হ্যালোডেস্ক
পরিবারের সুখ-শান্তির ওপর নির্ভর করে প্রতিটি মানুষের সুখ। অনেকেই জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে পরিবারের সবাইকে সুখী রাখার জন্য। কিন্তু এতকিছু করেও সুখ উপভোগের সময় কখন যে হারিয়ে যায় তা বুঝতে পারে না অনেকেই। সুখী পরিবার গড়ে ওঠার পেছনে সব থেকে বড় শর্ত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। শুধু অর্থ উপার্জন করে ঘরে নিয়ে আসলেই পরিবারের সদস্যদেরকে সুখী করা যায় না। একদল গবেষক কয়েকটি পরিবারকে পর্যবেক্ষণ করে খুঁজে বের করেছেন কিভাবে গড়ে ওঠে সুখী পরিবার।
কিভাবে গড়ে তুলবেন সুখী পরিবার:
১। যে কোনো পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সঙ্গীর পাশে বসুন। বিজ্ঞানীদের মতে, কারো সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে বসে কথা বললে কথোপকথন সহযোগিতাপূর্ণ হয়। মুখোমুখি বা আড়াআড়ি বসলে ততটা হয় না। আর সঙ্গীর সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক সুখী পরিবারের প্রথম শর্ত।
২। সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলার সময় ডিম লাইটের আলো জ্বেলে নিন। গবেষণায় দেখে গিয়েছে ডিম লাইটের হালকা আলোতে মানুষ আরামদায়ক এবং নিরাপদ বোধ করে এবং ওই সময়টায় কথোপকথন খোলামেলা হওয়ায় বিশ্বাস গড়ে ওঠে। আর বিশ্বাস সুখী পরিবার গড়ে তোলায় শর্ত।
৩। পরিবারের বর্তমান প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিন তার পূর্বসূরীর সঙ্গে। গবেষণায় দেখা যায়, যে বাচ্চারা পূর্বসূরীদের সাফল্য এবং ব্যর্থতার গল্প জানে তারা বেশি স্থিতিস্থাপক এবং চাপের প্রভাবে নিজেকে সংশোধন করতে সক্ষম।
৪। সন্তানকে তার দাদা-দাদীর সঙ্গে বড় করুন। বিবর্তনবাদী নৃ-তত্ত্ববিদ সারাহ ব্লাফার হার্ডি বলেছেন, দাদা-দাদী বা নানা-নানী প্রজন্ম হচ্ছে পরিবারের ওস্তাদ সম্প্রদায়। এদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শিশুরা অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়। ৬৬টি গবেষণা এনালাইসিস করে দেখা যায়, যে পরিবারের শিশুরা তার মা ও দাদীর সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, পরবর্তী জীবনে তাদের অবসাদের মাত্রা অনেক কম।
৫। রাতে খাবার টেবিলে বসে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে দিনের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা বলুন। যে পরিবারে খাবার টেবিলে দিনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয় সে পরিবারের শিশুরা বাস্তব জীবন সম্পর্কে ভালো ধারণা ছোটবেলাতেই পায় এবং তাদের মধ্যে সহমর্মিতা ও অন্যান্য নৈতিক গুণাবলি তৈরি হয়।
৬। লড়াকু মানসিকতার হউন। জেসন ম্যাককার্থি বলেন, কিছু মুহূর্ত আসবে যখন পরিবারের প্রয়োজনগুলোর সঙ্গে নিজের প্রয়োজনের সংঘাত ঘটবে তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে অথবা একটি বিকল্প পথ বের করতে হবে। আর তখনই আপনার মধ্যে বিশ্বস্ততা তৈরি হবে এবং পরিবার আপনার ওপর নির্ভর করবে। এভাবেই নির্ভরতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গড়ে উঠে সুখী পরিবার।
৭। পরিবারের সবাই সবার কাজ ভাগ করে নিন। একটি তালিকা করে সেখানে তিনটি কলাম রাখুন, ‘কি করতে হবে’, ‘কতটুকু করেছি’, এবং ‘কি কি করা হয়েছে’। পরিবারের যে-ই কাজ হাতে নিবে সে এই তিনটি কলাম মেনে চলে পরিবারকে জানাবে কাজটির এখন কি অবস্থায় আছে। এতে করে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে।
৮। সব কিছুতেই না বলার অভ্যাস ত্যাগ করুন। সুখী পরিবারের অন্যতম শর্ত, নমনীয় হওয়া। যেকোনো সিদ্ধান্ত ভেবে পরিবারকে জানাতে হবে। তবে সরাসরি না বলা উচিত নয়। এতে করে পরিবারের সবার মধ্যে শান্তি বজায় থাকে।
৯। পরিবারের উচিত শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে খেলাধূলা করুন। তবে খেলার সময় তাদের কখনো বলবেন না তুমি এটা পারোনি বা পারবে না বরং তাদের বলুন ‘আমি জানি তুমি এটা পারবে।’ এতে করে শিশুর মনে আত্নবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
১০। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে সময় কাটান। নিয়ম করে পরিবারের সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিন। হয়ত খাবার টেবিলে নয় ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে সবাই মতামত ভাগাভাগি করুন। যদি সমস্যাগুলো নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা না করেন তবে পরিবারের উন্নতির কোনো পরিকল্পনা নেই। আর এই পরিবারই তৈরি করে দিবে নিরাপদ পরিবেশ।
১১। আমি বলা পরিহার করুন। সব বিষয়েই আমরা বলতে অভ্যস্ত হোন। এতে করে পরিবারের একাত্বতা প্রকাশ পায়। যা সুখী পরিবার গড়ে তোলার অন্যতম শর্ত।
১২। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে কোনো কঠিন সিদ্ধ্বান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন। শিকাগোর দুই মনোবৈজ্ঞানির মতে, এই দুই ঘন্টা সব থেকে চাপের সময়। সারাদিনের কাজের পর পরিবারের সকল সদস্যের শরীর ক্লান্ত হয়ে পরে এ সময়। তাই এই সময় নেয়া সিদ্ধান্ত ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে না।
১৩। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যে কোনো তর্ক হলে তা তিন মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করুন। কেননা ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জন গটম্যানর গবেষণা থেকে জানা যায় যে কোনো যুক্তিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো প্রথম তিন মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তারপর সকলেই উচ্চ স্বরে নিজের আগের কথাই পুনরাবৃত্তি করে।
তথ্য: ডেইলি বাংলাদেশ
মডেল : রেখা হক, পার্থ, প্রাপ্ত ও প্রত্তয়
মেকআপ : আল-আমিন
ছবি : হ্যালোটুডে
Add Comment