অনু গল্প

শৈশবের রঙ

সাময়িকী : শুক্র ও শনিবার

১৫ অক্টোবর ২০২২


―মিলন মাহমুদ রবি

সুপার শপে গিয়েছিলাম প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য কিনতে। মসলার সেলফে তাকাতেই দেখি কিসমিস সাজানো। না নিলেও হতো তারপরও ২প্যাকেট নিলাম। এতো কিছু রেখে কেন কিসমিস নিয়ে বলছি, তাই তো? হঠাৎ শৈশবের একটা ঘটনা মনে পরে গেলো।

ছোটবেলায় খুব কিসমিস খেতে ইচ্ছে করতো! লোভ সামলাতে না পেরে রান্না ঘরে মায়ের লুকিয়ে রাখা টুকরি থেকে কিসমিস চুরি করে পকেটে নিয়ে সুযোগমতো খেতাম। আবার কখনও বাদাম, কখনও বা ১ চামচ গুড়া দুধ হাতে নিয়ে চেটেপুটে খেতাম। এমন ঘটনায় বেশ কয়েকবার মায়ের হাতে ধরা পড়ে হতচ্ছাড়া বলে বকুনি আবার কখনো স্কেলের বাড়িও খেয়েছি।

বাদাম, গুড়া দুধ, কিসমিস ইত্যাদি মায়ের টুকরির ভিতরে সবসময় থাকতো। মা এসব জিনিস চালাকি করে আমাদের হাতের নাগালের বাইরে রাখতেন। কারণ, বাসায় কখন মেহমান চলে আসে তাদের সেমাই, চা, নাস্তা দিতে হতো। আবার বিকেলে আমাদের পড়া শেষে মা কখনো সেমাই, কখনো অন্যান্য নাস্তা দিতেন। মা যখন সেমাই রান্না করতেন পেছনে গিয়ে দাঁড়ালে বুঝতে পেরে দুই-তিন পিছ কিসমিস হাতে দিতেন, ওই সময় হাতে পেয়ে অতৃপ্ত মনে আমার খুশির রঙ লেগে যেত!
এখনতো চাইলেই কিসমিস প্যাকেট ধরে কিনে ইচ্ছে মতো খেতে পারি। কিন্তু তাতে কি? আমার শৈশবের দুরন্তপনার মাঝে ওই যে চুরি করে খাওয়ার সেই মজা, আনন্দ কোনটাই এখন আর পাইনা। চোখে মুখে সেই আনন্দের রঙ লাগে না। মুঠো ভরে খেলেও না।

সেই যে― লুকিয়ে হাতের তালুতে রেখে ‘গুড়া দুধ’ চেটেপুটে খাওয়ার যে আনন্দ ছিলো, তাতো পাইনা বরং দিনদিন স্বাদও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ‘মা’ও এখন আর আগের মতো বকে না। তার যত্নে আমারই খেয়াল রাখতে হয়।

হারানো দিনগুলি স্মৃতির জানালায় আজো কড়া নেড়ে যায়। হতচ্ছাড়া একলা কিশোরবেলা আসবে না আর ফিরে। ইচ্ছে করে ফিরিয়ে নিয়ে যাই, এই আমিকে সেই আমিটার কাছে। তা কি সম্ভব? জীবনতো বহমান নদীর ন্যায় ছুঁটে চলে। তাই আফসোস না বাড়িয়ে―বেঁচে থাকতে হলে প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করুন। কারণ, আপনি নিজেও জানেন না কোনটি আপনার শেষ মুহূর্ত।

 

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930