-বেনিন স্নিগ্ধা
চা বাগানের কথা শুনলে যে কারোর চোখের সামনে সিলেটের ছবি ভেসে উঠে। তবে সিলেটে শুধু চা বাগান নয়, এখানে রয়েছে দেখার মতো অনেক স্থান। বাহুবল – সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার একটি উপজেলা।
সড়ক পথে ঢাকা থেকে বাহুবল উপজেলার দূরত্ব প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার। বাহুবল আসার জন্য সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই; এখানে আসতে হয় নয়াপাড়া বা শায়েস্তাগঞ্জ হয়ে। তবে, সবচেয়ে নিকটবর্তী ও আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির স্থান হলো শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশন।
ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশন বা চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা ট্রেনে সরাসরি শায়েস্তাগঞ্জ এসে সেখান থেকে সড়ক পথে বাহুবল আসা যায়; কারণ শায়েস্তাগঞ্জ হচ্ছে রেলপথে সিলেট বিভাগে প্রবেশের অন্যতম প্রধান স্টেশন এবং এই শহরটির উপর দিয়েই মূল ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রেলপথটি বিস্তৃত। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে প্রতিদিন একাধিক ট্রেন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছাড়ে।
বাহুবল উপজেলার একটি দর্শনীয় জায়গা হলো দি প্যা।লেস রিসোর্ট। কি শীত কি গ্রীষ্ম সবসময়ই অতিথিতে ভরপুর থাকে রিসোর্টটি। বাহুবল উপজেলা থেকে সিএনজি অথবা বাসযোগে ঢাকা – সিলেট মহাসড়কে পুটিজুরী নামক স্থানে নামতে হয়; সেখান থেকে সিএনজি যোগে ৪ কিলোমিটার অতিক্রম করলেই রিসোর্টটিতে পৌঁছা যায়। রিসোর্টে যাওয়ার পথে দু’ধারে পড়বে অসংখ্য ছোট ছোট টিলা। টিলাগুলোতে সারি সারি চা গাছ। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। গাছগুলো এক সমান করে ছাঁটা। আবার কিছু কিছু নতুন বোনা হয়েছে।
রিসোর্টে ঢুকে হাতের ডানে গেলেই চোখে পড়বে লেক। লেকের চারিপাশের পাড় বাঁধানো। লেকে রয়েছে স্পিডবোট। যে কেউ ইচ্ছেমতো বোটিং করতে পারে। আছে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার ব্যনবস্থাও। কিন্তু মাছ রান্না করতে যেতে হবে আবার অন্যে জায়গায়।
লেকের আর এক পাশ দিয়ে ইট বাঁধানো সরু রাস্তা। রাস্তার দু’পাশেই অসংখ্য গাছ। কোনটি ফলজ আবার কোনটি মহিরূহ। লেকের পাশের রাস্তা ধরে চলে গেলে পাওয়া যাবে সবুজ মাঠ। এখানে নানা ধরণের শাক ও সবজি চাষ করা হয়। বাঁধাকপি, ব্রকলি, লালশাক, ধনেপাতা, ক্যা পসিকাম, মরিচ – কি নেই এখানে।
আরও আছে শসা আর মিষ্টিকুমড়ার বাগান। বাঁশ কেটে মাচা তৈরি করে দেয়ায়, শসার গাছগুলো তরতর করে বেড়ে উঠছে। মাঝে মাঝে বাঁধাকপি আর শসা খেতে বানরের দল হামলা চালায়। তাই প্রখর রোদেও কড়া নজরদারি বসানো বাগানের উপর।
পুরো রিসোর্ট জুড়ে বিদেশি পাইন গাছ দিয়ে সাজানো। আছে রাবার বাগান আর বিশাল লেবু বাগান। শীত আর গ্রীষ্মে রাবার চাষ ভালো হয়। আছে আনারস আর চা বাগান। সবটাই সবুজে ঘেরা আর নিরিবিলি।
রিসোর্টের মূল ভবনটি বহুতল বিশিষ্ট। অতিথিদের আপ্যানয়ণের জন্যব রয়েছে বিশেষ ব্যিবস্থা। এখানে যারা মেহমান হয়ে আসেন তাদের যেন কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যববস্থা রয়েছে। কেউ যদি পুরো রিসোর্ট ঘুরে দেখতে চায়, তার জন্যক রয়েছে খোলা গাড়ি। আর পায়ে হাঁটার জন্যসতো রয়েছে ইট বিছানো পথ। মূল ভবন থেকে বেরিয়ে খানিকটা সামনে এগোলেই বিশাল সুইমিং পুল। ছোট, বড় সবাই সাঁতার, গোসল করতে পারে। যদিও পুলের পানি অনেক ঠাণ্ডা, তবে রোদ থাকায় ততটা ঠান্ডা অনুভূত হয়না।
সুইমিং পুলের অপর পাশেই বিশাল রাবার বাগান
রাত্রিবেলা বাগানে ঝি ঝি পোকার শব্দ আর শেয়ালের ডাকে পরিবেশ ছমছমে হয়ে যায়। বাগানে ঘুরতে ঘুরতে যদি কেউ ক্লান্ত হয়ে যায়; তাই জিরিয়ে নেবার জন্যম একটু দূরে দূরে রয়েছে নান্দনিক চেয়ার অথবা বেঞ্চ। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়বে ছোট ছোট ফুল বাগান। দেখে মনে হবে যেন কিছু থোকা থোকা ফুল ফেলে রাখা হয়েছে। এগুলোর কোনোটি দেশী আবার কোনটি বিদেশী ফুলের গাছ।
মূল ভবন থেকে কিছুদূর যেতেই চোখে পড়বে কুঁড়েঘরের মতো ছোট ছোট ভিলা। এর কোনটি একতল বিশিষ্ট আবার কোনটি দ্বিতল বিশিষ্ট। ভিলাগুলোর আশেপাশের অঞ্চল দেখে মনে হবে এখানে হয়তো কোন জনমানবের বাস নেই। আসলে কিন্তু তা নয়।
এছাড়া হেলিকপ্টারে চড়ার জন্যক রয়েছে বিশেষ ব্যশবস্থা। একসঙ্গে চারজন রাইড করতে পারে। হেলিকপ্টার নামার জন্যর রয়েছে নান্দনিক তিনটি হেলিপ্যা ড। আর পুরো হেলিপ্যাতডের চারপাশটা রাবার গাছ দিয়ে ঘেরা। হঠাৎ দেখে মনে হবে কোন ঘন জঙ্গলে এসে পড়েছি।
রাতের রিসোর্টের সৌন্দর্য্য একেবারে অন্য রকম। বিদেশি গাছ দিয়ে সাজানো প্রতিটা গাছের আড়ালে রঙ্গিন বাতি জ্বলে ওঠে। এই লুকোনো বাতিগুলো একটি ধোঁয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ তৈরি করে। রাতের খাবারের জন্যও পাঁচটি বিশেষ রেস্তোরা রয়েছে রিসোর্টে। রেভ্যু লেশন, নস্টালজিয়া, অলিভ ক্যানফে, সাইগন আর শিসা লাউঞ্জ। প্রতিটি রেস্তোরাঁয় ভিন্ন স্বাদ ও আঙ্গিকে খাবার পরিবেশন করা হয়। লেক থেকে মাছ ধরে এনে রান্নাও করা যায় এখানে।
রেস্তোরাঁয় যে খাবারগুলো রান্না ও পরিবেশন করা হয় তার সবগুলোই নিজস্ব বাগানে চাষ করা হয়। তাই স্বাস্থবিষয়ক ও পুষ্টিগুণের দিকটি শতভাগ বজায় রাখা হয়।বিকেলে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে বাইরের চা বাগানে ঘুরে আসা যায়। চারিদিকে শুধু পাহাড় আর সবুজের ছড়াছড়ি।
মোটকথা বেড়ানোর জন্য একটি নান্দনিক ও বিশেষ সুবিধাসম্পন্ন জায়গা হলো বাহুবলের দি প্যা্লেস রিসোর্ট। শহরের কোলাহল আর দূষণ থেকে কিছুক্ষণের জন্যু বিরতি নিতে এর থেকে উত্তম জায়গা হতেই পারেনা।
Add Comment