ছড়া

রূপকথা

-রহীম শাহ

এইখানে এক মাঠ ছিল আর
মাঠের পাশে গাছ ছিল
তারই পাশে বিলের জলে নানান
রকম মাছ ছিল।

সকাল হলেই রোদের ডানা
ছড়িয়ে দিয়ে করত কী
ইচ্ছেমতন নাচত আহা, যেন
আলোর নর্তকী!
ফড়িং এবং ঘাসফড়িঙের বাচ্চা
এবং কাচ্চারা
চাইত না তো রোদের ডানা হোক
কখনও কাছ ছাড়া।
রোদের সঙ্গে তাদের ছিল
নিত্যদিনের মিতালি
উঠত বেজে আকাশ-মাটির
ঐকতানের গীতালি।

দুপুর হলেই রোদের ডানা মাঠে
যেত গড়িয়ে
তপ্ত হাওয়া এদিক সেদিক পড়ত কেবল ছড়িয়ে।
গাছের ডালে পাতার ছায়ায়
থেমে যেত পাখির গান নিথর দুপুর চুপটি করে রোদের
আলোয় করত স্নান।
নিকেল করা বিকেল যখন
নামত মাঠে-প্রান্তরে
ঘরে ঘরে দুষ্টুরা সব থাকত কি
আর শান্ত রে!

জুটত পাড়ার ছেলেমেয়ে মিলেমিশে
সকলে হুলুস্থুলু কাণ্ড করে মাঠটা নিত দখলে।
স্বাধীন ওরা লক্ষ্মীছাড়া বাধা-বাঁধন
মানত না মাঠও ছিল ভীষণ সুখী
সে কথা কেউ জানত না।
শান্ত কিছু ছেলেমেয়ে এদিক সেদিক
ঘুরত রে নীল আকাশে ছড়িয়ে ডানা
পাখিগুলো উড়ত রে।

তেপান্তরের ওপার থেকে সাঁঝের
ডানায় গড়িয়ে
আসত নেমে মাঠের বুকে কাক-কালো
রং ছড়িয়ে।
সূর্য দিত পশ্চিমে ডুব নামত আঁধার ঝুপ করে
ফিরত ঘরে ছেলেমেয়ে থাকত
পাখি চুপ করে।
মাঠের বুকে রাস্তাটিও একলা
শুয়ে থাকত যে
মাঝে মাঝে ভ‚তের ছানা পরির
ছবি আঁকত যে।

এইখানে এক মাঠ ছিল আর
পুকুর ছিল তার পাশে
ঝোপ ও ঝাড়ের সবুজ দেয়াল
উঠেছিল চারপাশে।
সেসব ঝোপে টুনটুনি আর
মৌটুসিদের নীড় ছিল।
ঝোপের নিচে নানান রকম
সাপখোপদের ভিড় ছিল
এ-কান ও-কান হল
হঠাৎ মাঠটা নাকি থাকবে না
ডোবাটাকে করবে ভরাট
ঝোপঝাড়ও আর রাখবে না।

হঠাৎ এল দত্যিদানো গাছপালা
সব কাঁপিয়ে
মাঠে এবং পুকুরপাড়ে ঘুরে
বেড়ায় দাপিয়ে।
গাঁইতি-শাবল কলের করাত চালায়
তারা ঘরঘর গাছপালা
মাছ লক্ষ পাখি কাঁপছে ভয়ে থরথর।
রাতারাতি পুকুর ভরাট,
ঘাট নেই আর
মাঠও নেই গাছপালা নেই, ঝোপঝাড় নেই,
পাখপাখালির হাটও নেই।

মাঠেঘাটে দত্যিগুলো গাঁইতি-শাবল
শান দিয়ে রাতারাতি শহরটাকে করল
হাজির টান দিয়ে।
কংক্রিট আর ইটপাথরে ছেয়ে
গেল গ্রামটিও ভুলে গেল
মাটির কথা ভুলল গ্রামের নামটিও।
ভুলল নদী, পুষ্পপাখি ভুলল
সবাই নীল আকাশ ভুলে গেল
পায়ের নিচে সবুজ ছিল দূর্বাঘাস!

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930