কুষ্টিয়ার হরিপুরের ভাতওয়ালা ঝন্টু মিয়া। স্বল্প আয়ের সহজ সরল মনের মানুষ তিনি। তাঁর জীবনের গল্প শুনেছেন, এস আই সুমন।
খাঁ খাঁ রোদ কিংবা ঝড়, বৃষ্টি কখনো বা হাড় কাপানো শীত সব কিছু উপেক্ষা করে মাথায় বাঁশের তৈরি ঝুড়ি নিয়ে পেটের তাগিদে ছুটে চলতে দেখা যায় আমাদের সকলের পরিচিত মুখ ঝন্টু মিয়া (৫৫)। গ্রাম থেকে শহরে যারা দোকানপাট, ব্যবসা বাণিজ্য কিংবা চাকরি করেন তাদের দুপুরের খাবার বাড়ি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে যথাসময়ে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়াই তার মূল কাজ। যখন সেতু ছিলো না তখন তিনি নদীর উত্তপ্ত বালির উপর হেঁটে হেঁটে ভাতের পাত্র বাঁশের ঝুড়িতে করে নৌকা পাড় হতেন। তাঁর কষ্টের সামান্য আয় দিয়ে কোনরকম পরিবার চলতো। পরিবারের সকলের মুখে দু মুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্যই তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা। জীবন সংগ্রামের যুদ্ধে কখনোই নিজের মধ্যে লোভ, লালসা, হিংসা বিমুখ আর নিরহংকার ও সাদামাটা সরল মনের মানুষ ছিলেন ঝন্টু মিয়া।
যখন হরিপুর কুষ্টিয়া সংযোগ সেতু বাস্তবায়ন হয়নি তখন তিনি ভাতের বাটিগুলো পৌঁছে দেওয়ার পর অবশিষ্ট সময়ে করতেন খেয়া ঘাটের কুলির কাজ। সেতু হওয়ায় সেই বাড়তি আয়েও ভাটা পড়েছে। বর্তমানে অভাব অনটন নিত্য দিনের সঙ্গী হলেও শত অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে জীবন সংগ্রামী মানুষটির মুখের হাঁসিটা যেনো কোটি টাকার সম্পদ। অর্থ আর বিত্ত থাকলেই যে মানুষ সুখী হয় সেই প্রবাদ মিথ্যা মনে হয় ঝন্টু মিয়ার হাঁসি ভরা মুখ দেখলেই। অন্য কোন পেশায় অনভিজ্ঞ হওয়ায় এই কাজটাই ঝন্টু মিয়ার কাছে জীবন জীবিকা চালানোর একমাত্র উপায়। ভরদুপুরে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি বাড়ি থেকে বাঁশের ঝুড়ি করে ভাতের বাটিতে ভাত নিয়ে যথা সময়ে গৌন্তব্য পৌঁছে দিতে ব্যস্ততার ছাপ ঝন্টু মিয়ার চোখে মুখে যেন লেগেই থাকে।
কথা হয় ঝন্টু মিয়ার সাথে। হাঁসি ভরা মুখেই তিনি বলেন, “বাড়ি বাড়ি থেকে ভাত নিয়ে দোকানে দোকানে ঠিক সময়ে দিতি হয়। সারাদিনে যে কয় ট্যাকা কামাই করি তাই দিয়ে সংসার চলাতে কষ্ট হয়। তাও এই কামই করতি হয়। অন্য কাম করতি পারিনি। কয়দিন আগে ভ্যানে করি তরকারি বেস্তে চালাম! ভ্যান তো চালাতি পারিনি তাই এই কামই করতি হয়। কি আর করবো রে বাপ!! কাম তো করতি হবি। আমার ইচ্ছা যতদিন বাঁচবো হালাল কামাই করি যাবো “কথাগুলো বলতে বলতেই আবারও ছুটতে শুরু করেন ভাতওয়ালা ঝন্টু মিয়া। ঝন্টু মিয়া মূর্খ্য ও অক্ষর জ্ঞান না থাকলেও তাঁর মাঝে যে শিক্ষা বা আর্দশ রয়েছে সেটা নামী দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্জিত শিক্ষা অতিশয় ক্ষুদ্র। তাঁর এমন সৎ প্রচেষ্টা আর ভালো কাজ করে যাওয়া আমাদেরকে ভালো পথে পরিচালিত করবে এমনটাই বিশ্বাস সকলের।
Add Comment