ঋতুর সাজ

হেমন্তের মিঠে রোদ প্রকৃতিতে

মডেল: সিনথিয়া ইসরাত

প্রকৃতি বারবারই নান্দনিক

হ্যালোডেস্ক

বাতাসে অদ্ভুত এক সুবাস। রোদের তাপে আরাম। মিষ্টি রোদ। বছর ঘুরে অন্নপূর্ণা হেমন্ত এসেছে। হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু। বাংলাদেশকে ঘিরে দু’মাস অন্তর একেকটি ঋতু পরিবর্তন হয়। আগমন করে নিজস্ব বহুমুখী বৈচিত্র্য নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন ঋতু। আমাদের এই রূপবতী বাংলাদেশে বারো মাসে গ্রীষ্ফ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত- এই ছয়টি ঋতুর পালাবদল হয় প্রতি বছর। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দু’মাস নিয়ে হেমন্তকাল। হেমন্ত মানেই শিশিরস্নাত প্রহর। শরতের কাশফুল মাটিতে নুইয়ে পড়ার পরপরই হেমন্তের আগমন ঘটে। এরপর আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। হেমন্তে সকালবেলা আবছা কুয়াশায় ঢাকা থাকে চারদিকের মাঠ-ঘাট।

কবি জীবনানন্দ দাশ ‘পিপাসার গান’ কবিতায় লিখেছেন, ‘এ দেহ-অলস মেয়ে/পুরুষের সোহাগে অবশ!-/চুমে লয় রৌদ্রের রস/হেমন্ত বৈকালে/উড়ো পাখপাখালীর পালে/উঠানের; পেতে থাকে কান-/শোনে ঝরা শিশিরের গান/অঘ্রানের মাঝরাতে;’ কবির চোখে হেমন্ত কী অসাধারণ, ‘প্রথম ফসল গেছে ঘরে/হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে শুধু শিশিরের জল;/অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে/হিম হয়ে আসে/বাঁশপাতা-মরা ঘাস-আকাশের তারা!/বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা!/ধানক্ষেতে-মাঠে/জমিছে ধোঁয়াটে/ধারালো কুয়াশা!’ কবির চোখে হেমন্ত শস্যের ঋতু, তৃপ্তির ঋতু। ‘হেমন্তের ধান ওঠে ফলে/দুই পা ছড়ায়ে বোসো এইখানে পৃথিবীর কোলে।’

শুস্ক শীতের আগে দখিনা হাওয়ায় ভেসে সজীবতা আসে আমাদের কাছে, এর আবেদন তাই ভীষণ রঙিন। হেমন্ত আসে উৎসব নিয়ে। শারদীয়র বিদায়ের পরও হেমন্তে কথা থাকে। নতুন ফসলের গন্ধে ম-ম এ সময়। পিঠে-পায়েসে বাঙালির মন সব সময়েই উচাটন। হেমন্ত তাই বড্ড আকাঙ্ক্ষিত। নতুন ধানে তৈরি হয় নানা রকম পিঠে। মিষ্টি স্বাদে মন ভরপুর। ধান থেকে টাটকা মুড়ি ভেজে নেওয়ার এটাই সময়। সারা বছরের মুড়ি এ ঋতুতে ঘরে আসে। পায়েসে রসনা বিলাসের তৃপ্তি। তাই শেষ পাতে মিষ্টান্ন। আর নতুন ধানের চালের কথা না বললেই নয়। এ অন্ন স্বাদে অনন্য। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এ দু’মাস জুড়ে বাংলার প্রকৃতিতে স্বীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে আবির্ভূত হয় ফসলের ঋতু হেমন্তকাল। আর এ হেমন্তকাল জুড়েই আমরা দেখতে পাই আমন ধানের ক্ষেত, যা খুবই সুন্দর ও নয়নকাড়া, কচিকাঁচা ধানগাছ সতেজ হতে শুরু করে ক্রমেই।

প্রকৃতিতে খানিকটা ধূসরতা পাখনা মেলার এ সময়ে উজ্জ্বল রংয়ে প্রশান্তি। সবার পোশাক রাঙিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব যে ডিজাইনারদের ঘাড়ে, সে দায়িত্ব তারা বেশ মনোযোগের সঙ্গেই শেষ করেছেন।

হেমন্তে রমণীদের শাড়িতেই আকর্ষণ লাগে। তারই সঙ্গে রয়েছে সালোয়ার- কামিজ আর কুর্তাও। শাড়িতে এবারও রয়েছে দেশি শাড়ির জয়জয়কার। টাটকা তাঁতের শাড়ির আবেদন চিরন্তন। তাঁতের শাড়ির পাশাপাশি আছে ব্রাশ পেইন্ট, ব্লক আর কোটা শাড়ির আয়োজন। এ ছাড়া খুঁজলেই পেয়ে যাবেন এ দেশের অহঙ্কার জামদানি অথবা মনিপুরি। অনেক সময় এসব বিশেষ দিনে অনেকে আয়োজন করে থাকেন তাদের উৎসবের, এমন কোনো উৎসবের দাওয়াত যদি থাকে আপনার, পড়ে নিতে পারেন কাতান অথবা ভারী সিল্ক্ক। প্রকৃতি যে দিনটিতে অপরূপ রূপে সাজে, সে দিনটিতে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে বাধাহীনভাবে। হেমন্তের প্রতিষ্ঠিত কোন রং নেই তা বলা যাবে না। তবে অন্য কয়েকটি ঋতুর মাঝে হেমন্ত তেমনভাবে জাঁকজমকে পালিত নয়। তাই তো হেমন্ত বিস্তৃত প্রায়। ফ্যাশন সেক্টরে ধান, গাছের পাতা, আকাশের বিশালতা, পথের ধূসরতার রং ফুটিয়ে তুলেছে পোশাকে।

হলুদের রাজত্ব আছে হেমন্ত জুড়েই। তবে এ হলুদ সে হলুদ নয়। এ হলুদ কাঁচা হলুদের হতে পারে। পাকা ধানের রং মুগ্ধ করে এ সময়ে। সব খানেই প্রিয় ঋতুকে বরণ করে নেওয়ার উচ্ছ্বাস। যোগ হয়েছে আরও বেশ কিছু রং। আধা পাকা লেবুর রং অর্থাৎ সবুজাভ হলুদ, এসেছে বেশ কিছু পোশাকের নকশায়। আছে পলাশ ফুলের রং।

হেমন্তের ফুলে ফুলে সাজতে পারেন। চুল বেঁধে নিতে পারেন ফুল দিয়ে। দেশি গাঁদা, গোলাপের পাশাপাশি বিদেশি জারবারাও এখন বেশ জনপ্রিয় আমাদের দেশের সাজে। গোলাপ দিয়ে সাজাতে পারেন খোঁপা। লম্বা বেণির সঙ্গে বেশ মানিয়ে যাবে গাঁদা ফুলের মালা। হাতে পেঁচিয়ে নিতে পারেন একটি মালা। পরতে পারেন কাঠ, মাটি এমনকি রুদ্রাক্ষের গহনা। এমন দিনে ভারী গহনা পরতে চাইলে রুপার গহনা মানিয়ে যাবে বেশ। পরতে পারেন তামাটে অথবা ব্রোঞ্জের প্রলেপ দেওয়া ধাতুর গহনাও। কাচের চুড়ি অন্যতম অনুষঙ্গ। শাড়ির রং মিলিয়ে বেছে নিতে পারেন অথবা পরতে পারেন লাল কাচের চুড়ি। মানিয়ে যাবে যে কোনো রংয়ের পোশাকের সঙ্গে। কপালে যদি থাকে একটি টিপ, তাতে সাজ পাবে পূর্ণতা। এক রং টিপ নয়, শুধু পরে নিতে পারেন নকশা করা ক্যানভাস টিপ; যা আপনার সাজকে করে তুলবে অন্যদের থেকে আলাদা। পায়ে পরতে পারেন আলতা। আলতা রাঙা পায়ে নূপুর, দেশি নকশার শাড়ি, হাতভর্তি কাচের চুড়ি, খোলা চুলে বেরিয়ে পড়ূন প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে, হেমন্তকে স্বাগতম জানাতে।

ছবি তুলেছেন, মো: টুটুল হোসাইন

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930