ঋতুর সাজ

সময় বুঝে সাজ

মডেল: জ্যোতি মজুমদার

হ্যালোডেস্ক

নিজেকে যেমন দেখবেন

একেক সময় একেক সাজ। সবার কাম্য এটাই। কিন্তু তাতেও থাকা চাই বৈচিত্র্য। যেমন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাজসজ্জা। তবে সব কিছুর সঙ্গে কখন, কোথায় এবং কোন পরিবেশে যাচ্ছেন সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আবার সাজ বা ব্যক্তিত্বে যদি পোশাকের স্বকীয়তার ছাপটুকু না থাকে তবে তা হবে পুরোপুরি বেমানান।

নিত্যদিনের অফিস, সপ্তাহান্তে বেড়ানো, উৎসব-পার্টি অথবা ঘরোয়া আয়োজন; একঘেয়েমি সাজ বা একই ধরনের পোশাক সবার কাছে অপছন্দের। সবাই চান নিজের সৌন্দর্য উপস্থাপনের লক্ষ্যে একেক সময় একেক সাজ। সে ক্ষেত্রে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাজসজ্জায়ও দেখা যায় অনেকের আগ্রহ। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, জিনস-টপ বা পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক, যখন যা-ই পরা হোক না কেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই পোশাকের প্রভাবটা পড়ে আমাদের সাজ আর ব্যক্তিত্বে। পুরো অবয়বটাই যেন বদলে যায়। যেমন অফিসের সেমিনারে ফরমেয়াশি পোশাক বা বন্ধুদের আড্ডায় জিনস-কুর্তায় অভ্যস্ত মেয়েটি কোনো উৎসব বা আয়োজনে যখন দেশীয় শাড়ি বা ওয়েস্টার্ন গাউনে সেজে ওঠে, তখন তার পুরো অবয়বে আসে আমূল পরিবর্তন। অর্থাৎ পোশাক বদলের সঙ্গে সঙ্গে একটা পরিবর্তনের আঁচ লেগে যায় মনে। এসবের সঙ্গে আপনি কোথায়, কোন পরিবেশে যাচ্ছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ যখন যেমন সাজ দরকার, তখন সেভাবে নিজেকে সাজানো আজকালের ট্রেন্ড।

আসলে সুন্দরের ধারণা কালে কালে বদলায়। বদলে যাওয়া এই ধারণা দৃশ্যমান হতে থাকলে তাকে আমরা ট্রেন্ডি বলি। বর্তমান সময়ে ট্রেন্ড কেবল পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাজ নেওয়া নয়; সময়, স্থান এবং পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে সেজে ওঠা। যেমন- সময় এখন শীত মৌসুমের। এখন গ্রীষ্ম বা বর্ষাকালের পোশাক পুরোপুরি বেমানান। সুতরাং শীত মৌসুমে ঠান্ডা দিনের পোশাক আর সেই পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে সাজ নেওয়া হলো হাল ফ্যাশনে ট্রেন্ডি। একইভাবে গরম আসলে সে অনুযায়ী সাজ-পোশাক নেওয়া প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বতেও ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে। পাশ্চাত্যের পোশাকে যেমন উজ্জ্বলতা আসে, তেমনি শাড়ি ব্যক্তিত্বে যোগ করে স্নিগ্ধতার আবহ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্ব যেমন আলাদা, তেমনি এক একটি উপাদানের কাপড় এক একটি বৈশিষ্ট্য বহন করে। যেমন মসলিন, জামদানি, সিল্ক, তাঁতের বোনা সুতি- প্রতিটি কাপড়ে তৈরি পোশাকেরই স্বকীয়তা আছে। সাজ বা ব্যক্তিত্বে সেই ছাপটা না থাকলে বেমানান মনে হয়।

বৈচিত্র্যময় লুকের ক্ষেত্রে সবার আগেই আসে পোশাক-আশাকের কথা। আর পোশাক-আশাকের সঙ্গে মানানসই সাজ পাল্টে দেয় পুরো দৃশ্যপট। আবার সে সবের সঙ্গে কখন, কোথায় এবং কোন পরিবেশে যাচ্ছেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। চলতি পথে মেয়েদের কোন সময় কী ধরনের পোশাকে ট্রেন্ডে লুক আসবে সে সব নিয়েই এই আয়োজন।

অফিস মানে পুরোদস্তুর করপোরেট লুক থাকতে হবে এমন নয়। আবার অফিসে কুর্তা-কামিজ বা শাড়ি এড়িয়ে চলবেন এরও কোনো কারণ নেই। বাঙালি মেয়েরা আজকাল অফিশিয়াল পোশাক হিসেবে শাড়ি, কুর্তা-কামিজ যেমন বেছে নেয়, তেমনি পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক বা করপোরেট ফরমেয়াশি আমেজেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকে। অনেকে অফিসে পর্দা করে থাকে। সে ক্ষেত্রে বাঙালিয়ানা পোশাক হোক বা পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক; মাথায় একটা হিজাব জড়িয়ে নিলে পাল্টে যাবে সম্পূর্ণ আবহ। জুতা জোড়া যেন পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেদকটিও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আবার পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন সাজসজ্জা। অফিস বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারি সাজসজ্জা না করাই শ্রেয়। শাড়ি বা কুর্তি-কামিজ পোশাকে ক্ষেত্রে মেকআপে ন্যাচারাল লুক বেশ মানাবে। সাজসজ্জায় গয়না বা এক্সেসরিজ হালকা হলে ভালো। তবে সব শাড়িতেই যে একরকম সাজ ভালো লাগবে তা নয়। ঐতিহ্যবাহী সিল্কের শাড়ির সঙ্গে এলো খোঁপাটা যেমন ভালো দেখায়, পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে সেটা একেবারেই বেমানান। তখন মুখের গড়ন, চুলের কাটছাঁটের সঙ্গে মিলিয়ে সাজতে হয়। আয়োজনটি যদি সাধারণ অনুষ্ঠান হয়, তবে চোখ না সাজানোই ভালো। তখন টেনে লাইনার দিলে ভালো দেখাবে। লিপস্টিকে থাকবে বাদামি, লাল এরকম রঙের শ্যাড। চুলটাকে বেণি বা টেনে খোঁপা বাঁধতে পারেন। একই পোশাকে জমকালো অনুষ্ঠান! একটু ভারি মেকআপ করে নিন, দেখুন মুহূর্তেই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো সাজপোশাকে।

বিয়েতে এখন অনেকে কামিজ, লেহেঙ্গা, সারারা ইত্যাদি পরে থাকেন। তবে যাই পরুন না কেন, সবকিছুতেই চাই গর্জিয়াস লুক। এক্ষেত্রে কারচুপির কাজ করা শাড়ি বা পোশাকের কদর বেশি থাকে। আবার যারা কুর্তি-কামিজে অভ্যস্ত তারা ভয়েল, আদ্দি, সুতি বা জর্জেটের পোশাক পরতে পারেন। আজকালের ট্রেন্ড হিসেবে ঢিলেঢালা পোশাক চলছে। সোজা ছাঁটা ছাড়াও কামিজের ছাঁটটা অনেকটা আনারকলি স্টাইলের। কোমরের নিচে একটু ঢিলে রেখে কলিদার কামিজ বেশ আরামদায়ক। পার্টিতে লেগিংস বা টাইটসের সঙ্গে কুর্তা-কামিজ বা নকশা করা টিউনিক বেছে নিচ্ছেন অনেকে। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক যখন পরছেন তখন দেখবেন একটা উচ্ছলতা, আরামদায়ক ভাব কাজ করছে মনের ভিতর। মেকআপটা এড়িয়ে যাওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। চোখের আইলাইনারের চিকন রেখা টেনে ব্লেন্ড করে নিন, তবে ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিকের ছোঁয়া দিতে পারেন। যেমন- জিনস বা স্কার্ট-টপের সঙ্গে গাঢ় বাদামি, লাল লিপস্টিকগুলো বেশ ভালো দেখায়, আর ব্যক্তিত্বেও ফুটিয়ে তোলে উচ্ছলতার আমেজ। এদিকে মেসি বান করে ছেড়ে রাখা চুল মানিয়ে যাবে এ ধরনের পোশাকে।

হাল ফ্যাশনে সাজ ট্রেন্ডে হালকা সাজে লাবণ্যময়ী দেখানোর দিন এসেছে। তাই সাজসজ্জায় বেইজটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাইমার লাগিয়ে ফাউন্ডেশন নিয়ে কনট্যুরিং করতে হবে। এরপর ফেস পাউডার দিয়ে পুরো মুখ ব্যালান্সড করতে হবে। কোথাও কম, কোথাও বেশি থাকলে সাজটা পূর্ণতা পাবে না এবং দেখতেও ভালো লাগবে না। এরপর পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্লাশন দিতে হবে। হালকা শাইনিং পাউডার দিলেও মন্দ লাগে না।

স্থান-কাল বুঝে পোশাকের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সমন্বয় ঘটিয়ে সাজাটা কঠিন কিছু নয়। পোশাক গায়ে জড়ালে মনের ভিতর যে আবহটা কাজ করে, শুধু সেই রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলুন। দেখুন, আপনার সাজপোশাকের ছটা কেমন রাঙিয়ে দিচ্ছে অন্যকেও।

 

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031