রকমারি

হাওরে অঞ্চলে কৃষকদের কেমন কাটছে

ছবি সংগৃহীত

হ্যালোডেস্ক: বাংলাদেশের উওর পূর্ব অঞ্চলে সাতটি জেলার মোট ৩৭৩ টি হাওর আছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জে ৯৫ টি, সিলেটে ১০৫ টি, হবিগঞ্জে ১৪ টি, মৌলভীবাজারে ৩ টি, নেত্রকোনায় ৫২ টি, কিশোরগঞ্জে ৯৭ টি এবং ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় ৭ টি হাওর রয়েছে। এ সাতটি জেলায় মোট জমির পরিমাণ ১৯,৯৯,৮০০ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরের পরিমাণ ৮,৫৮,৪৬০ হেক্টর। অর্থাৎ মোট জমির ৪২.৯৩% হাওর। হাওর অঞ্চলের মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি (৫৩.৬৭% ) কৃষিজীবি, ১২.৫২% ব্যবসায়ী, ৬.১৩% অকৃষি শ্রমিক, ৬.৬৫% সেবাখাতে শ্রমজীবি, ২.৫৯% মৎস্যজীবি এবং ২.৩৯% পরিবহন পেশায় নিয়োজিত।

বোরো ধান হাওর অঞ্চলের প্রধান ফসল। ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত এ অঞ্চলের মানুষ আকষ্মিক বন্যা বা পাহাড়ী ঢলের আতঙ্কে থাকেন। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত খুবই ঝুকিপূর্ণ সময়। কারণ ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসের ১৬ তারিখে বন্যা আসে। ২০০০ সালে ২৮ এপ্রিল বন্যা আসে। ২০০১ সালে ২৭ এপ্রিল, ২০০২ সালে ১৪ এপ্রিল, ২০০৪ সালে ১৩ এপ্রিল বন্যা আসে এবং ২০১৭ সালে ২৮ মার্চ তারিখে বন্যা আসে।

বাংলাদেশের উওর পূর্ব অঞ্চলে আকষ্মিক বন্যার মূল কারণ উজানে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে প্রবল বর্ষনের পানি দ্রুত বেগে বাংলাদেশে সমাতল ভূমিতে চলে আসে এবং ধান ক্ষেত তলিয়ে যায়। বন্যার এ আকষ্মিক ভয়াবহতা নিয়েই এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকা চলে আসছে। তবে গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে সবুজ বিপ্লবের হাত ধরে ধান চাষে আমূল পরিবর্তন এসেছে। পানি সহনশীল স্থানীয় লম্বা কাণ্ডের ধান জাতের পরিবর্তে খাটো কান্ডের বোরো ধান প্রবর্তন করা হয়েছে। রাসায়নিক সার ও বালাই নাশক ব্যবহার করে ধান চাষ করা হচ্ছে।
ইদানীং হাওর অববাহিকায় উজান থেকে নেমে আসা পানির গতি প্রকৃতিতে লক্ষনীয় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। গত ৩০-৩৫ বছর আগের অবস্থান সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে স্বাভাবিক অবস্থায় এখন ১০-১৫ দিন আগেই উজান থেকে ঢলের পানি নেমে আসছে, আগাম বন্যার এ ভয়াবহতা থেকে কৃষকদের এক মাত্র ফসল বোরো ধান এবং জীবন জীবিকা রক্ষার জন্য কৃষকদের ফসল বৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং আশু ধানের জাত নির্বাচন করা প্রয়োজন। বন্যা আসার আগেই ঘরে তোলা যায়। বোরো ধানের এমন জাত বাছাই করতে হবে যা দ্রুত বাড়ে কান্ড লম্বা প্রাথমিক অবস্থায় ঠান্ডা সাহিঞ্চু।

ভাসমান গদির উপর শাক সবজি চাষ করছে হাওরবাসী। ভাসমান গদির উপর মৌসুম ভিত্তিক লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, শশা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, সিম, বরবটি, ঝিঙ্গা, ধুনদুল, চাল কুমরা, করল্লা, ধনে পাতা, টমেটো, বাধা কপি, বেগুন, ইত্যাদি আবাদ করা যেতে পারে।
হাওর এলাকার প্রায় ২০% জমি তুলনামূলক ভাবে উঁচু (কান্দা, চালা, টেক, টান)। এ জমি ধান চাষের উপযোগী নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব জমি পতিত থাকে। তবে এ জমি রবি ফসলের উপযোগী। পানি সেচ ছাড়া রবি মৌসুমে যে সব ফসল আবাদ করা যায় যেমন, চীনা, কাওন, যব, গম, ভুট্টা, মিষ্টি আলু, গোল আলু, চিনা বাদাম, তিষি, সূর্যমুখী, খেসরী, ছোলা, মটর, পিয়াজ, রসুন, মরিচ, ফুল কপি, বাধা কপি, টমাটো, মূলা, গাজর, শালগম, বিট, লেটুস, বেগুন, পালংশাক লাল শাক, লাউ, শশা, সিম, ধনে শাক চাষ করা যেতে পারে। হাওর এলাকার হাঁস, মুরগী, গরু, মহিস, ছাগল, ও মৎস্য উৎপাদন উন্নয়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

যুগযুগ ধরে হাওর অঞ্চলের মানুষ পাহাড়ী ঢলের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন যাপন করে আসছে। সময় এসেছে এখন প্রকৃতির সাথে তালমিলিয়ে জীবন ব্যবস্থা সাজানোর। কৃষি ব্যবস্থা ফসলের জাত নির্বাচন, চাষাবাদ এবং অন্যান্য জীবন আচার প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে সাজাতে চায় হাওরবাসী।

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930