হ্যালোডেস্ক
আজম ভাইয়ের সঙ্গে আমার যখন দেখা হয়, তিনি তখন সিদ্ধেশ্বরীতে তার এক বন্ধুর বাসায় থাকতেন। সময়টা ছিল ১৯৭৬ সাল।
যোগাযোগটা এক বন্ধুর মাধ্যমে। টুটুল আমার ছেলেবেলার বন্ধু। সে একদিন এসে বলল, আজম ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তোর কথা বলেছি, তোকে নিয়ে যেতে বলেছে_ তিনি ব্যান্ড ফর্ম করতে চান। একটু অবাক হলাম, কিন্তু আগ্রহী হলাম আরও বেশি। পরদিন সকালেই গেলাম। বরাবরই একটা সমীহ ছিল, তারপর ১৫ মিনিটে সম্পর্কটা সহজ করে ফেললেন। তিনি বললেন, চল বাজাই, বুঝলাম পরীক্ষা দিতে হবে। আজম ভাই গেয়ে চললেন, আমিও মনের সুখে বাজিয়ে চললাম। এসেছি সকাল ১০টায়, কখনযে বেজে গেছে আড়াইটা বুঝতেই পারিনি। আজম ভাই বললেন_ যাবে না, আমরা খাব এবং আবারও গান করব, বুঝলাম তাকে একটু খুশি করতে পেরেছি। পরদিন সকালে আবার আসতে বললেন। টুটুল বলল, সে রিদম গিটার বাজাবে, তাহলে আমাদের ড্রাম ও বেস গিটার বাদক লাগবে। বন্ধুদের মধ্যেই পেয়ে গেলাম। বেস গিটার বাজাবে হেলাল। ড্রাম পপসি। চলল প্র্যাকটিস, শুরু হলো অনুষ্ঠান করা। ৬ মাসের মধ্যেই বেশকিছু অনুষ্ঠান করে ফেললাম। এরপর একটা অনুষ্ঠান করলাম বিটিভিতে। আজম খানের ৬টি গান নিয়ে বিশেষ আয়োজন। লাইভ রেকর্ডিং, তখন কোন ব্যান্ড লাইভ হতো না এখনকার মতো। অনুষ্ঠানের পর অনেক শুভেচ্ছা, অনুপ্রেরণা, ভালোবাসা পেয়েছি।
আমার গিটার বাজানো তিনি খুবই পছন্দ করতেন। টের পেতাম, তার স্নেহ আমাকে স্পর্শ করত। এর মধ্যে কমলাপুর ফেরত গেছেন। আমরা ওখানেই প্র্যাকটিস করি, নিচ তলায়। কয়েকটি নতুন গান হয়েছে, তার মধ্যে ‘পাপড়ি’, আমি যারে চাইরে, আরেকটা সফট গান ছিল, মনে করতে পারছি না। একদিন আজম ভাইকে বললাম, আমার একটা গান আছে তিনি গাইবেন কি-না। শোনাতে বললেন। আমি গানটা গাইতে তিনি সহজেই তুলে ফেললেন, আমি যারে চাইরে/ সে থাকে মোর এ অন্তরে…এর পরের অনুষ্ঠানেই গাইলেন এবং মাতালেন তিনি। গান গাইতেই একটা মায়াজালের সৃষ্টি হলো। আজম ভাইয়ের গায়কী এমনি ছিল যে, এ গান একবার যে শুনেছে_ ভালোবেসেছে।
সহজ-সরল এক লোক যার ভেতর কোনো প্যাঁচ ছিল না। এত বড় হয়েও নিজেকে সাধারণ ভাবা এবং রাখা খুব সহজ নয়। আমাদের ভেতর যোগাযোগের কাজটা করত টুটুল। সে আমেরিকা চলে যাওয়ায় আমাদের কার্যকলাপ ধীর এবং একসময় স্তিমিত হয়ে পড়ে। আমিও অর্কেস্ট্রার কাজ, টেলিভিশন ও রেডিওর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আজম ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করা এবং উচ্চারণে বাজানো_ আমার জীবনে একটি অধ্যায়। এ অধ্যায় বাদ দিয়ে আমি কখনোই পূর্ণ লাবু রহমান নই। হয়তো এ অধ্যায়ের কারণেই আজম ভাইয়ের ২০০০ সাল পর্যন্ত যত অ্যালবাম বেরিয়েছে তার বেশির ভাগই আমার বাজানো। ১৯৯৯ সালে ডিসকো শাহীনের অনুরোধে দুটি গান রেকর্ড করি। কণ্ঠ আজম খান, লেখা ও সুর লাবু রহমান। একটি পুরনো গান ও একটি নতুন গান। পুরনো গানটি_ ‘আমি যারে চাইরে’ আর নতুন গানটি_ ‘সুখ তুমি কত দূরে’।
লিখেছেন- লাবু রহমান
তথ্য: সমকাল
Add Comment