-মোশাররফ হোসেন
আপনি কি মিডিয়ায় কাজ করতে উৎসুক ? জী, হ্যাঁ। তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য সহায়ক হবে। দয়া করে, শুধু একা একাই পড়বেন না। শেয়ার করে আপনার পরিচিতদেরকেও পড়ার সুযোগ করে দেবেন।
মিডিয়ায় কাজ করার আগ্রহ থাকলে ছোটবেলা থেকেই আপনাকে মিডিয়া সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখতে হবে । তবে এটি সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে। মিডিয়ায় কোন সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী আপনি ? সংবাদ সংক্রান্ত, চ্যানেল সংক্রান্ত, অভিনেতা হিসেবে নাকি সংগীতের মাধ্যমে ? সেটি আগে সিদ্ধান্ত নিন। অনেকেই আমরা মিডিয়া বলতে শুধু অভিনয়কেই বুঝে থাকি। কিন্তু শুধু অভিনয়ই মিডিয়ার সব কিছু নয়। আপনি যদি সংবাদ সংক্রান্ত সেক্টরে যেতে চান, তাহলে একটি শর্ট কিংবা লং কোর্স করে নিন। বিখ্যাত কোন সংবাদ পাঠক কিংবা সাংবাদিক, যারা এজেন্সি চালান, সেখান থেকে পারলে লং কোর্স করে নেয়াই ভালো। আর চ্যানেল সংক্রান্ত সেক্টর তথা অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক, অনুষ্ঠান পরিচালনা, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ইত্যাদি কাজে যেতে চান, তাহলে ধাপে ধাপে আপনাকে এগুতে হবে । প্রথমে চ্যানেলে ছোটখাট কোন কাজ যোগাড় করে নিন, এরপর আস্তে আস্তে সবই হবে । চ্যানেলে লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে পত্রিকায় সার্কুলার প্রায়ই আসে। চোখ-কান খোলা রাখুন।
সংগীতের কথা যদি বলতে হয়। বর্তমানে সংগীতের বাজার খুব খারাপ। নিন্ম কোয়ালিটির গায়ক কিংবা গায়িকাতে ভরে গেছে এটি । তবে ইদানিং পাইরেসি ও অন্যান্য সমস্যার কারণে নতুন অনেককেই দেখা যায়, নিজ অর্থায়নে নিজের সংগীতের ক্যাসেট বের করছে। তবে বড় বড় কোম্পানিও সাহায্য করে নতুনদের। তবে এটি খুব কমই হয়।
এবার আসি অভিনয়ে। অভিনয় স্তর দুটো ভাগে বিভক্ত। ছোট পর্দা আর বড় পর্দা। আপনি যদি মঞ্চ লেভেল বা থিয়েটারের সাথে আগে থেকেই যুক্ত থাকেন, তাহলে ছোট পর্দার ক্ষেত্রে আপনার সুযোগ থেকে যায়। এক্ষেত্রে আপনার অভিনয়ের ইচ্ছা থাকলে আগে থেকেই মঞ্চের কোন সংগঠনের বা থিয়েটারের সাথে লেগে যান। প্রত্যেকটি সরকারী ও কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকে । তবে পরিপূর্ণ ডেডিকেশন ছাড়া এগুলো সম্ভব নয়। এমন অনেককেই দেখা যায়, যারা প্রায় ২০ কিংবা ২৫ বছর ধরে মঞ্চ কিংবা থিয়েটারের সাথে আছেন কিন্তু টিভিতে ছোট পর্দায় যেতে আগ্রহী নন মোটেও। মঞ্চ থেকে উঠে আসলে নির্দিষ্ট চরিত্রের প্রতি লোভ অনেকটাই কমে যায়। নির্দিষ্ট চরিত্র বলতে আমি নায়ক কিংবা নায়িকা কিংবা কেন্দ্রীয় চরিত্রের প্রতি লোভকে বুঝালাম। কারণ মঞ্চ বা থিয়েটার থেকে উঠে আসলে অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা জন্ম নেয়, চরিত্রের প্রতি নয়। তাছাড়া বিজ্ঞাপনও ছোট পর্দার অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন নামকরা মডেল এজেন্সির মাধ্যমে যোগাযোগ করলে, আর ভাগ্য ভালো হলে সহজেই বিজ্ঞাপনের সুযোগ মেলে।
এবার আসি বড় পর্দা নিয়ে। সাধারণত অভিনয়ের এই সেক্টর অনেক শ্বাপদসংকুল পথে জীর্ণ। আজকাল দেখা যায়, ছোটপর্দা থেকে অভিনেতারাই অহরহ বড়পর্দায় আসছেন। সে হিসেবে নতুনদের চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা একটু কম। কিন্তু একেবারেই যে নেই, তা নয়। আপনি নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন, বড় পর্দায় আপনার আগ্রহ আসলে কিসে ? নায়ক, নায়িকা, ভিলেন নাকি অন্য কোন চরিত্র ? সেদিন একটি তথ্যচিত্র দেখছিলাম। একজন অভিনেতা হতে গেলে একজন নতুন মুখের তরুণ-তরুণীদের কি পরিমাণ সংগ্রাম করা লাগে যাকে ইংরেজিতে বলে struggle করা লাগে, তা নিয়েই তথ্যচিত্রটি । বাস্তব কিছু ঘটনাও উঠে এসেছে সেই তথ্যচিত্রটিতে । বলাই বাহুল্য যারা বড় পর্দায় আসার জন্য বেশি struggle করে, তাদের অধিকাংশেরই থাকে নায়ক কিংবা নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন । আর এই সুযোগটাকেই কাজে লাগায়, বর্তমান প্রজন্মের কিছু সুযোগসন্ধানী পরিচালক ও প্রযোজক । বিশেষ করে আপনার যদি চাচা-মামু-খালু-বড় ভাই কিংবা অন্য কোন আত্মীয়ের মাধ্যম না থাকে, আপনাকে দৌড়ে দৌড়ে এসব পরিচালক কিংবা প্রযোজক অথবা এদের দালালদের সাথেই যোগাযোগ করতে হবে । কারণ বড় মাপের পরিচালক কিংবা প্রযোজকরা সাধারণত একেবারে নতুন মুখ তাদের সিনেমায় নিতে চান না । এতে তাদের বড় মাপের রিস্ক থাকে ।
অনেকে পরিচালক কিংবা প্রযোজক কিংবা এদের দালাল কিংবা দোসর আপনাকে নিশ্চিত সুযোগের গ্যারান্টি দিয়ে আপনার কাছ থেকে বেশ মোটা অংকের টাকা নেবে, এরপর আপনাকে কয়েক মাস কিংবা বছর ঘুরাবে । এরপরও আপনি আদৌ সুযোগ নাও পেতে পারেন । বাংলা সিনেমাশিল্প ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের কাছে একটি টার্ম বেশ পরিচত । “GIVE AND TAKE” । মানে আপনি কিছু দেবেন, বিনিময়ে আপনি কিছু পাবেন । কিন্তু এখানেই সমস্যা। শুধু বাংলা অর্থের মত পরিস্কার নয় এটি । সাধারনত যে সব তরুণীরা নায়িকা হতে যায়, এটি তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়। মানে ঐ সকল তরুণীকে গোপনে ধান্দাবাজ পরিচালক কিংবা প্রযোজকদের সাথে সিনেমা চুক্তির আগেই দৈহিক মিলনে জড়িত হতে হয় । সন্তুষ্টি করতে পারলেই, সুযোগ মেলে অবশেষে । নতুবা নয় । এটি শুধু ঢালিউড নয়, এই প্রথা বলিউডেও আছে । অনেকেই জানেন না এটা । তরুণদের ক্ষেত্রে তাই সুযোগ মেলা তরুণীদের চেয়ে অনেক অনেক কঠিন । এই কারণেই একেবারে নায়ক কিংবা ভিলেন হতে না চেয়ে, আস্তে আস্তে এগুতে হয় ।
পরিশেষে, আপনাকে সিনেমা কিংবা টিভিতে দেখে আপনার পরিচিতজনেরা হয়তো মনে মনে আপনাকে নিয়ে গর্ববোধ করে । অনেকে গালাগালিও করে, সম্পর্কচ্ছেদ করে । কিন্তু অভিনয় পেশাটি কি আদৌ যৌক্তিক ? তাহলে ইসলামের পরিভাষায় শুনুন । অভিনয় মানে হল মিথ্যা । অস্তিত্বহীন একটি চরিত্রকে রূপদান করার মাধ্যমে কথায় কথায় মিথ্যা বলে যাওয়ার নামই অভিনয় । আর মিথ্যা বলাকে মহাপাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে ইসলামে । তাই এই পেশাটি গ্রহণের আগে একবার হলেও ভেবে নেবেন আসলে আপনি মহা পাপের পথে নিজেকে সপে দিয়েছেন । উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি, বিশাল টাকার মোহ কিংবা অগণিত মানুষের চাওয়া, আপনাকে সত্যিই অন্ধ করে দিয়েছে, তাই আপনি কিছুই দেখছেন না । কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বয়সে এসে আপনার এই ভুল ভাংবেই । আমার কথাটি মিলিয়ে নিয়েন ।
আমার লেখাতে নাম না উল্লেখ করলেও আমি সকলকে সুযোগসন্ধানী বলিনি। কারণ দুনিয়াতে এখনও কিছু ভালো লোক তো আছেনই। এই পোস্টটি বাস্তবতার আলোকে করা । তাই এর দ্বারা সত্যিই যদি কেউ উপকৃত হন, তাহলেই নিজেকে ধন্য মনে করবো।
Add Comment