সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার
-রমা বিশ্বাস
ওরাও ভালোবাসে, কথা বলে একে অপরের সাথে, ওম মাখা সঙ্গটুকু অনুভব করে নিভৃতে….
ওরাও বয়ে আসা বাতাসে, ছাতিম ফুলের গন্ধটুকু মেখে নেয় এক চিলতে মনের জমিতে….
ওরাও চাঁদভেজা আলোতে রাত জাগা পাখির মত অকারণে বিষন্ন আলাপ গেয়ে ওঠে…..
ওরাও কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে, শিশিরের ঘ্রাণ বুকে ভরে আগামীর সুখোস্বপ্নে ভাসে…
ওরাও রাতভর বৃষ্টির পরে, সকালের প্রথম অলির চুম্বনে নতুন করে শিহরিত হয় অকারণে…
ওরা…. ওরা পাশাপাশি দুটো গাছ। স্বল্প আয়ূর যে গাছটি এ বছর জন্ম নিয়েছে, এ বছরই মারা যাবে, তার বেড়ে ওঠার আগ্রহটা বড্ড বেশী।
তরতর করে বেড়ে ওঠে সে, দেখার অনুসন্ধিৎসা, জানার কৌতুহল অসীম ।
“এই দেখ, দেখ কত তাড়াতাড়ি বড় হচ্ছি আমি??”… বড় গাছটি শোনে, মৃদু হাসে কিন্তু কষ্ট দেয় না ছোট গাছকে বরং পরম মমতায় আগলে রাখে প্রিয়জনকে।
এভাবেই পাতাদের বাতাস ছুঁয়ে হুটোপুটি দেখতে দেখতে, ছুঁয়ে থাকা নিঃশ্বাস অনুভব করতে করতে, গল্প কথায় পেরিয়ে যায় জীবনের সোনালী সময়।
সময়ের কাঁটা দ্রুত এগিয়ে চলে.. অবশেষে সবুজ পাতারা হলুদ হতে শুরু করে.. বোষ্টমীর বাউলের বিরহী তান শুনতে শুনতে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করে ওঠে ছোট গাছটি।
কখন মৃত্যুর গন্ধ ঝাপটা দেয় নাকে…. জমানো কান্না গুলিও একসময় বাকলের গা বেয়ে আঠার মত বেড়িয়ে আসে বড় গাছটির,তবুও বন্ধুর শুকিয়ে যাওয়া পাপড়ি গুলোকে সযত্নে তুলে রাখে গোপন কোটরে।
এভাবেই প্রতিনিয়ত কষ্ট পাওয়া বড় গাছটির একসময় অভ্যাস হয়ে যায়.. সেই অভ্যাসের খেয়া বেয়ে কোটরে জমা অজস্র গল্পের সাথে, সে নিজেও কোনও এক সময় হারিয়ে যায় মাটির নীচে।
অজস্র হারিয়ে যাওয়া জীবন ও জীবনের গল্প কথা জমে তৈরী হয় জৈবসার… যে সারেই প্রাণসঞ্চার হয় নতুন চারাগাছের। এভাবেই জীবন এগিয়ে চলে, আর তার কোটরে জমতে থাকে নতুন নতুন গল্পকথা….
Add Comment