কবিতা

“ধলা-কবুতর”

সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার

– সরকার মাহবুব

আমাকে চিনতে হলে হাত থেকে ফেলে দাও হাতের কসম
আঙুলের ডগা থেকে তুলে রাখো ফুলের পরশ
নাকের ছিদ্র থেকে ছুঁড়ে দাও নাকের নোলক
ঠোঁট থেকে মুছে ফেলো স্পর্শ যাতনা।
আমাকে চিনতে হলে মেলে ধরো বুকের জমিন
পাঁজরের ছাতা ভেঙে হৃদপিন্ড সাজাও সমান
মেপে মেপে দেখে নাও – কতটুকু প্রসারিত হলে
পানিতে সাঁতরে যাবে পানকৌড়ি জলের জীবন।
আমাকে চিনতে হলে ওই সব রাখঢাক রাখো
সোজা পথে, সরল রেখায় কথা বলো সন্ধ্যা সকালে
মাথা থেকে পা অব্দি নি:সাড় দাঁড়িয়ে রাখো নি:ভাজ শরীর
হুল দিয়ে মধু আনো – মৌচাকে মৌমাছি বাজিয়ে বেহাগ !
নেফারতিথির সাথে প্রেমময় মাতাল জীবনে আসো।
আমাকে চিনতে হলে চিনে রাখো শেখড় বাকড়
বাতাসে পাতার শব্দ শুনে বুঝে নাও ভ্রমন বিলাস
হাতের আঙ্গুলে রাখো সাগরের বাঁকা বেলাভূমি
লাল কাঁকড়ার দলে পঁই পঁই হেঁটে যাও পড়ন্ত বিকেলে।
আমাকে চিনতে হলে ভুলে যাও অলস জাবর
একান্ত গপ্পো-সপ্পো, নি:সাড় বিভাজিত রাত।
লজ্জা করে না !
সীল মেরে বাক্সবন্দী করো, অত:পর বিজয় আনন্দে নামো !
স্যাম্পেনে রাঙ্গিয়ে নাও রাতের বাসর
ভুল ঠিকানায় ঘুরে আসো, এলোমেলো লংড্রাইভ।
আমাকে চিনতে হলে চিনে রাখো লাখো শহীদের গোর
কাশের আড়ালে সিলকী পতাকা ওড়াও উথাল দুপুরে
কাদা মেখে শুয়ে থাকো জড়াজড়ি নদীর সিথানে
দেখো, কাশ ফুলে ছেয়ে আছে বালুঢাকা মাঠ
বাদামী মানুষগুলো হাড্ডিসার, বুভুক্ষ দাঁড়িয়ে
সারি সারি ভুতের বালাম।
আমাকে চিনতে হলে ওই সব লেহাঙ্গা দোপাট্টা ছাড়ো
নীলাভ সমুদ্র থেকে তুলে আনো নীলপাড় সাদার জমিন
সরষে ফুলের কাছে হাত পেতে নাও কিছুটা হলুদ
মুখে চোখে মেখে নাও জ্বোছনার তরল আবাদ
বুকে ঠোঁটে শান দাও, ঝকঝকে বালি ও বারুদে।
আমাকে চিনতে হলে এসো
মাঠের অপর প্রান্তে চলে এসো একলা একাই।
উত্তরে-দক্ষিনে এসো ! ধর্মেবর্ণে এসো
সাদা আর কালো নয়,
অতঃপর মানুষ হয়েই এসো
সমতার-সেতু গড়ে দেবো তোমার দুয়ারে
ভেদাভেদ হীন অজস্র মানুষ হেঁটে যাবো অবিরাম।
এসো, আমরা এবার উদাত্ত দু’হাতে
আকাশে ছড়িয়ে দেই শান্তির ধলা-কবুতর !

Add Comment

Click here to post a comment

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

November 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930