ঋতুর সাজ

নীল আকাশের বুকে সাদা মেঘের ভেলায় চড়ে এলো শরৎ

ছবি: হ্যালোটুডে

-মিলন মাহমুদ রবি

নীলাকাশের বুকে ভাসলো সাদা মেঘের ভেলা..! স্বচ্ছ নীলাকাশে দেখি সাদা মেঘেদের ফেরারি যাতায়াত। হ্যাঁ, নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভাসিয়ে এসেছে শরৎ। রৌদ্র-মেঘের ছায়ার খেলা, ছড়িয়ে পড়া শিউলি ফুল, দুলতে থাকা কাশবন, দুর্গাপুজোর আয়োজনের হাঁকডাক জানিয়ে দিলো শরৎ এসেছে। প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়েছে শরৎআবহ।

ঝকঝকে কাচের মতো স্বচ্ছ নীল আকাশ আর তার মধ্যে তুলার মতো সাদা মেঘমালা- এসব নিয়েই প্রকৃতি বরণ করে নেয় শরৎকালকে। কিন্তু শরতের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের এই অপরূপ বর্ণনা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শরৎকালের সেই মাধুর্য এখন আর খুঁজে পায় না মানুষ। ঋতু পরিক্রমার তৃতীয় ঋতু শরৎকাল। গঠিত হয় ভাদ্র ও আশ্বিন মাস নিয়ে। খ্রিষ্টীয় পঞ্জিকা অনুসারে মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত শরৎ ঋতুর পথচলা।

শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক! সাদা কাশফুল, শিউলি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, আলোছায়ার খেলা দিনভর- এইসব মিলেই তো শরৎ। শরৎকালের প্রথম মাস অর্থাৎ ভাদ্রের শুরু থেকেই শরতের আবির্ভাবটা লক্ষণীয়। শরতের স্নিগ্ধতা এক কথায় অসাধারণ! জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর।

গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ আর বর্ষায় অঝোরধারায় শ্রাবণ ঢলের পর আসে শরতের আলোছায়ার খেলা; এই মেঘ, এই বৃষ্টি, তো কিছুক্ষণ পরই রোদ। শরতের অন্যতম বড় আকর্ষণ কাশফুল! নদীতীরে বনের প্রান্তে

কাশফুলের রাশি অপরূপ শোভা ছড়ায়। কাশফুলের এ অপরূপ সৌন্দর্য পুলকিত করেনি এমন মানুষ খুঁজে মেলা ভার। গাছে গাছে শিউলির মন ভোলানো সুবাসে অনুভূত হয় শরতের ছোঁয়া। শরতের মেঘহীন আকাশে গুচ্ছ গুচ্ছ কাশফুলের মতো সাদা মেঘের ভেলা কেড়ে নেয় মন। শরৎকালেও বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। বৃষ্টি শেষে আবারও রোদের দেখা মিলে। দিগন্তজুড়ে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠে রংধনু। প্রকৃতির এ অপরূপ যেন প্রিয় মানুষের সান্নিধ্য চায়। হয়তো ইচ্ছা হয় গোধূলির ওপারে হারিয়ে যেতে প্রিয়জনের হাতটি ধরে।

প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ এ ঋতুর চরিত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রিয়তমাকে। তিনি তার ‘এখানে আকাশ নীল’ কবিতায় লিখেছেন- ‘এখানে আকাশ নীল/ নীলাভ আকাশজুড়ে সজিনার ফুল/ ফুটে থাকে হিম শাদা/ রং তার আশ্বিনের আলোর মতন’। অনেকের মতে, শরৎকালে মনটা নেচে ওঠে ছুটির নেশায়, উৎসবের নেশায়! কারণ, শরৎকালে মাঠে মাঠে সবুজ ধানের ওপর সোনালি আলোর ঝলমলানি দেখা যায়। প্রতীক্ষায় থাকেন কৃষক। আসন্ন নবান্নের আশায়।
শরতের বর্ণনা দিতে গিয়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি/ ছড়িয়ে গেল ছাপিয়ে মোহন অঙুলি/শরৎ, তোমার শিশির-ধোয়া কুন্তলে/বনের-পথে-লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে/আজ প্রভাতের হৃদয় ওঠে চঞ্চলি’। শুধু রবীন্দ্রনাথ নন, শরৎ নিয়ে আরও অনেক কবি কাব্য রচনা করেছেন।

শরতের মন ভোলানো প্রকৃতিতে মন যে কী চায় তা বোঝা বড়ই মুশকিল! রোদ আর বৃষ্টির লুকোচুরি খেলায় মনেও যেন জমে মেঘ, আবার কখনও হয়ে ওঠে রৌদ্রকরোজ্জ্বল। কিন্তু ব্যস্ত এ নগরীতে শত ব্যস্ততার মাঝে আমরা পারি না মনের আকাঙ্ক্ষায় শরতের রঙে সাজাতে। তবু যেন মনে হয় হারিয়ে যাই শরতের কাশফুল, গোধূলি, শিউলি আর জ্যোৎস্নার মাঝে। প্রিয়জনের হাত ধরে অনুভব করি স্নিগ্ধতা।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

April 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930