সাময়িকী : শুক্র ও শনিবার
-জামান একুশে
শাকিল ভাইকে পুকুর ঘাটে উদাম গোসল করতে দেখে লতার এই অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি হয়েছিল। কেমন যেন অবশ হয়ে আসা শরীর। আর বিবশ মন। সাথে বুক ধড়াস!
শাকিল ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত। লতারও ইচ্ছে ছিল শাকিল ভাইয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। কিন্তু শাকিল ভাইটা যে কী না, তাকে একটুও পাত্তা দিত না। দেখা হলে কাঠখোট্টার মতো কথা বলতো। সন্ধ্যা হয়ে আসা পাকুড় গাছের নীচে দেখা হলেই বলতো কী ব্যাপার লতা এখানে কী? যাও বাসায় যাও। তোমার না সামনে পরীক্ষা?
লতা কিছু বলতে চাইতো কিন্তু কী বলবে জানতনা। তবে ইচ্ছে হতো শাকিল ভাইয়ের পাশে চুপচাপ বসে থাকতে। মেঠো পথ ধরে পাশাপাশি হেঁটে যেতে। তার বলতে থাকা কথার ভঙ্গিমায় ঠেস মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে।
লতাদের একটা বাড়ি পরেই শাকিল ভাইয়ের বাড়ি। ছুটি-ছাটায় শাকিল ভাই বাড়ি আসলে লতা অনভ্যস্ত শাড়ীতে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ক্যাসেট আনতে যেত।
একবার ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল। আচ্ছা ভাইয়া হিয়া মানে কি?
এসব প্রশ্নের উত্তর জানাটা লতার জন্য জরুরী ছিল না। তবে শাকিল ভাই কি কি যেন বলতো। আর লতা তার ঠোঁট নেড়ে কথা বলা, বলার ভঙ্গী এসবে বুঁদ হয়ে থাকতো। তখন কেমন পাগল পাগল লাগতো।
প্রিটেস্ট পরীক্ষায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে অংকে ফেল করার পর লতার মনে হতে লাগলো সে শাকিল ভাইকে ছাড়া বাঁচবে না।
তারপর যেদিন লতা স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো সেদিনই শাকিল ভাই বিয়ে করে ফেললো। তবে তাকে নয়, শাকিল ভাইয়ের এক সহপাঠিনীকে। অনেক দিনের প্রেম।
লতা অনেক রাত কেঁদেছিল। মনে হচ্ছিল বেঁচে থাকার কোনো মানে নেই।
লতার সেই বেণী দুলানো মেঠোপথের স্বপ্নের পুরুষ আজ মাথায় গড়েয়ার মাঠ আর মুখ ভর্তি পান নিয়ে কনভেনশন হলে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। সেই ঘোর লাগা সরু সরু চোখে সে বলল লতা ইউ আর ভেরি লাকি দ্যাট ইউ গট অ্যা হাজব্যান্ড লাইক সৌমিক। হি ইজ অ্যা নাইস গাই।
লতা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে হাসলো। আর মনে মনে বলল আই নো আই এম লাকি বাট সৌমিক ইজ ভেরি আনলাকি! ডু ইউ নো দ্যাট?
Add Comment