হ্যালোডেস্ক
শাড়িতে বাঙালি নারী ফিরে পায় আসল রুপ
‘ঘরেতে এল না সে তো, মনে তার নিত্য আসা-যাওয়া—
পরনে ঢাকাই শাড়ি কপালে সিঁদুর।’
– কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ দুটি লাইন হাজার বছরের বাঙালি নারীদের সহজ সাবলীল রূপ। আর শাড়ি ছাড়া বাঙালি নারীকে কোন কালে কল্পনা করা যায় না।
ভারতীয় অঞ্চলের নারীদের পোশাক বলতে প্রথম স্থানটি দখল করে রেখেছে শাড়ি। হয়তোবা অঞ্চল ভেদে শাড়ি পরার ক্ষেত্রে নানা ধরনের স্টাইল রয়েছে। তবে ১২ হাত শাড়ি সামলাতে নারীরা অল্প অল্প করে শিখতে থাকে শৈশব থেকে। পুতুল খেলার ছলে শাড়ি পরে যে বাঙালি মেয়েটি বড় হয়; সে একদিন লাল বেনারসি পরে পা রাখে সংসার জীবনে। তাই নারী ও শাড়িকে আলাদা করে কল্পনা করা যায় না বাঙালি নারীদের ক্ষেত্রে।
হাল ফ্যাশনে নারীরা পাশ্চাত্যের ডিজাইনের দিকে ঝুঁকে থাকলেও বিয়ে বা নানা উৎসবে তারা শাড়িতে নিজেকে সাজাতে ভালোবাসে। তবে ব্যস্ত জীবনের বাহানাতে শাড়ি পরার চেয়ে সালোয়ার কামিজ বা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়।
৯০ দশকের আগেও এদেশের নারীরা বিয়ের পর সালোয়ার কামিজ বা অন্য কোন পোশাক পরবে তেমনটা চিন্তা করতে পারত না। তার ও আগের সময়ের দিকে দেখা গেছে খুব অল্প বয়সেই নারীরা শাড়ি পরত। যার প্রমাণ মিলে কাব্য সাহিত্যে। সে সময়কার সমাজের নারীদের ফ্রক ছেড়েই শাড়ি পরার রীতি ছিল।
বাঙালি নারী আর শাড়িকে যেমন আলাদা করে দেখা যায় না। তেমনি বিশাল এ শাড়ি কোন গড়নের নারীকে ভালো লাগবে কি লাগবে না তা চিন্তা করা বাতুলতা মাত্র।
কিন্তু দুঃখজনক হলো সাম্প্রতিক কালে আধুনিক নারীরা শাড়ি কেন পরে না এ সম্পর্কিত প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ‘শাড়ি’ নামক লেখা নিয়ে নানা বির্তক সৃষ্টি হয়েছে।
লেখকের কাব্যিক শব্দ চয়নে পুরুষের চোখে শাড়ি পরিহিতা নারীর লাস্যময়ী দেহের প্রকাশ দেখে ; আয়নাতে নিজেরই দৃষ্টি অবনত হয় একজন নারী হিসাবে। মনে হয় শালীনতার নামে কি নিজের অঙ্গ প্রদর্শিত হচ্ছে শাড়িতে।
বিদগ্ধ লেখক শাড়িতে প্যাঁচানো নারী শরীরের ভাঁজের ছবিকে তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘শাড়ি একটা রহস্যময় পোশাক। নারী দেহকে কতটা প্রদর্শন করলে আর কতটা অপ্রকাশিত রাখলে তা শারীরিক মোহ বজায় রেখেও দর্শকের চোখে অনিন্দ্য হয়ে উঠবে, তা পোশাকটি যেন সহজাতভাবেই জানে। শাড়ি ছাড়া এমন জাদুকরি রহস্য আর পরস্পরবিরোধী মাধুরী আছে কোন পোশাকে? শরীর নিয়ে এমন শিল্পিত খেলা আর কে খেলতে পারে?’
এমন বয়ান দেখে সত্যি মনে প্রশ্ন জাগে শাড়ির শিল্পিত খেলায় একজন পুরুষের কলম কি করে নারীর শরীরকে ব্যবচ্ছেদ করেছে। আর তার উপমা দিয়েছেন এ বাংলার সোনালি ধানের ক্ষেত, আকাশের রুপের সাথে তুলনা করে – ‘শাড়ী সারা শরীর জড়িয়ে রাখা এক কাপড়ের একটা দীর্ঘ স্বপ্নখচিত জড়োয়া গয়না। বৈচিত্র্যে, সৌন্দর্যে কারুকার্যে প্রায় তুলনাহীন। আমাদের সোনালি ধানখেতগুলো যেন গোটা বাংলাদেশকে নানান বাঁকে জড়িয়ে দেশজুড়ে বয়ে যায়, শাড়িও তেমনি নারীর শরীরে সৌন্দর্যের প্রতিটি ঢেউ আর সরণিকে আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু ভঙ্গিতে বিন্যস্ত করে আঁচলের কাছে এসে একঝাঁক সাদা পায়রার মতো নীল আকাশে উড়তে থাকে।’
চিত্র শিল্পীর তুলিতে আঁকা পদ্মিনী রূপের এমন বর্ননা যখন কলমে প্রকাশ পায়; তখন কল্পিত নারীকে বাস্তবে খুঁজতে গিয়ে তার দেহের গড়ন, উচ্চতা গায়ের রংয়ে দৃষ্টি পড়াই স্বাভাবিক।
আর সে কারণে নারী গড়নকে অবলীলায় বিশ্লেষণ করেছে লেখাটিতে পুরুষের চোখে। তবে এ বিশ্লেষণের ধার এতটাই প্রবল যে, ফ্যাশন ডিজাইনারদেরকেও হার মানিয়েছে। আধুনিক কালে ফ্যাশন সচেতন নারীরা স্থান কাল পাত্র বুঝে পোশাক পরে। সেক্ষেত্রে নিজেকে আকর্ষণীয় করাটা মুখ্য বিষয় হয় না।
সামাজিক নিয়মের অচলায়তন ভেঙ্গে নারী এখন ঘরের বাইরে বেড়িয়ে এসে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করছে মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে। আর ঠিক এ সময় শাড়ি পরতে উৎসাহিত করার নামে নারীদের শারীরিক উচ্চতা আর গড়ন বুঝে শাড়ি পরিধানের কথা নারী সমাজকে আলোকিত নয়; বরং অন্ধকারে নিমজ্জিত করে।
নারী সমাজের একজন হয়ে এ একুশ শতকে দাঁড়িয়ে বলতে ইচ্ছে হয়, ভাঁজ আর খাচ কাটা এ শরীরটার কি কোনদিন মুক্তি মিলবে না লোলুপ দৃষ্টির চাহনি হতে? বসনে আসনে নারী কেবলই ভোগ্যবস্তু হয়ে থাকবে কালে কালে কেবল- এটাই তবে চিরন্তন সত্য!
মডেলঃ রোমানা আমিন, তাসনুভা মোহনা
পোশাকঃ গুনাইবিবি
মেকআপঃ প্রিটি লেডি বিউটি সেলুন এন্দ স্পা বাই সোনিয়া খান
ছবিঃ শেইখ রাফি
Add Comment