শহীদ হাদিস পার্ক
বাংলাদেশের খুলনা জেলার খুলনা শহরের বাবুখান রোডে বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা শাখার পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত একটি পার্ক যা ১৮৮৪ সালে খুলনা পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে শহরবাসীর বিনোদনের জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ‘খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক’ নামে প্রতিষ্ঠা করে। পরে ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গণঅভ্যুত্থানের সময় আইয়ুব বিরোধী মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত শহীদ শেখ হাদিসুর রহমান বাবুরনামে নামকরণ করা হয়। শহীদ হাদিস পার্কে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আদলে নতুন শহীদ মিনার তৈরি করা হয়েছে।
হতিহাস কী বলে
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ‘খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্ক’ নামে এই পার্ক প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৯২৫ সালের ১৬ জুন অহিংস আন্দোলনের কান্ডারী মহাত্মা গান্ধী এই পার্কে ভাষণ প্রদান করেন এবং তাঁর সম্মানে পার্কটির নাম পরিবর্তন করে ‘গান্ধী পার্ক’ রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট দেশ বিভাজনের পর মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আবারো পার্কের নাম বদলে ‘জিন্নাহ পার্ক’ রাখা হয়। ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই পার্কের কাছেই পাকিস্তানি স্বৈরশাসক বিরোধী মিছিলে পুলিশের গুলিতে শেখ হাদিসুর রহমান বাবু শহীদ হন। পরেরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি শহীদ হাদিসের নামাজে জানাজা শেষে উপস্থিত জনতা “শহীদ হাদিস পার্ক” নামে পার্কটির নামকরণ করেন।
কে শেখ হাদিসুর রহমান?
শহীদ হাদিসের পুরো নাম শেখ হাদিসুর রহমান বাবু। তিনি ১৯৪৪ সালের ২১ এপ্রিল বাগেরহাট জেলার রণবিজয়পুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তারা ছিলেন ৪ ভাই, তিন বোনের ভেতরে ২ ভাই ও ২ বোন। এসএসসি পাশ করে আযমখান কমার্স কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য খুলনা এসেছিলেন হাদিস। পরিবারে অসচ্ছলতা থাকায় হাদিস শান্তিধাম মোড়ের হোয়াইট স্নো নামের একটি লন্ড্রিতে চাকরি করতেন। ১৯৬৯ এর আইয়ুব বিরোধী গণআন্দোলন শুরু হলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২১ ফেব্রুয়ারি খুলনা নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল এসে মিউনিসিপ্যাল পার্কে সমবেত হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় একটি মিছিল হাজী মহসিন রোড দিয়ে আসার সময় পৌরসভার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অবাঙালী আফজাল কাহুতের বাসভবনের সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। পুলিশ গুলি চালালে শহীদ হন হাদিসুর রহমান বাবু। হাদিসুরের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শহর জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে শহীদ হন আলতাফ ও প্রদীপ।
তৎকালীন জেলা প্রশাসন গোলাগুলির পরেই খুলনায় কারফিউ জারি করে। পরেরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি এক ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। এই এক ঘন্টায় ছাত্র নেতৃবৃন্দ জড়ো হন মিউনিসিপ্যাল পার্কে। এক অনির্ধারিত সভায় তৎকালীন ছাত্রনেতা ও বর্তমান দৈনিক পূর্বাঞ্চল সম্পাদক আলহাজ্ব লিয়াকত আলী, দৈনিক জন্মভূমি সম্পাদক মরহুম হুমায়ুন কবির বালু ও মরহুম হেকমত আলী ভুইয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ পার্কের নাম বদলে শহীদ হাদিসের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী দ্রুত সাদা কাগজ ও কালি কিনে আনা হয়। ওই সময়কার ছাত্রনেতা লিয়াকত আলী নিজে কালি দিয়ে লেখেন ‘শহীদ হাদিস পার্ক’। কয়েকজন মিলে কাগজের তৈরি সাইনবোর্ড ধরে ছবিও তোলেন। সেই ছবি ছাপা হয় দি ওয়েব পত্রিকায়। এরপর মুখে মুখে শহীদ হাদিস পার্কের নাম ছড়িয়ে পড়ে। এই সময় তৎকালীন পৌরসভা মিলনায়তনের নামকরণ করা হয় শহীদ আলতাফ মিলনায়তন।
শহীদ মিনারের উন্নয়ন প্রকল্প
১৯৭৪ সালে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন তৎকালীন খুলনা পৌরসভার চেয়ারম্যান ও ভাষাসৈনিক গাজী শহিদুল্লাহ।
খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কের শহীদ মিনার আধুনিকায়নের প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর শহীদ মিনারের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় আট কোটি ৪১ লাখ টাকা। শহীদ মিনারটির আয়তন ছয় হাজার ৮৬০ বর্গফুট। ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় শহীদ মিনার।
তথ্য: ইন্টারনেট
Add Comment