ইতিহাস-ঐতিহ্য

বাংলার বাদশাহ দাউদ শাহ কররানীর করুণ পরিণতি

হ্যালোডেস্ক

১৫৭৫ সালের ১২ এপ্রিল বাংলার শাসক দাউদ শাহ আনুষ্ঠানিকভাবে খান-ই-খানান মুনিম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করলেন। এর মূল্য চুকাতে তাকে কটক চুক্তির মাধ্যমে নিজের কাছে শুধু উড়িষ্যা রেখে বাংলা ও বিহার সম্রাট আকবরের হাতে তুলে দিতে হলো। দাউদ শাহের পক্ষ থেকে হুমকি নির্মূল করে মুনিম খান তুকারোই থেকে ফিরে গেলেন বাংলার রাজধানী তান্ডায়। তান্ডায় এসে তিনি বাংলার রাজধানী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন। রাজধানী হিসেবে তিনি বেছে নিলেন বাংলার ঐতিহ্যময় রাজধানী গৌড়।

দাউদ শাহের পক্ষ থেকে হুমকি তো নির্মূল হলোই। কিন্তু মুঘলদের উপর আক্রমণটা এলো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একটি দিক থেকে এবং অত্যন্ত ভয়াবহভাবে ও নিষ্ঠুরভাবে। হঠাৎ করেই এ সময় মুঘল শিবিরে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে গেলো। এক ধাক্কাতেই মুঘল সেনাবাহিনীর প্রায় ১৪ জন জাঁদরেল অফিসার মারা গেলেন। এপ্রিল মাসের মধ্যেই মারা গেলো কয়েক হাজার মুঘল সৈন্য। যারা বেঁচে ছিলেন তাদের অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিলো না।

বাদশাহ দাউদ শাহকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন মুনিম খান

এই বিপদই তো শেষ না, বিপদ মাত্র শুরু। অক্টোবর মাসে মারা গেলেন স্বয়ং খান-ই-খানান মুনিম খান! মুনিম খান মারা যাওয়ার পর বাংলায় থাকা গোটা মুঘল সেনাবাহিনী নেতৃত্বশূন্য হয়ে গেলো। নতুন কাউকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে পাঠানোর আগে অবশিষ্ট সৈন্যরা নিজেরাই একজন নেতা ঠিক করে নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি সেনাবাহিনীর উপর তেমন কর্তৃত্ব বজায় রাখতে পারলেন না। সেনাবাহিনীর যোদ্ধারা আসলে বাংলা থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাচ্ছিলেন।

মুঘল সেনাবাহিনীর এই করুণ দশা শাপে বর হিসেবে বিবেচিত হলো দাউদ শাহের জন্য। তিনি বাংলায় মোতায়েন থাকা মুঘল সেনাবাহিনীর এই অসহায় অবস্থা দেখে কটকের চুক্তি বাতিল ঘোষণা করে তেলিয়াগড় পুনর্দখল করে নিয়ে বাংলাকে মুঘল সাম্রাজ্যের মূল অংশ থেকে আলাদা করে ফেললেন। এরপর সেনাবাহিনীসহ রাজধানী তান্ডার দিকে যাত্রা শুরু করলেন।

বাংলা থেকে একের পর এক দুঃসংবাদ আসছিলো। সম্রাট আকবর কিছুটা বিচলিত বোধ করছিলেন। বাংলায় মুঘলদের অবস্থান ধরে রাখতে হলে এমন একজন জেনারেল দরকার, যিনি তার ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া বাহিনী একত্রিত করে দাউদ শাহের উপর তীব্র আক্রমণ চালাতে সক্ষম হবেন। বিষয়টা কঠিন, আকবর জানেন।

তেলিয়াগড় দুর্গের একাংশ

ভৌগোলিকভাবে বাংলা এমনিতেই দুর্গম প্রকৃতির। তাছাড়া একের পর এক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তার যোদ্ধারাও যে ভেঙে পড়েছে, এটা তিনি ভালোই জানেন। তাদের যুদ্ধে রাজি করানোটাই এখন বড় ব্যাপার। তারপরেও আকবর বাংলা ছাড়তে রাজি নন। কারণ মুঘল সাম্রাজ্যের পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা এর উপরেই নির্ভর করছে। বাংলা শান্ত থাকলে মুঘল সাম্রাজ্যও শান্ত থাকবে। অনেক ভেবে আকবর হোসেন কুলি খানকে তুর্কমানকে ‘খান জাহান’ উপাধি প্রদান করে বাংলায় পাঠালেন। ‘খান-ই-খানান’ উপাধীর পরের উপাধিই হচ্ছে ‘খান জাহান’। হোসেন কুলি খান তুর্কমান সম্পর্কের দিক দিয়েও বৈরাম খানের ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন।

হোসেন কুলি খান তুর্কমান আর রাজা টোডরমলের প্রচেষ্টায় বাংলায় মুঘল সেনাদের অসন্তুষ্টি আর অনিশ্চয়তা দূর করে বাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ করা হলো। এদিকে আকবরের নির্দেশে বিহারের গভর্নর খাজা মুজাফফর আলী তুরবতী বিহার, হাজীপুর আর পাটনা থেকে ৫,০০০ অশ্বারোহীর আরেকটি বাহিনী নিয়ে হোসেন কুলি খান তুর্কমানের সাথে যোগ দিলেন। শক্তিবৃদ্ধির পর হোসেন কুলি খান তুর্কমান এরপর সোজা তেলিয়াগড়ের গিরিপথ দখল করে নিলেন।

এদিকে বাদশাহ দাউদ শাহ যে অচল হয়ে বসে ছিলেন তা না। ইতোমধ্যেই জুনায়েদ খানকে সাথে নিয়ে যতটা সম্ভব শক্তি একত্রিত করা যায়, তিনি করেছেন। প্রতি মুহুর্তেই তার গোয়েন্দারা তাকে মুঘল সেনাবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি আর চলাচলের ব্যাপারে রিপোর্ট করে যাচ্ছিলো। বাদশাহ দাউদ শাহ কররানী জানেন, নিজের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখতে হলে এবার মুঘলদের মুখোমুখি তাকে হতেই হবে। রাজধানী তান্ডা থেকে কিছুটা দূরে রাজমহলে (আগমহল) মুঘল সেনাবাহিনীর উপর আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। একপাশে নদী আর আরেকপাশে পাহাড়কে রেখে রাজমহলে ঘাটি গেড়ে বসলেন তিনি। এরপর বাহিনীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গভীর পরিখা খনন করালেন। বাদশাহ দাউদ শাহ এখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।

এদিকে বাদশাহ দাউদ শাহের পরিকল্পনা বুঝতে হোসেন কুলি খান তুর্কমানেরও বেশি সময় লাগলো না। তিনি দ্রুত দাউদ শাহের বাহিনীর অভিমুখে রাজমহলে মার্চ করলেন। ১৫৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসের দিকে হোসেন কুলি খান তুর্কমান বাদশাহ দাউদ শাহের বাহিনীর কাছাকাছি গিয়ে ঘাটি গাড়লেন। দুই বাহিনীই পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে, কিন্তু কেউই কাউকে আক্রমণ না করে অপেক্ষা করতে লাগলেন। কীসের জন্য অপেক্ষা কেউ জানে না!

এই অদ্ভুত অচলাবস্থা চললো টানা কয়েক মাস! অবশ্য ছোটখাট কয়েকটি সংঘর্ষ যে হয়নি তা না, কিন্তু সেসব সংঘর্ষ চূড়ান্ত কোনো ফল নিয়ে আসেনি। তবে অচলাবস্থার শেষের দিকে সরাসরি সংঘর্ষে না জড়িয়ে দুই পক্ষই ব্যাপকভাবে অপর পক্ষের উপর আর্টিলারি হামলা চালাতে থাকে। এতে দুই পক্ষেই সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হতে থাকে। তবে মূল যুদ্ধ শুরুর আগের রাতেই সবথেকে বড় ক্ষতিটা হয়ে গেলো দাউদ শাহের বঙ্গ বাহিনীর।

১৫৭৬ সালের ১১ জুলাইয়ের এ রাতে মুঘল সেনাবাহিনীর এক গোলার আঘাতে দাউদ শাহের চাচাতো ভাই জুনায়েদ খান মারাত্মকভাবে আহত হন। মুঘল আর্টিলারীর ছোড়া গোলার আঘাতে তার দুই পা হাঁটু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বীরত্ব আর সাহসিকতার কারণে জুনায়েদ খানকে ‘আফগানদের তরবারী’ বলা হতো। যুদ্ধের ঠিক আগের রাতে জুনায়েদ খানের এভাবে আহত হওয়া আফগানদের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ডেকে নিয়ে এসেছিলো।

দুর্ভেদ্য তেলিয়াগড়

মুঘল সেনাবাহিনী মূলত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধপ্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও আক্রমণ করেনি, কারণ হলো যুদ্ধক্ষেত্রটি পার্বত্য অঞ্চল হওয়ায় মুঘল সেনাবাহিনী আগবাড়িয়ে আক্রমণ না করে দাউদ শাহের আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করছিলো। তবে এর বাইরে আরও কিছু কারণ ছিলো। বাহিনীতে এ সময় রসদের যথেষ্ট ঘাটতি ছিলো। যুদ্ধ বেশিদিন ধরে চললে বাহিনীকে রসদ সংকটে ভুগে কষ্ট করতে হবে। সেজন্য মূল যুদ্ধের আগে মুঘল সেনাবাহিনী অতিরিক্ত রসদের বহরের জন্য অপেক্ষা করছিলো। রাজা টোডরমল ও শাহবাজ খান সহায়তা নিয়ে আসায় মুঘল সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ সব সমস্যা সমাধান হয়ে গেলো।

কিন্তু, এই কয়েক মাসে মুঘল সেনাবাহিনীর উপর বড় মাত্রায় আক্রমণ না করায় যুদ্ধের আগেই নিজের অবস্থান দুর্বল করে ফেললেন বাদশাহ দাউদ শাহ। প্রথমে আক্রমণে অনিচ্ছুক মুঘল সেনাবাহিনীর উপর বড় ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে পারলে দাউদ শাহের পক্ষে সহজেই জয় ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব ছিলো।

১২ জুলাই, ১৫৭৬ সাল। এই দিনে বাদশাহ দাউদ শাহ কররানীর নেতৃত্বে থাকা আফগান বাহিনী আর হোসেন কুলি খান তুর্কমানের নেতৃত্বে থাকা মুঘল সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য একে অপরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। দুই পক্ষই চায় অপরপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে। রাজমহলের এ যুদ্ধে বাদশাহ দাউদ শাহ প্রায় ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার সৈন্য একত্রিত করতে পেরেছিলেন। তার বাকি সৈন্যরা বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে তখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো। অন্যদিকে মুঘল সেনাবাহিনীতে সৈন্য সংখ্যা ছিলো ৯০ হাজারের কাছাকাছি। যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান নিয়েই বাদশাহ দাউদ শাহ কররানী নিজ বাহিনীকে বিন্যস্ত করে ফেললেন। অগ্রবর্তী সেনাবাহিনী নিয়ে তিনি থাকলেন সবার সামনে। বাদশাহ ঠিক পেছনেই মূল সেনাবাহিনী নিয়ে অবস্থান নিলেন উড়িষ্যার গভর্নর খান জাহান, খান জাহানের ডানে থাকলেন বিখ্যাত যোদ্ধা কালাপাহাড়, বায়ে থাকলেন মারাত্মক আহত জুনায়েদ খান। পশ্চাতবর্তী বাহিনীর নেতৃত্বে থাকলেন কুতলু খান লোহানী।

অন্যদিকে মুঘল সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী অংশ নিয়ে সবার সামনে থাকলেন খান জাহান হোসেন কুলি খান তুর্কমান, কেন্দ্রে থাকলেন শাহাম খান জলাইর, ডান বাহুতে রইলেন মুজাফফর খান মুঘল, বাম বাহুতে রইলেন রাজা টোডরমল। আর রিজার্ভ ফোর্স নিয়ে পেছনে রইলেন কিয়া খান গঙ্গ।

যুদ্ধ শুরু হলো। রাজা টোডরমলের বাহিনী থেকে মজনুন খান কাকশাল এগিয়ে গেলেন আফগান বাহিনীর ডান বাহুর উপর। এ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন দুর্ধর্ষ কালাপাহাড়। তিনি দৃঢ়তার সাথে এই আক্রমণ ব্যর্থ করে দিলেন। কিছুক্ষণ পর বরং দেখা গেলো মজনুন খান কাকশাল নিজেই ফাঁদে পড়ে গেছেন। মজনুন খান কাকশালকে উদ্ধার করতে আরেকটি ইউনিট নিয়ে এগিয়ে গেলেন তারই পুত্র বাবু খান জব্বারী। কিন্তু কালাপাহাড়ের সামনে তিনিও টিকতে পারলেন না। অগত্যা রাজা টোডরমল তার পুরো বাম বাহু নিয়ে দাউদ শাহের ডানবাহুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন।

এদিকে বাংলা বাহিনীর বামবাহু নিয়ে আহত জুনাইদ খান তীব্র আক্রমণ করে বসেন মুঘল সেনাবাহিনীর ডান বাহুর উপর। ডানবাহুর নেতৃত্বে থাকা মুজাফফর খান মুঘল প্রথম দিকে কিছুটা চাপে পড়লেও কিছুক্ষণের মাঝে সামলে নিয়ে জবাব দিতে থাকেন। তবে এই বাহিনীর যুদ্ধটা শেষ পর্যন্ত সমানে সমান থাকেনি। আহত জুনাইদ খান আগের রাতে মারাত্মক আহত হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের একপর্যায়ে পা থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হাতির পিঠ থেকে পড়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পরে মুঘল সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে তার বাহিনী আর অবস্থান ধরে রাখতে না পেরে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পিছু হটতে বাধ্য হলো।

এদিকে রাজা টোডরমল দুর্ধর্ষ কালাপাহাড়ের সামনে টিকে থাকতে পারছিলেন না। তার বাহিনীর পরাজয়ের চিহ্ন ইতোমধ্যেই ফুটে উঠতে শুরু করেছিলো। মুজাফফর খান বিষয়টি লক্ষ্য করেছিলেন। জুনাইদ খানের বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর তিনি কালবিলম্ব না করে সোজা গিয়ে আক্রমণ চালালেন দুর্ধর্ষ কালাপাহাড়ের উপর।

এদিকে ইতোমধ্যেই বাদশাহ দাউদ শাহ আর হোসেন কুলি খান তুর্কমানের বাহিনী সংঘর্ষে জড়িয়ে পরেছিলো। দুই বাহিনীর মাঝে তীব্র লড়াই চলতে থাকে। জুনাইদ খানের বাহিনী ইতোমধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে পড়ায় মুঘল সেনাবাহিনীর কেন্দ্র আর রিজার্ভ ফোর্স সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়ে দাউদ শাহের উপর আক্রমণ চালালো।

একদিকে কালাপাহাড়ের উপর তীব্র গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন রাজা টোডরমল আর মুজাফফর খান, অন্যদিকে বলতে গেলে পুরো মুঘল শক্তি নিয়ে দাউদ শাহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন খান জাহান। এই চাপ আর সামলানো সম্ভব হলো না দাউদ শাহের পক্ষে। কালাপাহাড় আর দাউদ শাহ দুজনই বুঝে গেলেন তারা হেরে যাওয়া একটি যুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। দুজনই তাই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিলেন।

যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কালাপাহাড় পালিয়ে যেতে পারলেন, কিন্তু দাউদ শাহের ঘোড়ার পা আটকে গেলো কাদার ভেতরে। নেমে পালিয়ে যাওয়ার আগেই তিনি আটক হলেন মুঘল সেনাবাহিনীর হাতে। তাকে হোসেন কুলি খান তুর্কমানের সামনে আনা হলো। হোসেন কুলি খান তুর্কমান দাউদ শাহকে পুনরায় আকবরের আনুগত্য স্বীকার করে নিতে বললেন। নির্ভিক চিত্তে দাউদ শাহ হোসেন কুলি খান তুর্কমানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন। হোসেন কুলি খান দাউদ শাহকে পূর্বের করা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন। দাউদ শাহ জবাব দিলেন, সেই চুক্তি হয়েছিলো খান-ই-খানান মুনিম খানের সাথে। এখন নতুন চুক্তি করতে চাইলে বাংলা দাউদ শাহের কাছে অর্পণ করে দিয়েই করতে হবে। হোসেন কুলি খান তুর্কমান দাউদ শাহের সাথে আর কথা বাড়ালেন না।
দাউদ শাহকে নিয়ে কী করা হবে, তা নিয়ে তিনি কিছুটা চিন্তিত ছিলেন। তখনই তিনি দাউদ শাহকে হত্যা করতে চাননি। কিন্তু অন্যান্য জেনারেলরা আকবরের প্রতি নিজেদের আনুগত্য প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, এই আশঙ্কা করছিলেন। তাই চাপ দিয়ে হোসেন কুলি খানের থেকে তারা দাউদ শাহের মৃত্যুদন্ডের আদেশ আদায় করেন। অবশেষে সেখানেই বিদ্রোহের অভিযোগে দাউদ শাহের শিরচ্ছেদ করা হলো।

বাংলার হতভাগ্য এই বাদশাহর মাথা প্রেরণ করা হলো সম্রাট আকবরের কাছে। আর বাদশাহর মস্তকবিহীন দেহ প্রদর্শন করানো হলো তারই রাজধানী তাণ্ডায়। বাদশাহ দাউদ শাহ কররানীর মৃত্যুর সাথে সাথে আফগানরা স্থায়ীভাবে এ অঞ্চলে নিজেদের শাসন ক্ষমতা হারায়, এবং বাংলা হারায় তার স্বাধীনতা।

শুরুতে ভাবা হয়েছিলো বাদশাহ দাউদ শাহ কররানী দৃশ্যপট থেকে সরে গেলে নেতৃত্বের অভাবে আফগানরা পুনরায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়বে। কিন্তু বাদশাহের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়াটা হলো ভয়াবহ, যা হয়তো হোসেন কুলি খান তুর্কমান নিজেও অনুমান করতে পারেননি। দাউদ শাহের মতো একজন বীর, যোগ্য ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাদশাহকে এভাবে অপমানিতভাবে হত্যার দায় মেটাতে হবে এখন গোটা মুঘল সাম্রাজ্যের।

বাদশাহ দাউদ শাহ হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নিতে বাংলা থেকে বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন দুর্ধর্ষ কালাপাহাড়। বিদ্রোহ করলেন আরেকজন। তিনি ভাটির রাজা ঈশা খান। জীবনে যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছিলেন। সত্যিকার অর্থে আকবর বাংলা জয় করেও স্বস্তিতে কোনোদিন বাংলা শাসন করতে পারেননি।

তথ্য: সংগ্রহ

আমাদের সাথে যুক্ত থাকতে লাইক বাটনে ক্লিক করুন। হ্যালোটুডে’র ইতিহাস বিভাগে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। আমাদের সমৃদ্ধ করে তুলতে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখা পাঠাতে পারেন। হ্যালোটুডে আপনার মনের কথা বলে।

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031