আজ ২২ শে শ্রাবণ, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবস
১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ জাপানী জাহাজ তোসামারু তে করে জাপানের পথে আমেরিকা যাত্রা করেন, সংগে অ্যন্ড্রুজ, পিয়ারসন ও তরুণ ছাত্র মুকুল দে! সিংগাপুর ছেড়ে হংকং যাবার পথে চীন সাগরে জাহাজ প্রচন্ড ঝড়ের মধ্যে পড়েছিল এই দিন রাত্রে। রবীন্দ্র নাথ নানা স্থানে তার বর্ণনা দিয়েছেন, সেই ঝড়ের মধ্যে গান গাওয়া, ঝড়ের মধ্যে গান রচনা। প্রথম বর্ণনা পাই রথীন্দ্রনাথ কে লেখা চিঠিতে। (৯ ই জ্যৈষ্ঠ ১৩২৩) কাল থেকে খুব বৃষ্টি বাদল ঘনিয়ে এসেছে তাই আজ সকালেও হংকংয়ে জাহাজ পৌঁছাল না। হয়ত ও বেলায় পৌছাঁতেও পারে। আমি পারৎপক্ষে কেবিনে শুইনে- ডেকে শুয়ে শুয়ে এমন অভ্যেস হয়ে গেছে যে নীচে এলে প্রাণ হাঁপিয়ে উঠে!
কাল রাত্রে এমনি বৃষ্টি এল যে কোথাও একটু আড়াল পাওয়া যাবে খুঁজে পাওয়া গেল না। অনেক ক্ষণ পর্যন্ত বিছানাটাকে এধার থেকে ওধার এপাশ থেকে ওপাশ টানাটানি করে ফিরলুম- তারপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান গেয়ে রাত যখন দেড় টা হল তখন অন্য উপায় না দেখে কেবিনে এসে শুলুম।
জাপান যাত্রীতে লিখেছেন: ৯ই জ্যৈষ্ঠ। কাল সমস্ত রাত বৃষ্টি বাদল গিয়েছে কাল বিছানা আমার ভার বহন করেনি, আমি-ই বিছানা টাকে বহন করে ডেকের এধার থেকে ওধারে আশ্রয় খুঁজে খুঁজে ফিরেছি। রাত যখন সাড়ে দুপুর হবে, তখন এই বাদলের সংগে মিথ্যা বিরোধ না করে তাকে প্রসন্ন মনে মেনে নেবার জন্য প্রস্তুত হলুম। একধারে দাড়িঁয়ে ওই বাদলার সংগে তান মিলিয়েই গান ধরলুম- শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝড়ে। এমনি করে ফিরে ফিরে অনেকগুলো গান গাইলুম, বানিয়ে বানিয়ে একটি নতুন গান ও তৈরী করলুম, কিন্তু বাদলের সংগে কবির লড়াইয়ে এই মর্ত্যবাসীকের হার মানতে হল। আমি অত দম পাব কোথায়, আর আমার কবিত্বের বাতিক যতই প্রবল হোক না, বায়ু বলে আকাশের সংগে পেরে উঠব কেন !
(তথ্য সুত্র গানের পিছনে রবীন্দ্র নাথ)
-শুভ্রা নীলাঞ্জনা
Add Comment