গল্প

“অগ্রযাত্রা”

প্রতীকী ছবি

-আবু সাঈদ আহমেদ

মা আজ জিডিপি’র গ্রোথ রেটের সাথে মাথাপিছু আয়ের ভুনা রান্না করেছেন। ফ্রিজে একটু স্যাটেলাইট ভাজি ও সাবমেরিন ভর্তা ছিলো। মা উন্নয়নের আঁচে ওসব গরম করেছেন। আহ, কি ঘ্রাণ!

ভুনা, ভাজি আর ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে খেতে মনটা চিন্তায় আচ্ছন্ন হলো। বাইরে বৃষ্টি নেমেছে, তুমুল বৃষ্টি। চিন্তা হচ্ছে পদ্মা সেতুর স্প্যানটা ঠিক সময়মত বসবে তো! প্রকৃতিও দেখি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।

টকশোর চাটনি দিয়ে পত্রিকার কলামের সালাদ মাখাতে মাখাতে মা বললেন, ষড়যন্ত্র কে করছে তা বোঝা যাচ্ছেনা, তবে ষড়যন্ত্র যে হচ্ছে এটা বোঝা যাচ্ছে। আম্মুর কথায় বাধা দিয়ে চাচ্চু বললেন, ভাবী মিক্সড সালাদে ক’চামচ বিটিভি প্রতিবেদন মাখাতে ভুলো না, খুব টেশ।

সালাদে বিটিভি প্রতিবেদন মাখাতে মাখাতে মা বললেন, বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহর লেক সিটি হয়ে যায়, ষড়যন্ত্রকারীরা বলে জলাবদ্ধতা। কারো জ্বর হলেই বলে ডেঙ্গু। ভাবা যায়!

বাবা শোনালেন আরও ভয়ের কথা, দেশে না কি অনেক গরীব ঢুকে পরেছে। রোহিঙ্গাদের তো তবু চেনা যায়, গরীবদের আলাদা করে চেনা যায়না। এরা এদেশের মানুষের মত, এদের বাপ-দাদারা না কি এদেশে ছিলো। এদের আলাদা করা খুব কঠিন। এরা ডায়েট করে, অথচ বদনাম রটায় যে খেতে পায়না।

চাচ্চা খুব আয়েশ করে একটুকরো উন্নয়ন চিবুতে চিবুতে বললেন, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় আমরা ওদের নেবো না। ওরা আমেরিকাগামী ল্যাপটপ রপ্তানীর জাহাজে হাহাকার ভরে দেবে। ওরা আমাদের টেমসের পানি দূষিত করে দেবে। ওরা আমাদের লাসভেগাস গড়তে দেবেনা।

‘দেশে কোনো গরীব নেই’ মার্কা ঘড়ির নিচে দু’টো টিকটিকি বিভ্রান্ত, তারা রোহিঙ্গা না গরীব বুঝতে পারেনা, তাদের ঠাণ্ডা রক্ত আরও ঠাণ্ডা হয়ে আসে।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930