হ্যালোডেস্ক
শীত এলেই শুরু হয় ‘ওয়েডিং সিজন’ বা ‘বিয়ের মৌসুম’। বিয়েতে বরের সাজ নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা না হলেও নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে চান সব কনে-ই। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় ত্বক তার আর্দ্রতা হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তাই এ সময় সাজতে গিয়ে ত্বকের আর্দ্রতার ব্যাপারটি মাথায় রাখা জরুরি। শীতে বিয়ের সাজ এ এমন সব প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত, যেগুলো ত্বকের উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতা দুটোই ধরে রাখবে।
বিয়ের সাজে কনের কাপড়ের ধরনটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শাড়ি দেখেই কনের বিয়ের সাজের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। আবার কনের পেশা বা পছন্দের ওপর নির্ভর করে বিয়ের সাজে স্পেশাল লুক আনা সম্ভব হয়। আগেকার দিনে বিয়ের সাজে লাল শাড়ি, লাল লিপস্টিক ও লালটিপ ছাড়া বউয়ের সাজ ভাবাই যেত না। তবে দিন বদলেছে, বউয়ের বিয়ের সাজে এসেছে অনেক রঙ। এ সময়ের কনেরা বিয়ের সাজে ট্র্যাডিশনাল লুককে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।
শীতে বিয়ের সাজ
এখন ‘মেকআপ’ সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মেকআপ এর লং লাস্টিং নিয়ে। শীতে ঘাম হয় না। তবে অতিরিক্ত ঠান্ডায় চোখে জল আসে। সর্দিও হতে পারে। তাই শীতেও চাই ওয়াটারপ্রুফ বা ট্রান্সলুসেন্ট মেকআপ। এতে অ্যালার্জিও কম হয়। শীতে বিয়ের সাজ এ ত্বক ঘামে না, মেকআপ দেখায় ভাল, টেকেও বেশিক্ষণ। কিন্তু মরসুমি কিছু ঝঞ্ঝাটও থাকে। সব দিক দেখেশুনে, ত্বকের চাহিদাটি বুঝে শীতের রূপসজ্জার কিছু কৌশল রাখুন মেকআপ বক্সে। সাজ শেষে অবশ্যই মৃদু সুগন্ধি ব্যবহার করুন।
শীতে বিয়ের সাজ এ সঠিক মেকআপই আপনার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিতে পারে কয়েকগুণ, আসুন জেনে নেই টিপসগুলি-
এক
তৈলাক্ত ত্বকে ফাউন্ডেশন বা পাউডার লাগানোর আগে অবশ্যই অ্যাসট্রিনজেন্ট লোশন দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফাউন্ডেশন লাগান। মেকআপ সহজে ঘেমে যাবে না। ফাউন্ডেশন হলো যে কোনো মেকআপ-এর বেস। আর বেস মেকআপ করার পদ্ধতি যদি ভালো না হয় তাহলে পুরো মেকআপ টাই বৃথা।
দুই
চোখের শেপকে নজরকাড়া আইলাইনারের তুলনা হয়না। আইলাইনার দিয়ে নানারকমের স্টাইলে চোখ আঁকা যায়, যা প্রতিবার আপনাকে এক একটা নতুন লুক দেবে। আপনি লিকুইড কিংবা পেন্সিল লাইনার ব্যবহার করতে পারেন। শীতে বিয়ের সাজ এ আপনি চাইলে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে সরে নীল, গাঢ় সবুজ বা অন্যান্য যে কোনো রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। আই পেনসিলের কাজল কিছুক্ষণ পর মুছে যায়। তার বদলে লিক্যুইড আই লাইনার ব্যবহার করুন।
তিন
যদি চোখের কোণে কালি থাকে তাহলে চোখ দেখতে আরও ছোট ও ক্লান্ত লাগে। তাই মেকআপ শুরু করার আগে কনসিলার দিয়ে চোখের কোলের কালি ঢেকে নিন। এতেই চোখ দেখতে কিছুটা বড় লাগবে। কালি পড়া চোখে কাজ লাগালে কিন্তু দেখতে আরও ক্লান্ত লাগবে। আইশ্যাডোর রঙ যত হালকা হবে চোখ দেখতে তত বড় লাগবে। বাইরের দিকে গাঢ় রঙের আইশ্যাডো লাগালেও চোখের ভিতরের কোলে হালকা আইশ্যাডো লাগান। সাদা, সিলভার, গোল্ডেন বা ব্রঞ্জ আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। গোটা চোখ জুড়ে মোটা করে আইলাইনার লাগাবেন না। চোখের নীচের অংশে আইল্যাশের ভিতর দিকে আইলাইনার লাগাবেন না।
চার
মুখের দাগ-ছোপ, চোখের পর্ক সার্কেল, লালচে ছোপ ইত্যাদি লুকোনোর জন্য কনসিলার ব্যবহার করা হয়। যদি আপনার গায়ের রং ফর্সা হয়, তাহলে কনসিলার কেনার সময় অবশ্যই নিজের মুখের রঙের সাথে ভালোভাবে ব্লেন্ড হচ্ছে এবং শেডই কিনবেন। পরিষ্কার কাপড়ে আইস কিউব জড়িয়ে মুখ মুছে ফেলুন। বড় রোপকূপের মুখ বন্ধ করতে সাহায্য করবে। ঘাড়, গলায় ও মুখে পাউডার লাগানোর সময় হালকা ভেজা স্পঞ্জ ব্যবহার করুন। কমপ্যাক্ট পাউডার সহজে সেট করবে এবং বেশিক্ষণ ফ্রেশ থাকবে। লুজ পাউডারের চেয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার বেশিক্ষণ থাকে এবং মসৃণ ফিনিশ দেয়।
পাঁচ
শীতে বিয়ের সাজ এ অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। রিসেপশনের দিনও এটি লাগাবেন না। অন্যথায় আপনার ছবিগুলো অনেক ফ্যাকাশে এবং সাদা দেখাতে পারে।
ছয়
ত্বকের উঁচু অংশগুলোতে হাইলাইটার বুলিয়ে নিন। বিয়ের কনেদের সোনালি বা হালাকা গোলাপি শেইডের হাইলাইটারে বেশি ভালো লাগবে। নাকের উপরে, গালের উঁচু অংশে, ঠোঁটের উপরে, থুতনিতে এবং কপালে হালকা করে হাইলাইটার বুলিয়ে নিতে হবে।
সাত
দিনের অনুষ্ঠানে শীতে বিয়ের সাজ এর ক্ষেত্রে ‘ন্যাচারাল লুক’ ধরে রাখা খুবেই জরুরি। রাতের আয়োজনে ভারী মেইকআপ করা যেতে পারে। দিনের সাজে চোখের মেইকআপের জন্য প্যাস্টেল শেইড। যেমন- হালকা নীল, হালকা সবুজ, হালকা বেগুনি ইত্যাদি রং বেছে নেওয়া যেতে পারে। সোনালি শিমারের বদলে ব্রঞ্জ বা ম্যাট সিলভার রং বেছে নিতে পারেন।
সময়মতো ফেসিয়াল করুন
যাঁরা নিয়মিত ফেসিয়াল করেন, তাঁরা ত্বকের যত্নের ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে রয়েছেন। তবে যদি ফেসিয়ালে অভ্যস্ত না থাকেন তাহলেও বিয়ের ২-৩ দিন আগে ফেসিয়াল করাতে যাবেন না! যে ফেশিয়ালটা করে আপনি অভ্যস্ত, সেটাই নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে করে যান। ইচ্ছে করলে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে আপনার ত্বকের ধরনের সঙ্গে মানানসই কোনও বিশেষ ফেশিয়াল করাতে পারেন। ত্বকে কালচে ছোপ, ব্রণ বা ওই ধরনের কোনও সমস্যা থেকে থাকলে তা কমানোর দিকে নজর দিন।
বিয়ের সাজে লিপস্টিকের ব্যবহার
সবার ঠোঁটে সবরকম লিপস্টিক মানায় না। তাই কেনার আগে দেখে নিন কার কোন টেক্সচারে লিপস্টিক আপনাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে। শীতে বিয়ের সাজ এ গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করাই ভালো। লিপস্টিক লাগানোর আগে ঠোঁটে কিছুটা ফাউন্ডেশন লাগান। তাহলে লিপস্টিক সহজে উঠে যাবে না। লিপস্টিকের রঙের সাথে মিলিয়ে প্রথমে ঠোঁট সুন্দর করে লিপলাইনার দিয়ে এঁকে নিয়ে লিপস্টিক দিতে হবে। গায়ের রঙের সাথে মানানসই লিপস্টিক ব্যবহার করবেন। চুল খোলা রাখলে লিপগ্লস না লাগালেই ভালো হয়। কারণ চুল এলোমেলো হয়ে উড়ে এসে লিপগ্লসে আটকে যেতে পারে।
চুলের সাজ
ঠাণ্ডা বাতাস এবং শুষ্ক হাওয়ায় আপনার চুলের স্টাইল নষ্ট করতে পারে। শীতে বিয়ের সাজ এ সাধারণত চুল বেঁধে রাখার চলটাই বেশি দেখা যায় তবে চুলের স্টাইল নির্ভর করবে আপনার পোশাকের ওপর। পোশাক যদি হয় শাড়ি তাহলে হাত খোঁপা করে চুলে ফুল লাগাতে পারেন। আর চুল যদি ছোট হয় তাহলে ছেড়ে রেখে দিন। এতেই আপনাকে অনেক সুন্দর লাগবে।
হাত ও পায়ের যত্ন
বিয়ের অন্তত একমাস আগে থেকে হাত ও পায়ের যত্ন নিন। সপ্তাহে দু’বার স্ক্রাবিং আর ময়শ্চারাইজ়িং করবেন। নখ কেটে ফাইল করে রাখুন। বিশেষ নজর দিন হাঁটু, গোড়ালি, কনুইয়ের পিছনদিকের ত্বকে। ত্বক নরম রাখতে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ, জুঁই, ল্যাভেন্ডার, ইলাং ইলাংয়ের প্রাকৃতিক নির্যাস সমৃদ্ধ বডি অয়েল। সারা শরীরের জন্য দামি রত্ন, ভেষজ ও এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে বিশেষ প্যাক পাওয়া যায়। নিয়মিত এই প্যাক লাগালে আপনার ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
কেমন গহনা পরবেন?
আগের দিনের মত ভারী গহনার চল এখন নেই বললেই চলে তবে মেটাল, এন্টিক বা রূপার গহনা পড়তে পারেন, এতে বেশ কম্ফোর্টেবল থাকবেন। হাতে পড়ুন চুড়ি অথবা ব্রেসলেট। তবে কানে বড় এক জোড়া দুল পড়লে গলায় কিছু না পড়লেও চলে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে টিপ পরতে পারেন।
বিয়ের সাজ এ আরও কিছু
প্রতিদিন অন্তত দু’ লিটার জল খেতে শুরু করুন আজ থেকেই। ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে এক চামচ আপেল সাইডার ভিনিগার আর মধু মিশিয়ে খান। গাজর, শসা বা তুলসির রস খেলেও উজ্জ্বলতা বাড়বে। বিয়ের আগে কয়েকটা দিন তেলঝাল ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলুন। অতিরিক্ত তেলমশলাওয়ালা খাবার খেলে যেমন হজমের গোলমাল হতে পারে, তেমনি ব্রণও দেখা দিতে পারে। বিয়ের আগে অন্তত তিন সপ্তাহ সময়মতো খাওয়াদাওয়া করুন, সময়ে ঘুমোতে যান।
আজকাল বিয়ে হবে বলে বেশিরভাগ মেয়ে বিয়ের কেনাকাটা, দৌড়ঝাঁপ, সব কিছুতেই অংশ নেন। যারা চাকরি করেন, তাঁদের তো বাড়তি চাপ রয়েছেই। তা ছাড়াও বিয়ের আগে অনেক মেয়েই নানা বিষয় নিয়ে কমবেশি মানসিক চাপে ভুগতে থাকেন। অনেকেরই খাওয়াদাওয়া কমে যায়, মুখে ক্লান্তির ছাপ পড়তে শুরু করে। বিয়ের দিনে প্রত্যেকের নজর থাকে কনের দিকেই। তাই ত্বকের পরিচর্যায় খামতি থাকলে, মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলে কিন্তু হাজার মেকআপেও সেই জৌলুস ফুটে উঠবে না আপনার মুখে। তাই শীতে বিয়ের সাজ এ অনুপম সুন্দরী হয়ে উঠতে হলে পরিচর্যা শুরু করতে হবে হাতে সময় নিয়েই। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এখনই সেরা সময় নিজের যত্ন শুরু করে দেওয়ার। শুধু বাইরে থেকে পরিচর্যা নয়, সুস্থ থাকতে হবে ভিতর থেকেও। ভিতর থেকে সতেজ ও ঝলমলে থাকলে তার ছাপ পড়বে আপনার মুখেও।
মডেল: রোমানা আমিন
মেকাপ: প্রিতি লেডি
Add Comment