রফিকুল ইসলাম সবুজ, সিরাজগঞ্জ
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের অতি পরিচিত শালিক পাখিদের অন্যতম কাঠশালিক ও মুনিয়া পাখি। অবাধ বৃক্ষনিধন এবং জমিতে বিষাক্ত কীটনাশক প্রয়োগ ও পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্যে সুন্দর এই পাখিগুলো দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে।
একসময় এদের সর্বত্র বিচরণ দেখতে পাওয়া গেলেও এখন দুর্গম বনাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকা ছাড়া এসব পাখি খুব একটা দেখা যায় না। লালচে, ধূসর, খয়েরি ও পিঙ্গল রঙয়ের মিশেল কাঠশালিক আমাদের চেনা শালিকের চেয়ে কিছুটা ছোট। এরা প্রায় ১৯ থেকে ২১ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। কাঠশালিকের শরীরের নিচের অংশের বুক, পেট আর লম্বা লেজের পালকের রঙ উজ্জ্বল বাদামি, পা লালচে এবং উজ্জ্বল বড় চোখ।
গলায় রয়েছে মালার মতো অতিরিক্ত ধূসর পালক। এরা গাছের কোঠরে গর্ত করে বাসা বানায় এবং বসন্ত থেকে বর্ষাকাল পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম।
এ সময় বাসায় তিন থেকে চারটে লম্বাটে নীলচে রঙের ডিম পাড়ে। এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে সব রকম পোকামাকড় ও ফল।
পরিবেশবান্ধব এই সুন্দর পাখিটির সংরক্ষণ অতীব জরুরি। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম থেকে এই প্রজাতিটি চিরতরে বিলুপ্ত হবে বলে পাখি বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।
অন্য দিকে আমাদের গ্রামবাংলার চিরচেনা ক্ষুদ্রাকৃতির সুন্দর পাখি মুনিয়া গ্রামগঞ্জের আখ, ধান, গম ও সরষে ক্ষেতে ঝাঁক বেঁধে বসতে দেখা যেত। কিন্তু এখন আর এই পাখি দেখা যায় না। শহরের অনেকেই নানা বর্ণের মুনিয়া পাখি খাঁচায় শখ করে পোষেন। শিকারিরা জাল পেতে এদের ধরে খাঁচায় ভরে বিক্রি করে।
মুনিয়া নানা আকর্ষণীয় রঙের হয়ে থাকে। একটি ঝাঁকে সাধারণত এক জাতের মুনিয়াই থাকে। মুনিয়া সাধারণত ১০ থেকে ১১ সেন্টিমিটার লম্বা হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে এরা ঝোপঝাড় এবং ছোট গাছের আড়ালে ঘাস, পাতা নিয়ে গোলাকৃতির বাসা বানায়।
বাসায় ছোট ছোট সাদা ডিম দেয় তিন থেকে পাঁচটা এবং পুরুষ-মেয়ে তা দিয়ে ১৭ থেকে ১৯ দিনে বাচ্চা ফোটায়। মুনিয়ার খাদ্য তালিকায় রয়েছে শস্যদানা এবং ছোট পোকামাকড়। লাল, হলুদ, গোলাপি, খয়েরি ছাড়া, কালো ফুটকি দেয়া নানা বর্ণের মুনিয়া পাখির দেখা মেলে।
এই পাখিদের বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে হলে দেশের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং অবাধ শিকারিদের হটাতে হবে। নইলে কাঠশালিক আর মুনিয়া পাখি অচিরেই হারিয়ে যাবে বাংলাদেশ থেকে।
Add Comment