হ্যালোডেস্ক
গত বছর শিল্পাঙ্গন(Center for Bangla Creative Works) নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় প্রথমবারের মত বাংলার চিরন্তন নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে দর্শক, বোদ্ধা, শিল্পী ও পৃষ্ঠপোষকবৃন্দের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার শিল্পাঙ্গনের উদ্যোগে লং আইল্যান্ডের লেভিটটাউন কমিউনিটি হলের মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো জমজমাট নবান্ন উৎসব। এদিন, তারকাসমৃদ্ধ উৎসবের অনুষ্ঠানমালা দিনভর হলভর্তি দর্শক রুদ্ধশ্বাসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন।
শিল্পাঙ্গন নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সাধনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা ও উপস্থাপন করে থাকে। শিল্পাঙ্গনের মেধাবী ও পেশাদার শিল্পী, পৃষ্ঠপোষক, উপদেষ্টা ও কর্মীবৃন্দের সম্মিলিত ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল হিসেবে অনবদ্য নবান্ন উৎসবের সূচনা হয় বেলা একটায় প্রদর্শনী ও পিঠা উৎসবের মাধ্যমে। উত্তর আমেরিকার প্রখ্যাত বিপণি প্রতিষ্ঠান ও রেস্তোরাঁর শাড়ি, গয়না ও খাবারের মেলা সুধীজনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বিকেল সাড়ে ৩টায় নবান্ন উৎসবের শুভ উদ্বোধন করা হয় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মাধ্যমে। প্রবাসের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা ও আবৃত্তিশিল্পী সাবিনা শারমিন নিহার ও লিপি দেওয়ানের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় উৎসবের সূচনা হয় মঞ্চে। “আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে” গানের সঙ্গে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে নবান্ন উৎসবের উদ্বোধন করেন শিল্পাঙ্গনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রেজিনা কবির। এর আগে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে ফালাহ আহমেদ ও আকতার কামাল শিল্পাঙ্গনের উত্তরীয় পরিয়ে দেন। নবান্ন উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক শাহপার খান ডানা’র স্বাগত বক্তব্যের পর অতিথি রেজিনা কবির সকলকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। শিল্পাঙ্গনের পক্ষ থেকে সভাপতি আমর আশরাফ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরই সঙ্গে শিল্পাঙ্গনের নবান্ন উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়।
মাঝখানে ১০ মিনিটের বিরতি ছাড়া রাত ১০টা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। শিল্পাঙ্গনের নিজস্ব পরিবেশনার পাশাপাশি আমন্ত্রিত তারকা শিল্পীদের পরিবেশনা এক ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরি করে উত্তর আমেরিকার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে। শিল্পাঙ্গনের গুণী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারপ্রাপ্ত শিল্পীরা একে একে পরিবেশন করেন কবিতা ‘জিহ্বা, নৃত্য “চল বাংলাদেশ”, পুঁথি “নবান্নের বিয়ে”, কাব্যালেখ্য “আনন্দধারা”, গীতিনাট্যালেখ্য “বৃষ্টির প্রতীক্ষায়”, নৃত্যালেখ্য “উৎসবে ও আনন্দে নবান্ন”, এবং নবান্নের বিশেষ আলেখ্যানুষ্ঠান “সদা থাকো আনন্দে”।
শিল্পাঙ্গনের শিল্পীবৃন্দের মাঝে ছিলেন জিনাতুন নাহার হেরা, জাহিয়া হাসান, নুসায়বাহ কবির, সামায়রা মাহিবা, সোনিয়া হক, সোনিয়া পান্না, শিরীন আখতার, আফরিন খান, ফাহমিদা ইয়াসমিন এ্যনি, ইশরাত কুমু, ছন্দা খান, ফারজানা সুলতানা শরমিন, শাহপার ইসলাম সিমি, মাহনাজ হাসান, সামিনা আশরাফ, সায়েম শাহরিয়ার, মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, শাহপার খান ডানা, তাহরিনা পারভীন প্রীতি, রাফিয়া খান নিশি, অশোক চৌধুরী, শফিউল আলম, মোহাম্মদ শানু, লতিফুর রহমান, আহমেদ নাসিম, সৌগত সরকার এবং বিদিশা দেওয়ানজী।
গীতিনাট্যালেখ্যর পরিকল্পনা, পরিচালনা ও শিল্পাঙ্গনের ভাব-সঙ্গীতের সুর করেন বিদিশা দেওয়ানজী। শিল্পাঙ্গন একাডেমি সঙ্গীত বিভাগের প্রশিক্ষণ ও আলেখ্যানুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন প্রথিতযশা শিল্পী অনুপ বড়ুয়া।
শিল্পাঙ্গনের পরিবেশনার পাশাপাশি মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন আমন্ত্রিত বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ। আমর আশরাফের পরিকল্পনায় কবিতা পাঠের আসর “কবিতা আমার প্রাণ”-এ অংশ নেন শরফুজ্জামান মুকুল, গোপন সাহা, মঞ্জুর কাদের, বাশিরুল হক, রেজাউল করিম এবং হুসেন শরীফ আহমেদ। উপস্থাপনা করেন ডিনু ইসলাম।
নবান্ন উৎসবের প্রধান আকর্ষণ ছিল কয়েকজন তারকা শিল্পীর অসাধারণ পরিবেশনা। প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী প্রিয়া ডায়েস শিল্পাঙ্গন একাডেমি নৃত্য বিভাগের প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পরিকল্পনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ ও নবান্নের উপর ভিত্তি করে এক অতুলনীয় নৃত্যালেখ্য উপস্থাপন করেন। মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার ও চলচ্চিত্রের প্রথিতযশা শিল্পী শিরীন বকুল একাধারে আবৃত্তি ও শ্রুতি নাটকে মনোমুগ্ধকর অভিনয় করেন। নবান্ন উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন দু’জন বিখ্যাত শিল্পী। ধ্রুপদী ও আধুনিক গানের মিষ্টিকণ্ঠ কৃষ্ণা তিথি এবং বাংলা ধ্রুপদী সঙ্গীতের প্রবাদপুরুষ শিল্পী অনুপ বড়ুয়ার সুরের জাদুতে হারিয়ে যান সকল দর্শক। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন তবলায় তপন মোদক, কী বোর্ডে মাসুদ, অক্টপ্যাডে সজীব মোদক, এবং গীটারে আকাশ আহসান।
নবান্ন উৎসবে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, স্টেট গভর্নর এন্ড্রু কুমো, ইউএস সিনেটর জিলিব্র্যান্ড, কাউন্টি এক্সিকিউটিভ লরা করেন, সিটি মেয়র বিল ডে ব্লাজিও এবং কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা। নাসাউ কাউন্টি থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় প্রতিথযশা নাট্যশিল্পী রেখা আহমেদ এবং প্রখ্যাত তবলা বাদক তপন মোদককে।
এ উৎসবের আহ্বায়ক ছিলেন শাহপার খান ডানা, সদস্য সচিব আকতার কামাল। পৃষ্ঠপোষক ও আবৃত্তি সমন্বয় করেন আমর আশরাফ, প্রদর্শনী সমসন্বয় ফালাহ আহামেদ, মঞ্চসজ্জ্বা ও স্মরণিকার প্রচ্ছদ করেন বাশিরুল হক, মিলনায়তন সজ্জা আহমেদ নাসিম, পোশাক সমন্বয় সোনিয়া হক, আলো ও শব্দ সমন্বয় জাওয়াদ হোসেন হাসিব, রেস্তোরাঁ সমন্বয় ম ম জসীম, আলো ও শব্দ সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণ বিডি সাউন্ড (নিবিড় খান), মিলনায়তন ব্যবস্থাপনা স্বপন কবির, সংবাদ মাধ্যম সমন্বয় মাহবুব রশীদ, আপ্যায়নের দায়িত্বে সোনিয়া পান্না, ছাপাখানা ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, পোশাক সরবরাহ বিপ্লব সাহা, বিশ্বরঙ। আরো সহযোগিতা করেন মীরা রহমান, রেজা খান, মুস্তফা মোর্শেদ, এবং লতিফ রহমান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমন্বয়, গ্রন্থণা, শিল্পাঙ্গনের গীতরচনা, নাট্যরচনা ও প্রকাশনা সম্পাদনা করেন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।
তথ্য: বিডি প্রতিদিন
Add Comment