গল্প

শ্বাসকষ্ট

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

-খসরু পারভেজ

শ্বাসকষ্টের রোগী ফিহাদ। হঠাৎ করেই ইনহেলারটা ফুরিয়ে গেছে। আগে খেয়াল করে নি। এমনিতে গোটা পৃথিবী করোনা আতঙ্কে। এ সময়ে যেন শ্বাসকষ্টটা বেশিই অনুভূত হচ্ছে ওর। ঔধষের দোকানে যেতে হবে। বাইরে বের হওয়া বিপদ। সেনাবাহিনী, পুলিশ ঘরে ফিরিয়ে দিচ্ছে সবাইকে। তবুও ঘর থেকে বের হলো সে। মুখে মাক্স পরে, মাথায় হেলমেট দিয়ে বাইক নিয়ে ছুটলো বাজারে।

চারিদিকে গভীর নিঃস্তব্দতা। এক মহাশক্তির ভয়ে রাস্তা ঘাট প্রায় জনশূন্য। বাজারে আসতেই চোখে পড়ে একটা ছোট্ট জটলা। প্রশাসনের লোক বোধ হয়। দুজন বৃদ্ধকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে মোবাইলে ছবি তুলছেন একজন হিজাব পরা মহিলা। ওদের অপরাধ হয়তো ওরা ঘর থেকে বেরিয়েছে,ওদের মাক্স পরা নেই তাই। একজন বৃদ্ধ অঝোরে কাঁদছেন। পাশে তার ভ্যানগাড়ি। আর একজন বৃদ্ধের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঠিকরে বের হতে চাইছে। বাবার বয়সী বৃদ্ধ দুজনের প্রতি এমন আচরণ দেখে ক্ষুব্ধ হয় ফিহাদ। কিন্তু কিছুই বলতে পারে না। বাইকের শব্দে ক্ষমতাধর লোকগুলো কয়েকবার তাকিয়েছে ফিহাদের দিকে। একজন এগিয়ে এসে তাকে বলেন- আপনার এখানে কি? আপনি যান! ফিহাদ এগিয়ে যায়।

একটু দূরেই রহমান ফার্মেসি। ফার্মেসি খোলা আছে। তবে কোনো ক্রেতা নেই। ফার্মেসির পাশে একটা বন্ধ দোকান। তার সামনে একজন হাড্ডিসার মানুষ ঘুমোচ্ছে। হয়তো ভিক্ষুক। ভিক্ষা না পেয়ে খালি পেটে ঘুমুচ্ছে। দোকানের সামনে নির্দিষ্ট ছক এঁকে দেয়া হয়েছে গোল করে। নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করতে হবে। ফিহাদকে দেখে ফার্মেসির মতিউর রহমান সালাম দেয়। সালামের প্রতিউত্তর দিয়ে ফিহাদ দুইপাতা ব্রজোফিল ট্যাবলেট আর একটা টিকামেট ইনহিলার কিনে নেয়। দামটা একটু বেশিই মনে হয় তার। তা হোক, ঔষধ দুটো পাওয়া গেছে এটাই অনেক। ঔষধ কেনার সময় একটা কুকুর এসে দাঁড়িয়েছে ফিহাদের পেছনে। কুকুরটা তার কাছে এসে গা শুকতে থাকে। ফিহাদ কুকুরটাকে তাড়িয়ে বাইকের কাছে আসতে চায়। কিন্তু কুকুরটি তার পিছু ছাড়ে না। ততক্ষণে মাগরিবের আযান হয়ে গেছে। বাজারের অপর প্রান্তে মসজিদ। কিছু মানুষ পাশপাশি হেঁটে চলেছে নামায আদায় করতে। ওদের যেন করোনার ভয় নেই। ফিহাদ বুঝতে পারে কুকুরটা ওর কাছে খাবার চাইছে। সে মতিউরকে জিজ্ঞাসা করে, কোনো খাবারের দোকান খোলা আছে কিনা! মতিউর জানায়- সামনের মোড়টাতে অরবিন্দুর হোটেল খোলা থাকতে পারে। ফিহাদ ভাবে, হোটেল না হলেও চলবে। কোনো মুদিখানা খোলা থাকলেই হবে। সেখান থেকে বিস্কুট-পাউরুটি কিনে কুকুরটাকে দেবে। ফিহাদ ফার্মেসির সামনে বাইকটা রেখে মোড়ের দিকে এগুতে থাকে। কুকুরটাও পিছু নেয় ওর।

একটু এগুতেই দুজন পুলিশ ফিহাদকে দাঁড় করান। দেখে বুঝা যায় একজন অফিসার, অন্যজন সিপাই। পুলিশ অফিসার ফিহাদের পরিচয় জানতে চান। ফিহাদ নিজের পরিচয় দেয়- সে একজন সাহিত্যিক।বাজারে কেন? প্রশ্নের উত্তরে জানায় সে ঔষধ কিনতে এসেছে, এখন যাচ্ছে খাবারের দোকানে। পুলিশ অফিসার তার কাছে প্রেসক্রিপশন দেখতে চান। ফিহাদ প্রেসক্রিপশন দেখাতে পারে না। একই ঔষধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। ঔষধের নাম মনে থাকে, তাই প্রেসক্রিপশন লাগে না। সে পকেট থেকে ঔষধ দুটে বের করে অফিসারকে দেখায়। অফিসার সেটা দেখতে না চেয়ে বারবার প্রেসক্রিপশন দেখেত চান। ফিহাদ বলে তার কাছে অবশ্যই এটা থাকা উচিত ছিল,ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু পুলিশ অফিসার অকথ্য ভাষায় খিস্তি করতে থাকেন। প্রতিবাদ করে ফিহাদ। সে বলে — একজন লেখককে এভাবে আপনি বলতে পারেন না। শুধু লেখক কেন,কারও প্রতি এমন ধরনের আচরণ অন্যায়। ন্যায়- অন্যায় আমাকে শেখাচ্ছেন?– বলে পুলিশ অফিসার লাঠি দিয়ে আঘাত করে ফিহাদের পায়ে। সে বিস্মিত হয়, হতভম্ভ হয়। পুলিশ অফিসারের নামটা তার ব্যাজ থেকে দেখে নিয়ে ক্ষোভে,অপমানে কাঁপতে থাকে ফিহাদ। ততক্ষণে ফিহাদের পাশে থাকা কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। শুধু একটি নয়, আরও কয়েকটি কুকুর এসে জড়ো হয়েছে এরই মধ্যে। ফিহাদ বলে– আমি আপনার বিরুদ্ধে কমপ্লেন করবো। একথা শুনে আরও ক্ষিপ্ত হন পুলিশ অফিসার। তিনি ফিহাদকে সজোরে পেটাতে থাকেন। ফিহাদ নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ততক্ষণে কুকুরগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশের উপর।

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930