সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার
-জামান একুশে
এলিভেটরে ঢুকতেই দেখলাম শ্যামা মিররে ঠোঁট আঁকছে। আমাকে দেখে নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বলল কেমন আছেন ভাইয়া?
এইতো ভালো। আপনি ভালো আছেন?
হ্যাঁ ভাইয়া ভালো।
শ্যামা শাড়ি পরেছে। ভায়োলেট কালার হবে হয়তো। শ্যামার গায়ের রঙ শ্যামলা। এই শাড়িতে ঠিক মানাচ্ছেনা। তবুও একটা সুন্দর হাসি দিয়ে সে সব মেকাপ করে নিতে পারছে।
কি কোথাও প্রোগ্রাম আছে!
না ভাইয়া অফিসে যাচ্ছি।
এতটুকু বলতেই এলিভেটর থেকে নামার সময় চলে আসল।
শ্যামার সাথে পরিচয়টা আমার এরকম। আমি যখন অফিসে যাই বা ফিরি প্রায়ই এলিভেটরে দেখা হয় শ্যামার সাথে। কথা ঐ এলিভেটর স্পিচ পর্যন্তই। একদিন শুধু এলিভেটরের বাইরে শ্যামার ভাবনাটা বাসায় নিয়ে এসেছিলাম। যুথীকে বললাম শ্যামা মেয়েটা স্মার্ট, সুন্দর করে হাসতে পারে। কিন্তু মেয়েটার বিয়ে হচ্ছে না কেন!
যুথী বলল বিয়ে হচ্ছে না তাতে কি তুমি বিয়ে করে ফেল।
না মানে এলিভেটর স্পিচ হয় দেখা হলে।
বাহ! এরমধ্যেই এলিভেটর কিস করে ফেলেছ!
আরে ধুর কি বলি আর কি শোন! বললাম এলিভেটর স্পিচ।
ঐ হলো এলিভেটর প্রেম। তোমরা পুরুষরা কি আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। মেয়ে দেখলেই মাথা আউলা হয়ে যায়। অতোটুকু সময়ে এতকিছু ভেবে ফেলেছ!
শ্যামাকে নিয়ে ভাবনার দৌড় ওখানেই সমাপ্ত। তবুও যাওয়া আসার পথে শ্যামাকে দেখি। তার জীবনচরিত আমার সামনে ফিল্মের ফিতার মতো দৌড়ায়। কোন কোন দিন সে খুব সাজুগুজু করে অফিসে যায়। অস্থির, চঞ্চল, হাসি এগুলো তার উপাদান। সে একটা টিভি চ্যানেলে কাজ করে। মাঝে মাঝে একটা ছেলের সাথে বাইকের পেছনে দেখি। বুঝা যায় প্রেম আছে। মেয়েটির মা নেই। বাবা কিছুদিন আগে মারা গেছেন। ভাইয়ের সাথে থাকে। অনেকটা অভিভাবকহীন।
একদিন এলিভেটরে শ্যামাকে বললাম বিয়ে করেন না কেন। শ্যামার চোখ ছলছল করে উঠে। বুঝি এই প্রশ্নটা ঠিক হয়নি।
আমি দিন দিন শ্যামার চঞ্চলতা কমে আসতে দেখি। হাসিটাও কেমন মেকি। কারো বাইকের পেছনে আর দেখিনা। অনেক রাতে ক্লান্ত পায়ে সিএঞ্জি থেকে নামে।
যখনি দেখা হয় ভাবি মেয়েটা শিক্ষিত, স্মার্ট এনাফ, অনেক সুন্দর করে হাসতে পারে। তাকে সত্যিকারের ভালোবাসবার কেউ নেই কেন!
Add Comment