মতামত

ঢাকাই সিনেমা আলোর মুখ দেখবে কবে?

ছবি: সংগৃহীত

মিলন মাহমুদ রবি

বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের ইতিহাস দীর্ঘ ও গৌরবের!

সিনেমা নিয়ে কথা না বললেই নয়। চলচ্চিত্রের ইতিহাস নিয়ে বলতে গেলে বাংলাদেশের ইতিহাস দীর্ঘ ও গৌরবের। দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের চলচ্চিত্র প্রযোজক এফ দোসানির পূর্ব পাকিস্তানে চলচ্চিত্র প্রযোজনার ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়ে জব্বার খান ‘মুখ ও মুখোশ’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তারপর থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নির্মাতারা এগিয়ে আসেন সিনেমা নির্মাণে। তৈরি হতে থাকে জনপ্রিয় সিনেমা। ঢাকাই সিনেমার সাফল্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বাইরেও সুনাম অর্জন করে।

ভারত পাকিস্তান ভাগ হয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের হলগুলোতে ভারতীয় বাংলা সিনেমা দেখানো হতো। নব্বই দশকের শেষের দিকে অধিক মুনাফার আশায় এক দল অসাধু প্রযোজক নির্মাণ করেন অশ্লীল সিনেমা। এ অশ্লিলের ঝড় ঢাকাই চলচ্চিত্রের শক্ত অবস্থান ভেঙে তছনছ করে দেয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে হল থেকে মুখ ফেরান দর্শকরা। যার প্রতিদান এখনও দিতে হচ্ছে চলচ্চিত্র জগতের।

ছবি: সংগৃহীত

ভালো ছবি কবে দেখা হয়েছে ঠিক বলতে পারবো না। যখনই কোন ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভালো সিনেমা দেখি (বাংলা, ইংরেজি বা হিন্দি) তখনই চিন্তায় পরে যাই আমাদের দেশে কেন এমন সিনেমা তৈরি হয় না। শুনেছি কোন একটা জাতির সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায় নাকি সেই দেশের শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্র ইত্যাদি দেখে। এদেশের শিল্প ও সাহিত্য বেশ উচুমানের। মঞ্চ নাটকের মানের কথা তো বলার প্রয়োজন হয় না। এতে করে বুঝতে বাকি নেই যে, আমাদের দেশে গুণীকাহিনীকার, অভিনেতার অভাব নেই। কিন্তু তারপরও  সিনেমার এই বেহাল দশা কেন? এ প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতেই থাকে!

দেখা মিলছে না মূল ধারার বাংলা সিনেমার। নাটকে, গল্পে, উপন্যাসে, কবিতায় তো খুব একটা পিছিয়ে নেই আমরা। তারপরও সেই হারে ভালো মানের সিনেমা উঠে আসছে না কেন? যাও হচ্ছে হাতেগুনে বলার মতো।

ছোট পর্দারও একই অবস্থা সব একই ঘরোনার নাটক। কেমন জানি নাটক বানালে হাসাতেই হবে। সেটা জোড় করে হলেও! কোন কোন বিভাগের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে হাসানো এখন নাটকের। অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। এমন প্রসংঙ্গ না টেনে নাটক বানালে কেমন জেন দর্শকশূন্য থাকে। নামগুলোও থাকে সব উদ্ভট টাইপের। এমন নাম চলচ্চিত্রের বেলায় অহরহ দেখা যায়।

সুস্থ বিনোদনের চর্চা থেকে ফিরে যাচ্ছি আমরা। রুচিসম্পন্ন দর্শকদের টার্গেট করে সিনেমা বানানো হয় বলে আমার মনে হয় না। মানুষ এখন অনেক রুচিশীল, রুচির সাথে পাল্লা দিয়ে হচ্ছে না চলচ্চিত্র নির্মাণ। মনের খোরাক মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে প্রযোজক ও পরিচালকরা। দেশে অনেক ভালো নির্মাতারা আছে যারা অনেক ভালো সিনেমা তৈরি করতে সক্ষম। কিন্তু সুযোগ অভাবে ঝরে পড়ছে তারা।

বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। একটা মুঠো ফোন যেখানে মনকে চাঙ্গা করে রাখে, অবাধ আকাশ পথ খোলা থাকায় দর্শক খুব সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন সিনেমা অনায়াসে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। সেখানে বাংলাদেশের সিনেমার এ বেহাল দশা আসলেই লজ্জার। দর্শক শূন্য প্রেক্ষাগৃহ থাকায় একের পর এক হল বন্ধ হতে শুরু করেছে। ১৪শ প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে এখন প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে মাত্র ৩৫০টি। এর মধ্যে সারা বছর চলে ২৫০টি। তবে কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল সিনেমা উপহার দিচ্ছেন। ডিজিটাল সিনেমা দর্শক আনন্দের সাথে দেখতে যায়। চলচ্চিত্রের মন্দা বাজারে ডিজিটাল সিনেমা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ছবি: হ্যালোটুডে

একটা ভালো বই, ভালো গান বা ভালো মানের নাটক দিয়ে মানুষের মনে যত না দাগ ফেলা যায়, একটি ভালো সিনেমা তার চেয়েও তীব্রভাবে মানুষের মনের মধ্যে দাগ কাটতে পারে। আর তাই, যখন দেখি দাগ কাটার মত তেমন কোন সিনেমা আমাদের দেশে তৈরি হচ্ছে না, তখন খুব আফসোস হয়। তাই ভালো মানের গল্পে সিনেমা বা নাটক তৈরি হলে দর্শক আবার দলবেধে পেক্ষাগৃহে যাবে বলে আমার ধারণা। ফিরবে তবে চলচ্চিত্রে সোনালী স্বপ্ন।

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031