-ফারজানা রহমান তাজিন
শীতের আর্দ্র আবহাওয়াতে শিশুর ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক ও নিষ্প্রাণ। ত্বক হয় খুব সংবেদনশীল এবং স্পর্শকাতর। অন্য ঋতুর চাইতে শীতকালে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা। শিশু অবস্থায় নিউমোনিয়া, সর্দিকাশি খুব কমন একটি সমস্যা। তাই শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে বাবা মাকে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। যে কোনো ধরনের অসাবধানতা থেকে শিশুদের ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। তাই এই শীতে শিশুর জন্য অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি যত্ন নিন।
নবজাতক শিশু মায়ের পেটে উষ্ণ তাপমাত্রায় থাকে। তাই পৃথিবীর তাপমাত্রায় সে শীত অনুভব করে। তা ছাড়া শিশুর শরীরে তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি হতেও সময় লাগে। তাই যে শিশু কিছুদিন হল পৃথিবীতে এসেছে তাকে উষ্ণ তাপমাত্রায় রাখুন। যদি ঘরের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি হয়, তবে সুতিকাপড় পরিয়ে কাঁথা দিয়ে মুড়ে রাখুন। এই মাত্রার নিচে হলে সোয়েটার ব্যবহার করতে পারেন। শিশুকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ান। বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে। যদি পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো আত্মীয়ের সর্দি, কাশি, ভাইরাস জ্বর ইত্যাদি থাকে তবে তারা মা ও শিশুর কাছে আসা থেকে বিরত থাকুন।
বাচ্চাদের শীতকালে আরও বেশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। অনেকেই শীতকালে বাচ্চাদের গোসল করাতে ভয় পান কিন্তু তা ঠিক নয়। শিশুর শরীরের তেল ও ময়লা ধুয়ে ফেলতে গোসল করানো জরুরী। গোসলের জন্য প্রয়োজনীয় হালকা গরম পানি, নরম কাপড় বা স্পঞ্জ, তোয়ালে, ভ্যাসলিন, ডায়াপার ইত্যাদি সব হাতের কাছে গুছিয়ে নিয়ে গোসল করাতে বসুন। শিশুর ত্বক শুষ্ক থেকে আর্দ্র করার প্রক্রিয়াকে ময়েশ্চারাইজার বলে। গোসলের পর বাচ্চাদের উপযোগী অলিভ ওয়েল অথবা ময়েশ্চারাইজিং বেবি লোশন ব্যবহার করুন। শিশুকে গোসল করানোর পর নরম কোন বেবি টাওয়েল দিয়ে শরীর মুছিয়ে তারপর মশ্চারাইজার লাগান। শিশুকে প্রয়োজন অনুযায়ী উষ্ণ রাখুন। ঠাণ্ডা পরিবেশে না রাখাই ভালো। স্যাঁতসেঁতে ঘরেও তাকে রাখা ঠিক হবে না।
খেয়াল রাখুন শিশুর ডায়েটে। বাচ্চাকে বুকের দুধ নিয়মিত খাওয়ান। ফিডারে খাওয়ালে অল্প গরম দুধ দিন। ঘুমের মধ্যে ঠাণ্ডা দুধ দেবেন না।
ছয় মাসের বেশি হলে বাচ্চাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবার দিন। খিচুড়িতে ডিমের সাদা অংশ, লাল শাক, পালং শাক অল্প করে দিতে পারেন। এতে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়বে।
প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যেন থাকে ওর ডায়েটে। শীতকালে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু জাতীয় ফল, টোম্যাটো, পেঁপে, সবুজ শাকসব্জি খেতে দিন শিশুকে। জলের পরিমাণ বেশি এমন সব্জি যেমন পেঁয়াজ, ব্রকোলি, ফুলকপি, পুদিনা, আদার পাশাপাশি কাজু, বাদাম, আমন্ড, পেস্তার মতো ড্রাই ফ্রুট খেতে দিন।
শিশুদের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। শীতকালে যেন অবশ্যই আপনার শিশুর ৮ ঘণ্টা ঘুম হয় সে দিকে খেয়াল রাখুন। শিশুকে অতিরিক্ত সোয়েটার পরিয়ে রাখবেন না। এতে ঘাম জমে সেই ঘাম শীতকালীন ঠাণ্ডা বাতাসে শুকিয়ে শিশুর সমস্যা তৈরি করতে পারে। শিশুর গায়ে বেবি-অয়েল বা ভ্যাসলিন ব্যবহার করুন। শিশুকে রাতের বেলা ডায়াপার পরিয়ে শোয়ান শিশুর নাক বা মুখের ওপর কাপড়, লেপ, কম্বল ইত্যাদি দেবেন না। শিশুর লেপ, তোশক, কম্বল, চাদর ইত্যাদি রোদে দিতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর তা ঝেড়ে ঘরে রাখতে হবে। আর ধুলাবালি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এসবের ওপর কাপড়ের কভার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
Add Comment