পবিত্র মাহে রমজানের শুভেচ্ছা
হ্যালোডেস্ক
কুরআন আল্লাহ সুবাহানাল্লাহু তায়ালার বাণী। নিজের সন্তানকে স্বচক্ষে কুরআনকে ভালোবাসতে দেখা, প্রত্যেক মুসলিম মা-বাবার জন্য অত্যন্ত গৌরব এবং সৌভাগ্যের। কিছু বিশেষ আয়াত মুখস্থ করাকে ঠিক কুরআনকে ভালোবাসা বলে না। যদিও আমাদেরকে তাই-ই শেখানো হয়। একটা শিশু যখন কুরআনকে ভালোবাসে, তখন সে দিনভর আয়াত তিলাওয়াত করাতেই আনন্দ খুঁজে পায়। কি পড়ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করে, কুরআনের সাথে সম্পর্কিত সবকিছুতে আগ্রহ বোধ করে। শিশুরা প্রধানত তার চারপাশের পরিবেশ আর তাকে যারা দেখেশুনে রাখে তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। এজন্য শিশুদের সাথে কুরআনের মজবুত এবং ভালোবাসার একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য মা বাবার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার সন্তানের হৃদয়কে অল্প অল্প করে কুর’আনের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করার আটটি উপায় এখানে দেয়া হলো:
১. দুআ করুন
একজন বিশ্বাসী বান্দার জন্য দুয়ার থেকে শক্তিশালী হাতিয়ার আর নেই। বিশেষত সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দুআ। আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালার অনুমতি ছাড়া কিছুই হয় না আর আল্লাহই পারেন সব সম্ভব করতে। দুআ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনার নিয়তকে সহীহ করতে হবে। আপনাকে মনে রাখতে হবে, যেই ভালো কাজই আপনি করছেন বা করতে চাচ্ছেন সেটা যেনো অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয়।
২. আপনার সন্তানকে ঘন ঘন কুরআন পড়ে শুনান
আপনার শিশু জন্মের আগে থেকেই এটা শুরু করুন। অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন সময়ে যখন আপনি ঘর গুছাবেন, রান্না করবেন কিংবা বিশ্রামে থাকবেন তখন যতো বেশি পারেন কুরআন তিলাওয়াত শুনুন। আপনার শিশু যখন কান্না করবে বা বিরক্ত করবে তখন তাকে কুরআন শুনিয়ে শান্ত করানোর চেষ্টা করুন। যখন আপনার শিশুরা ধীরে ধীরে বড় হবে, প্রতিদিনই কিছু সময়ের জন্য তাদের সামনে কুরআনের অডিও তিলাওয়াত ছেড়ে দিন। শিশুদের সাথে কুরআনকে পরিচিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীতে তার জন্য কুরআন পড়া এমনকি সেটা মনে রাখাও সহজ হবে ইন শা আল্লাহ। শিশুর মনোযোগ কম বলে সারাক্ষণ তার পাশে বসে থাকার প্রয়োজন হবে না। কুরআন তিলাওয়াতকে শুধু জু’ম্মাবারের সাথে সীমাবদ্ধ করে ফেলবেন না। এখানে আপনার শিশুকে কুরআন মুখস্থ করার প্রতি নয় বরং অভ্যস্ত করার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
৩. আয়াত/অধ্যায়ের অর্থ নিয়ে আলোচনা করুন
প্রতিদিন কুরআন শোনানোর পাশাপাশি তার সাথে আয়াত বা সূরাটির অর্থ নিয়ে আলোচনা করুন। তার ওপর অতিরিক্ত ব্যাখ্যা, শানে নূযূল চাপিয়ে দিতে যাবেন না। তার মনোযোগ আর আগ্রহ ধরে রাখার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই বলুন। আপনার বলার ভঙ্গি শিশুর বয়স উপযোগী হওয়া জরুরি। যাতে করে সে সহজে তা বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী পালন করতে পারে।
৪. কুরআনের সুন্দর সুন্দর গল্পগুলো তাকে বলুন
আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তায়ালা কুরআনে বেশ কিছু ঘটনা বলেছেন। প্রতিটি গল্পই শিক্ষামূলক এবং অনুপ্রেরণামূলক। আপনি এই গল্পগুলো আপনার সন্তানকে পড়ে শুনাতে পারেন বা তাদের এই সম্পর্কিত ইসলামিক কার্টুন ভিডিও দেখাতে পারেন। এগুলো শিশুকে কুরআনকে তার মানসপটে এঁকে নিতে এবং বুঝে পড়তে সাহায্য করবে।
৫. ধৈর্য ধারণ করুন এবং তাদেরকে উৎসাহিত করুন
আপনার সন্তানের প্রতি ধৈর্য ধারণ করুন এবং তাকে একবারে বেশি কিছু করতে জোর দিবেন না। কুরআন শোনাকে অপ্রিয় কাজে পরিণত করে ফেলবেন না। ধৈর্য রাখুন, আপনার সন্তানের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য অল্পকিছু সময়ই যথেষ্ট। পরবর্তীতে হয়তো সে নিজ থেকেই বেশি সময়ের জন্য শুনতে বা পড়তে চাইবে। তাকে ভালোবাসুন এবং শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ শাস্তি দিলে তার কুরআনের প্রতি এক ধরনের বিরক্তিভাব চলে আসবে। এমনকি আপনি আশেপাশে থাকলে সে হয়তো আপনার ভয়ে কোনোমতে কুরআন শুনবে। মনে রাখবেন, আপনার উদ্দেশ্য হলো তাকে কুরআন ভালোবাসতে শেখানো। সে যেনো কেবল আপনাকে সন্তুষ্ট করতে কুর’আন না শুনে। সে কুরআনকে যতো বেশি ভালোবাসবে ততোই সে আল্লাহকে স্মরণ করবে।
৬. পরিবারকে সময় দিন এবং তাদের সাথে খেলুন
পুরো পরিবারকে সময় দিন। এবং কুরআনের বিষয়গুলোর আলোকে তাদের সাথে উপযুক্ত খেলা খেলুন। যেমন ধরা যাক, তাদের সাথে প্রশ্নোত্তর বা কুইজ খেলুন অথবা নিজেদের মধ্যে দল তৈরি করে প্রতিযোগিতা মূলক খেলা করুন। যেটা হবে তাদের জন্য স্নেহপূর্ণ ও আনন্দদায়ক। আবার সবার অংশগ্রহণে কোনো কিছু চিন্তাভাবনা, আলোচনা করে সৃজনশীল কোনকিছু তৈরি করা যেতে পারে।
৭. তারা যা শিখেছে সেটাই বলতে অনুপ্রাণিত করুন
উসমান (রাঃ) দ্বারা বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন,
তোমাদের (মুসলিম) মধ্যে সেই বেশি উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে তা শেখায়।
যখন আপনার সন্তানদের কুরআনের প্রতি জ্ঞান বাড়তে থাকবে, তাদেরকে বলুন সেটা আপনার সাথে ভাগাভাগি করতে। এবং তাদের সাথে সাবলীল হোন যাতে তারা উচ্চারণে কোনো ভুল করলে আপনি তা ধরিয়ে দিতে পারেন। তারা যতটুকুই শিখতে পেরেছে সেটুকুতেই তাদের সেরা করে তুলুন।
৮. তাদেরকে উদাহরণের মাধ্যমে দেখান
আপনার কৃতকাজ আপনার কথার থেকেও বেশি অনুকরণীয়। শিশুদের কোনো কাজ করতে বলার চেয়ে তাদের সেই কাজ করে দেখালে কাজটি করতে তারা বেশি উৎসাহ বোধ করে। দিনে অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও কুরআন শুনুন এবং তিলাওয়াত করুন। তারা যখন দেখবে, আপনি কুরআনকে কতোটা ভালোবাসেন এবং গুরুত্ব দেন তখন তারা আপনাকে অনুসরণ করতে আরো আগ্রহ বোধ করবে ইনশাআল্লাহ।
দিনশেষে, আপনি আপনার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে থাকুন এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। যে কোনো কিছুর ফলাফল কেবল মাত্র আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আমরা প্রত্যেকেই জান্নাতে আমাদের সন্তানদের সাথে মিলিত হতে চাই। এজন্য ভালো কাজের জন্য চেষ্টা করতে থাকুন এবং আপনার সন্তানদেরকেও সেটা করতে সাহায্য করুন ইনশাআল্লাহ।
Add Comment