, রাগী, মেজাজী মানুষ বলেই মনে হত তখন। এর কারণ হচ্ছে বাবার কণ্ঠস্বর ছিল এতটাই তেজি এবং বজ্রগম্ভীর যে একবার ডাকলে বুক শুকিয়ে যেত আমাদের। ফলে বাবার সাথে একটু ভয়জনিত দূরত্ব ছিল অনেকদিন। পরে তা কেটে যায়। ছোটবেলা থেকেই খুব ভুগতাম আমি। প্রায়ই অসুখ বিসুখ করত আর দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ত চেহারা। তখন নিয়মিত বাকুড়ায় ডক্টর জয়ন্ত দত্তের চেম্বারে যেতাম বাবার সাথে। বাবা আমাকে একটি মুহুর্তও কাছ ছাড়া করত না। বাবার উজ্জ্বল তর্জনী ধরে রাস্তা হাঁটতাম পরম নিশ্চিন্তে। এই কারণেই বাবার স্নেহের উপর আমার অংশীদারিত্ব অন্য ভাইবোনদের চেয়ে একটু বেশিই ছিল। দুশ্চিন্তায় রাত জাগা বাবার মায়াময় চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হত এই রাগী মানুষটার ভেতরে শিশুর চেয়েও সরল এক সত্তা আছে। আমি সেই শিশুটির স্পর্শ পেতাম বাবার আঙুলে। অনেক বড় অবধি এমনকি কলেজে ভর্তি হওয়ার সময়েও বাবা বলত – আঙুলটা ধরে থাক, রাস্তায় কত বিপদ আপদ। এই আঙুল ধরে থাকলে কোন ভয় নেই।আমি বলতাম – আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি। লোকে কি ভাববে বলত ? বাবা হাসত শুধু।

বাবা অনেক লম্বা, আমরা কেউই বাবার মতো লম্বা হইনি। রাস্তায় হাটলে দীর্ঘ ছায়ায় ভরে উঠত রাস্তা। আমি সেই ছায়ায় হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা পার হতাম। কোন ছাতা লাগত না।

আজ বারো বছর বাবা অসুস্থ। লিখতে পারেন না, ডানহাতের আঙুল সাড়া দেয় না লেখায়। কিন্তু আমি অনুভব করি এই আঙুল এখনও কত দৃঢ় এখনও এই আঙুল ধরে নির্ভয়ে রাস্তা হেঁটে যাই।

লেখক- বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930