হ্যালোডেস্ক
এক হিন্দু ব্যবসায়ী মার্বেল পাথর দিয়ে বৃন্দাবনে তার আরাধ্য দেবতার মন্দির বানানোর জন্য তাজমহলের দাম হেকে ছিলেন দু’লাখ টাকা। বিক্রি হয়নি এতো কম টাকায়। কিন্তু আগ্রা দুর্গের ভেতরের অত্যন্ত সুন্দর মোতি মসজিদ বিক্রয় হয়ে যায় মাত্র সাড়ে ১২ হাজার পাউন্ডে। তখন মোতি মসজিদ, তাজমহল সহ অসংখ্য স্থাপত্য নির্মানে বহুমূল্য শ্বেত মর্মর পাথরের ব্যবহার করেন সম্রাট শাহজাহান।
১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের পুত্র শাহজাহান জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয় খুররম। ‘শাহজাহান’ উপাধিতে ভূষিত হন মেবার এবং আহমদনগর অভিযানে তাঁর সাফল্যের পর। ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রশ্নে তাঁর জীবিত দুই পুত্র শাহজাহান ও শাহরিয়ারের মধ্যে এক দ্বন্দ্ব সংঘটিত হয়। শ্বশুর আসফ খানের কূটনৈতিক কৌশলের বদৌলতে ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে ‘আবুল মুজাফ্ফর শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ শাহজাহান’ উপাধি নিয়ে শাহজাহান আগ্রার সিংহাসনে আরোহণ করেন। শাহজাহানের যুগে মুঘল স্থাপত্য এর স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। পূর্ববর্তী মুঘল সম্রাটদের নির্মাণশৈলী থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন শাহজাহান। তার স্থাপনায় রঙ আর আড়ম্বরের প্রাচুর্য ছিল লক্ষণীয়, অবকাঠামোগত দিক দিয়েও ছিল এসব স্থাপনা ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি উন্নত। বিদেশী স্থাপত্যরীতির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় তার নির্মাণে। শাহজাহানের পূর্বে স্থাপত্যশিল্পে লাল পাথরের ব্যবহার ছিল বেশি। এর সাথে সম্রাট বহুমূল্য শ্বেত মর্মর পাথরের ব্যবহার শুরু করেন। কোনো কোনো শিল্প সমালোচকের মতে এই ধারা ভারতীয় প্রচলিত প্রথা থেকে সরে আসা হলেও সৌন্দর্যের বিচারে তা ছিল তুলনাহীন। সম্রাট জাহাঙ্গীর যেমন চিত্রকলায় পারদর্শী ও সুবিখ্যাত ছিলেন, তার পুত্র শাহজাহান তেমনি পারদর্শী ছিলেন স্থাপনাশিল্পে।
শাহজাহানের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি তার প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজ মহলের সমাধির উপর নির্মিত জগদ্বিখ্যাত ‘তাজমহল’। ১৬৩১ সালের জুন মাসে দাক্ষিণাত্যের বুরহানপুরে সম্রাটের ১৪তম সন্তানকে প্রসবকালে মমতাজ মৃত্যুবরণ করেন। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে ১৪ বছরের ইরানী কিশোরী মমতাজের দৈহিক সৌন্দর্য্য শাহজাহানকে বিমোহিত করে ফেলেছিল। তাই তিনি এ কিশোরীর সাথে বাগদান সম্পন্ন করেন, কিন্তু তাকে বিয়ে করে ঘরে তুলে নেননি। বরং মমতাজকে ঝুলিয়ে রেখে শাহজাহান আরেক নারীকে বিয়ে করেন। সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের প্রেম কাহিনী যতটা আলোচিত ততটাই আলোচিত যে, মমতাজ আসলে সম্রাট শাহজাহানের কততম স্ত্রী। মমতাজ ছিলেন সম্রাট শাহজাহানের ২য় স্ত্রী। কোথাও বলা হয়েছে মমতাজ শাহজাহানের ৩য় স্ত্রী, কোথাও বলা আছে ৪র্থ স্ত্রী। আসলে কততম স্ত্রী তা কোথাও সঠিকভাবে বলা নেই। শাহজাহানের বয়স তখন ২০ বছর। একদিন আগ্রার বাজার দিয়ে যাওয়ার পথে হঠাৎ শাহজাহানের চোখ চলে যায় পরমা সুন্দরী এক মেয়ের দিকে। আরজুমান্দ বেগম নামের মেয়েটির বয়স ১৪। প্রথম দেখাতেই আরজুমান্দ বেগমকে ভালো লেগে যায় শাহজাহানের। পরবর্তীতে ১৬১২ খ্রিস্টাব্দের ১০ মে মমতাজের বিয়ে হয় যুবরাজ সম্রাট শাহজাহান সঙ্গে। আরজুমান্দ পরিবর্তন করে শাহজাহান তার নাম রাখেন মমতাজ মহল।
কিন্তু বিয়েতে এ একবছর দেরি করার কারন হলো রাজনৈতিক কারণে পারস্যের রাজকন্যাকে বিয়ে করেন সম্রাট শাহজাহান। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে মমতাজ মহল মারা যান। বলা যায়, শাহজাহান নিজে মমতাজের মৃত্যুকে ডেকে এনেছিলেন, বোধহীনের মতো এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গর্ভবতী মমতাজকে সঙ্গে নিয়ে তিনি যুদ্ধযাত্রা করেন। দুর্গম রাস্তা দিয়ে হাতির পিঠে বসে দীর্ঘক্ষণ চলার দরুন সময়ের আগেই মমতাজের প্রসববেদনা শুরু হয়। দীর্ঘ ৩০ ঘন্টার সেই প্রসবব্যথা শেষে সন্তান জন্ম দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মমতাজ, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে। শাহজাহান তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন, মমতাজের মৃত্যুর পর আক্ষেপ, অনুতাপে সাতদিন সাতরাত শাহজাহান কিছু খাননি। ঘর থেকেও বার হননি। স্ত্রী হারানোর শোকে মুহ্যমান শাহজাহান তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতির জন্য একবছর পরেই নির্মাণ শুরু করেন ভালবাসার এক অপরূপ নিদর্শন তাজমহল। কি গভীর প্রেম!!! সবই ঠিক ছিলো কিন্তু একটি প্রশ্ন রয়ে গেছে, এ প্রেম কতটা নির্ভেজাল? শোনা যায় শাহজাহানের সাথে বিয়ে হওয়ার আগেও মমতাজের বিয়ে হয়েছিল এবং সম্রাট শাহজাহান মমতাজের সেই স্বামীকে হত্যা করে তারপর মমতাজকে বিয়ে করেছিল। শুধু তাই নয় মমতাজের আগেও সম্রাট শাহজাহানের আরও ১ জন স্ত্রী ছিলেন এবং মমতাজকে বিয়ে করার পরও সম্রাট শাহজাহান আরও তিনটি বিয়ে করেন। এমনকি মমতাজ মারা যাওয়ার পর শাহজাহান মমতাজের আপন ছোট বোনকে বিয়ে করেন। সম্রাট শাহজাহান নিজের মেয়ে জাহানারার প্রেমকে জঘন্য উপায়ে কবর দিয়েছিলেন। জাহানারা যার প্রেমে পড়েছিলেন শাহজাহান তাকে একেবারেই পছন্দ করেননি। কিন্তু বিদূষী জাহানারা প্রেমে অটল ছিলেন। তাঁর প্রেমিক লুকিয়ে তাঁর সাথে দেখা করতে আসতো। শাহজাহান একদিন মেয়ের প্রেমিককে আটক করতে সক্ষম হন। তারপর মেয়ের চোখের সামনেই মেয়ের সেই প্রেমিককে তক্তা দিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে পেরেক গেঁথে গেঁথে খুন করেন ‘প্রেমের’ তাজমহলের নির্মাতা শাহজাহান। যমুনার তীরে তখন তাজমহলের নির্মাণ কাজ চলছিল।
অনেক ইতিহাস গবেষকের মতে সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল তৈরির পেছনে মমতাজের প্রতি প্রেমের কোন স্পর্শই ছিলো না। শাহজাহান ছিলেন স্থাপত্য নির্মানে ব্যাপক আকুল, বলা যায় এটা তার নেশায় পরিণত হয়েছিলো। তার ধ্যানে মনে কামনা ছিলো তিনি এমন অপরূপ এক স্থাপত্য তৈরি করবেন যা তার নামকে অমর করে রাখবে শতাব্দীর পর শতাব্দী। মমোতাজের মৃত্যু ছিলো তার এই স্বপ্ন পূরনের অসিলা মাত্র, কোন প্রেম নয়। তাজমহল নির্মানে শাহজাহান বিপুল অর্থ ব্যয় করেন যার ফলে রাজকোষ খালি হয়ে যায়, প্রজাদের কাছ থেকে কড়ায়গণ্ডায় কর আদায়ের ফলে সাম্রাজ্যে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। কেন এতো ব্যয় হলো? কি দিয়ে নির্মাণ তাজমহল? কিভাবে তৈরি করা হয়েছে? তাজমহল নির্মানে প্রেমীক শাহজাহান কিভাবে নিষ্ঠুর হয়েছিলেন? তাজমহল কেন আগ্রায় তৈরি হলো? তাজমহল নিলামে কে তুলেছিলো? এসব আলোচনায় আসার আগে বর্তমানে ভারতে তাজমহল নিয়ে একশ্রেণীর উগ্রবাদী হিন্দু গোষ্ঠীর অপরাজনীতি এবং তাদের উস্কানি দেওয়া কিছু নগ্নতা দেখে নেই। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) বিধায়ক সঙ্গীত সোম বলেছেন, ‘তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতিতে কলঙ্কের চিহ্ন।’ তাজমহলের নাম বদলে ‘তেজো মহল’ করার দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদ তথা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা বিনয় কাটিয়ার। তার দাবি, ‘মন্দির ভেঙেই তাজমহল বানানো হয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন “বিশ্বাসঘাতকরা’ এই তাজমহল তৈরি করেছে”।
সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) বিধায়ক সঙ্গীত সোম বলেছেন, ‘তাজমহল ভারতীয় সংস্কৃতিতে কলঙ্কের চিহ্ন।’ তাজমহলের নাম বদলে ‘তেজো মহল’ করার দাবি তুলেছেন বিজেপি সাংসদ তথা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা বিনয় কাটিয়ার। তার দাবি, ‘মন্দির ভেঙেই তাজমহল বানানো হয়েছে।’ তিনি আরো বলেছেন “বিশ্বাসঘাতকরা’ এই তাজমহল তৈরি করেছে”। তার দাবি জয়পুরের রাজার জমি জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে সেই জায়গায় তৈরি হয়েছে তাজমহল। কয়েকটি গোষ্ঠি তাজমহল শিব মন্দির বলেও দাবি করে আসছিল। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের সরকারি পর্যটন সূচি থেকে তাজ মহলকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে কি বাবরি মসজিদের মতোই ধ্বংস হতে পারে তাজমহলও!!!
তথ্য: ইন্টারনেট
আমাদের সাখে সংযুক্ত থাকতে লাইক বাটনে ক্লিক করুন আর জানুন অজানা ইতিহাস।
Add Comment