ফেসবুক স্ট্যাটাস

পুরুষ শাসিত সমাজেও শোষণের স্বীকার হচ্ছেন প্রায় পুরুষরাই!

মাহফুজা শিরিনের ফেসবুক পোষ্ট থেকে

বাঙালি নারীদের মধ্যে বেশির ভাগ নারীদের অবস্থাই এমন যে, সংসারের একটা প্রিচ ভাঙলেই নারীর হৃদয়টাও যেন ভেঙে যায়।তারপর তো সংসার ভাঙা! প্রশ্নই আসেনা। তবে এরকম দৃশ্য এখন একটু হলেও বিরল।

বর্তমানে এমন নারীরাও আছেন যারা সংসারে কারণে অকারণে নানা ধরনের অশান্তি করে, পুরুষের(স্বামীর)হৃদয় ভেঙেই ক্ষান্ত হন না। পুরো পরিবার ভেঙে খান খান করেও শান্ত হন না। সামাজিক ভাবে হেনস্তা, হুমকি, মামলা, হয়রানি তো আছেই।

আমাদের সমাজের একটি অতি সাধারণ চিত্র হলো নারী নির্যাতন। আমাদের দেশে স্ত্রীকে শারীরিক/মানুসিক নির্যাতন করা ও সামাজিক ভাবে হেনস্তা করা খুবই পরিচিত ব্যাপার। কিন্তু অপরদিকে, সংখ্যায় বেশি না হলেও একেবারে কম নয় খুব গোপনে চলছে পুরুষ নির্যাতন। পুরুষকে সামাজিক ও মানুসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনের দৃশ্যও আমরা দেখে থাকি।

আজকাল লক্ষ করলে প্রায় পরিবারেই দেখা যায়, ভদ্র শিক্ষিত ছেলেটিকে প্রতিষ্ঠিত করে মা-বাবা যখনই ঘটা করে বিয়ে দেন তারপর থেকেই ঘটতে থাকে নানা ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ঘটনার শুরু হয় বিয়ের আগেই মোটা অঙ্কের দেনমোহর নির্ধারণ নিয়ে। যেমন, যে ছেলেটির নগদ ২ লাখ টাকা দনমোহর দেয়ার সামর্থ আছে তার উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয় ২০ লাখ টাকা দেনমোহর। তাই এখন মেয়ের বাবার চেয়ে ছেলে এবং ছেলের বাবার কাছে বিয়ে শব্দটা বড় ধরনের আতঙ্ক।

এরপর শুরু হয় আরেক যন্ত্রণার। স্ত্রী নিজের শান্তির জন্য, স্বামীর টাকা পয়সা একা কিংবা বাবার বাড়ির সবাইকে নিয়ে ভোগ -বিলাস করার জন্য স্বামীর উপর চাপ সৃষ্টি করে। এমন কি নিজের মা ও তার পরিবারের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ না করার অপরাধে স্বামীকে ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।অফিস থেকে ফেরার পর বাসার কাজে সাহায্য না করলে গালিগালাজ করে।

অনেক সময় পুরুষরা আত্নসম্মানের ভয়ে কারো কাছে প্রকাশ করে না। নারীদের মত কেঁদে নিজেকে হালকা করতেও পারেনা। সন্তানের কারণে উপায় থাকেনা তালাক দেয়ারও। এরকম মুখ বুঝে সয়ে যেতে যেতে নিরীহ পুরুষটি তখন হয়ে যায়, শান্ত- শিষ্ট, মানুষের গুণ বিশিষ্ট ‘ডোমেষ্টিক এনিমেল’।

তবে একথাও ঠিক যে,সৃষ্টির শুরু থেকে নারীরা নানা ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হতে হতে তাদের চিন্তাধারার মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যে চিন্তাধারাগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারীর জীবনে সম্মানের পরিবর্তে অসম্মান এনে দেয়। ভাবমূর্তি নষ্ট করে সেইসব নারীদের যারা নানা ধরনের জামেলা সামলিয়ে,স্বামী, সংসার, বাচ্চা সব ঠিক রাখেন।

আমিও একজন নারী। একজন নারী হিসেবে আমারও চাওয়া থাকবে নারীদের জীবনে শান্তি থাকুক তবে পাশের মানুষটি এবং তার পরিবারের সবার অশান্তি করে নয়। আমারও একটি মেয়ে আছে। আমিও চাইব আমার মেয়ের সংসার জীবনে স্বস্তি থাকুক তবে অবশ্যই মেয়ের স্বামী এবং তার পরিবারের অন্য সবাইকে শাস্তি দিয়ে নয়।

আমাদের বুঝতে হবে, মোটা অংকের দেনমোহর কখনো একজন নারীর জীবনে সুখের কারণ হতে পারেনা। মানুষের প্রতি সহানুভূতি, মায়া, মমতা, সততা, আত্নমর্যাদা ও আভিজাত্যের পাঠ পরিবার থেকেই দেয়া উচিৎ।  আবেগ- অনুভূতিপ্রবণ সহজ-সরল জীবন যাপনেই পাওয়া যায় চিত্তসুখ। হিংসা-প্রতিহিংসায় আক্রান্ত হয়ে, লোভ, সন্দেহ, অবিশ্বাস নিয়ে কখনো কেউ সুখি হতে পারেনা।

একজন নারীর দাম্পত্য জীবনের চাওয়া-পাওয়াগুলো একটু জোরালোই হয়। সেই জোরালো চাওয়া পাওয়াগুলোর মধ্যে যেন ভালোবাসার জোর থাকে সব চেয়ে বেশি। ক্ষমতা বা মোটা অংকের দেনমোহরের জোর যেন না হয়।

খেয়াল রাখতে হবে কখনো পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েন, অঅর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে অশান্তি,শ্রদ্ধাবোধে ঘাটতির জন্য যেন দাম্পত্য জীবন বিভীষিকাময় না হয়ে ওঠে।

বর্তমান সময়ে নারীরা একটু বেশিই সচেতন তাদের জীবন নিয়ে কিন্তু এই সচেতনতা সমান রাখতে পারছেনা সম্পর্কের ধারাগুলো, চিন্তা-ভাবনার মধ্যে থাকছে না সমঝোতা। সমানে অপব্যবহার হয়ে যাচ্ছে বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্কের।

সংসার সুন্দর করার আসলে কোন গোপন মন্ত্র নেই। তাই সবার উচিৎ নানা জটিলতার মাঝেও কিভাবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া এবং নির্ভরতার এক সেতুবন্ধন তৈরী করা যায় সেই বিষয়ে সচেতন থাকা।

আমাদের সচেতনতা যেন আমাদেরকে সহনশীল করে তোলে, পাশের মানুষটি যেন কখনো শোষণের স্বীকার না হয়।

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031