হ্যালোডেস্ক
বিয়ের বন্ধন একটি পবিত্র বন্ধন। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যে ধর্মেরই হোক না কেন, বিয়ের যে মূল মন্ত্র, তা হলো একজন ছেলে বা একজন মেয়ের একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি। সামাজিকভাবে এই প্রতিশ্রুতিকে বৈধ করা হয়। এই বৈধতা বা পারস্পরিক প্রতিশ্রুতির আরেক নাম বিয়ে বা বিবাহ বন্ধন। এই বিবাহ বন্ধন বিভিন্ন ধর্মে বিভিন্ন নিয়ম অনুযায়ী হয়ে থাকে। এ ছাড়া কিছু কিছু বিয়ে হয়ে থাকে সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই, যেখানে কেবল মা-বাবা এবং তৃতীয় পক্ষের মতের ওপর ভিত্তি করে ছেলে-মেয়েরা সংসার শুরু করতে বাধ্য হয়। তবে যেভাবেই বিয়ে হোক না কেন, সান্নিধ্য এখানে একটা মস্ত বড় ব্যাপার। সান্নিধ্যের মাধ্যমেই দুজন মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে একটা সম্পর্ক, তারা মা-বাবা হবে, এটাই স্বাভাবিক, শ্বাশত। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কিছু কিছু বিয়ে কেন টিকে থাকছে না। বিবাহ বিচ্ছেদ আজকাল বেশি লক্ষ্য যাচ্ছে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের ভয়ঙ্কর ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে অগণিত পরিবার। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলগুলোর চেয়ে শহরাঞ্চলে বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, আজকাল নারীরা কেবল মমতাময়ী মা হয়ে বা কল্যাণময়ী গৃহিণী হয়ে ঘরের কোণে পড়ে থাকতে চায় না। নারীরা আজকাল সমাজের সর্বত্র বিচরণ করছে। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি সব জায়গায়ই তারা ভূমিকা রাখছে।
বিভিন্ন কারণে অনেক বিবাহিত জীবন হয়তো হয়ে ওঠে সংশয় সংকুল, বিশ্বাসহীনতায় ভরা, অস্থিরতাময়, রোমাঞ্চহীন, তা হলে এই জীবনযাত্রাকে আমরা কী বলব? ‘এর বাইরেও একটা জগৎ আছে, সেটা হলো শিক্ষা, স্বাধীনতা আর আধুনিকতার জগৎ। এই জগতের উপস্থিতি প্রত্যেকের জীবনেই অনিবার্য। অবশ্য এই অনিবার্য পরিম-ল যখন অতি আধুনিকতার কবলে পড়ে যায়, তখন গোটা সমাজে একটা ভয়ঙ্কর অস্থিরতা দেখা দেয়। এই অস্থিরতার প্রভাব পড়ে সমাজে, ব্যক্তিজীবনে, এমনকি বিনোদনের মাধ্যমগুলোতেও।
আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে ৫০ শতাংশ নারী-পুরুষের মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। সমাজ নারীদের বাঁকা চোখে দেখে, যদি সে নারী অতিমাত্রায় স্বনির্ভর হয় তাহলেও। পুরুষশাসিত সমাজে বেশিরভাগ পুরুষ পার পেয়ে যায় সাবেক স্ত্রীকে চরিত্রহীনা অপবাদ দিয়ে। অবশ্য মা-বাবার বিচ্ছেদের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্তানরা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে গড় বিবাহ বিচ্ছেদ দিন দিন বেড়েই চলছে। সুতরাং এ কথা মেনে নিতেই হবেÑ যতই আমরা সহিষ্ণু হওয়ার চেষ্টা করি না কেন, সমাজ আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের হারও বাড়তে থাকবেই? তবে বিচ্ছেদের আগে মা-বাবাকে মনে রাখতে হবে তাদের বিচ্ছেদ যেন সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। বিয়ের মতো একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর এর সূচনালগ্ন থেকেই পরস্পর এর মধ্যে বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলতে হবে। দুজনের সম্পর্কের মধ্যে কোনো রকম অস্বচ্ছতা থাকা চলবে না। অস্থিরতার মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত নয়। সুস্থির মনে সিদ্ধান্ত নিলেই সেই সিদ্ধান্ত হবে যথাযথ। এই ভয়াবহ বিচ্ছেদ ঠেকানোর জন্য দুজন মানুষকে সব সময়ই একে অন্যের ইচ্ছার সম্মান করতে হবে। আর একটা কথা যেটা তাদের মনে রাখতে হবে, বিচ্ছেদ কখনই সুখকর হয় না।
সুদীপ্তা ঘোষ : কবি, প্রাবন্ধিক ও সিনিয়র ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা

Add Comment