শাকিল রনি
“অনেক দিন হয়ে গেলো তোকে লিখা হচ্ছে না।” “বাসায় কি ইদানীং মুড়ির জোগান বেড়েছে নাকি?”
“মানে?”
“আমাকে না লিখে করিস কি তাহলে! নিশ্চয়ই মুড়ি খাস।”
“কি যে যাতা বলিস। লিখার মতো কিছু পাই না। কি লিখবো বল?”
“ছাগল একটা।” “গালি দিচ্ছিস কেনো?” “এটা গালি না। তোকে বিশেষায়িত করলাম।”
“ঠাট্টা ছাড়। কি লিখবো বল।” “প্রথমে একটা সরল রেখা আঁক।
এরপরে সরল রেখার ঠিক মাঝখানে বড় একটা বৃত্ত। বৃত্তটার ভিতরে আরো একটা বৃত্ত। এভাবে আঁকতেই থাক বৃত্ত না ভরা পর্যন্ত।”
“এতো বৃত্ত এঁকে হবেটা কি শুনি?”
“ছাগলের জন্য কাঠাল পাতার ব্যবস্থা হবে।”
“আবার ঠাট্টা!”
“এবার প্রতিটা বৃত্তের একটা করে নাম দে। দেখ সরল রেখাটা সব বৃত্তকে দুই ভাগ করে দিয়েছে। কেন জানিস?”
“কেন?”
“উপরের বৃত্ত গুলো হলো গাছের ডালপালা। আর নিচের বৃত্ত গুলো হলো শিকড়।” “কিছুই বুঝতে পারছি না।” “বুঝে কাজ নেই তোর। শুনে যা। একটা বৃত্তের মাঝে আরেকটা বৃত্তের যে ফাঁকা জায়গাটা আছে এটা কি জানিস!”
“কি?”
“সম্পর্কের ব্যবধান। বৃত্ত গুলোর সাথে পরস্পরের সম্পর্ক আছে। প্রতিটা সম্পর্কেই ব্যবধান থাকে। এই ব্যবধানই আরেকটা বৃত্ত আঁকার জায়গা করে দেয়। নাহলে পৃথিবীতে মানুষের বিকাশ থেমে যেতো।”
“কিন্তু এতো আঁকাআঁকি, সম্পর্ক, পৃথিবী, ব্যবধান এসব কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ কি হচ্ছে?”
“তুই যদি সম্পর্কই না বুঝিস তাহলে গল্প লিখবি কি করে। গল্প মানেই হলো সম্পর্ক। বর্ণমালার সাথে বর্ণমালার। শব্দের সাথে শব্দের। বাক্যের সাথে বাক্যের। জীবনের সাথে জীবনের। তুই যতো সম্পর্কের গভীরে যেতে পারবি ততো ভাল গল্প লিখতে পারবি। সম্পর্ক গুলোকে তোর ভাঙতে জানতে হবে। গড়তে জানতে হবে। সম্পর্কের ভিতরে যতো রঙের রস আছে সব চেখে চেখে দেখতে হবে। চোখের জল নোনা হয় সে সবাই জানে। কিন্তু গল্পকার তা মানবে কেনো। তুই যদি নোনা স্বাদ সরিয়ে তেতো স্বাদ দিস পাঠকদের সেই স্বাদই পেতে হবে। তারা বাধ্য তেতো স্বাদ পেতে। কিন্তু সবকিছুরর মূল হলো সম্পর্ক। সেটা আগে তোকে ছুড়ি কাঁচি দিয়ে কেটে ফালিফালি করে বুঝতে হবে।”
“তাহলে বলতে চাইছিস গল্পই হলো সম্পর্ক।
আর সম্পর্কই হলো গল্প। সম্পর্ক ছাড়া গল্প হয় না!”
“গল্পকারদের আসলে কাজ কি জানিস?
সম্পর্কের সাথে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য সে কিছু কল্পনার রঙ মাখায়। কল্পনায় পরিমিত হতে পারাটাই আসল। পরিমিতি বোধ না থাকলে তুই তো থামতে পারবি না। শুধু কল্পনায় ভাসবি। কিন্তু গল্প শুরু করার চেয়েও অনেক বেশি প্রয়োজন থেমে যাওয়া।”
“আচ্ছা তোর সাথে তাহলে আমারো একটা সম্পর্ক আছে তাই না?” “হ্যাঁ! তাতো তো আছেই। কিন্তু তোর সাথে আমার সম্পর্ক তেমন ভাল না। তুই এখনো বাল্যশিক্ষার হাফ প্যান্ট পরা ছাত্র। তাই আমার সাথে এখনো ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে পারিস নাই। আরো বড় হয়ে নে।”
“কি বলতে চাস তুই?
৩৩ বছর পার করে দিলাম তাও বলিস আমি বড় হইনি।”
“এই যে দেখ যদি বড় হতি তাহলে এভাবে তর্ক করতি না। তোর শরীরের ২০৬ টা হাড় হয়তো বড় হয়েছে। কিন্তু গল্প লিখার জন্য তোর ভিতরে এখনো যেই গল্পকার তৈরি হচ্ছে সে তো হাফ প্যান্ট পরে। নাহলে দেখ সামান্য এই কথা লিখতেও তুই কত মেদ জমিয়ে ফেলেছিস।
তোর সাথে আমার সম্পর্ক যদি ভালোই হতো আরো দুই তিন প্যারাগ্রাফ আগেই আমি একটা সার্থক অণুগল্প হয়ে যেতাম।”
Add Comment