ইতিহাস-ঐতিহ্য

কে ছিলেন সুলতান সুলেমান? কীভাবে তার মৃত্যু হয়?

সুলতান সুলেমান

হ্যালোডেস্ক

সুলতান সুলেমান ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান। ইতিহাসের কালজয়ী এক মহানায়ক ছিলেন তিনি। ১৫২০ থেকে ১৫৬৬ পর্যন্ত টানা ৪৬ বছর তিনি সফলভাবে সাম্রাজ্য শাসন করেছেন।

এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা মিলিয়ে তিন মহাদেশের বিরাট অংশজুড়ে অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল তখন। তার নৌবাহিনী ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগর আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ভীষণ সাহসী এই শাসক ছিলেন ন্যায়বিচারক ও সৎ। ইউরোপের ইতিহাসে তাকে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ক্ষমতা লাভ
বাবা সুলতান সেলিম-১ এবং মা সুলতানা হাফছা সুলতানের ঘরে ১৪৯৫ সালের ২৭ এপ্রিল ট্রাবজন-এ জন্ম হয় সুলেমানের। পরিবার থেকেই সুলেমানের পড়ালেখা ও চরিত্র গঠনের গুরুত্ব দিয়েছেন দাদী গুলবাহার খাতুন। সাত বছর বয়সে সুলেমান তার দাদা সুলতান বায়েজিদ-২ এর কাছে লেখাপড়ায় শুরু করেন। তৎকালীন বিখ্যাত সব জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, যুদ্ধের কৌশল নিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাবার সঙ্গে ট্রাবজন-এ ছিলেন সুলেমান। এই বয়সেই বাবার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।

সুলতান সেলিম-১ এর প্রয়াণের পরে ১৫২০ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান হিসেবে সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নেন সুলেমান। এই সময়ে তিনি পরিপূর্ণ যুবক, বয়স ছিল ২৫।

ব্যক্তি সুলেমান
সুলতান সুলেমান ছিলেন মেধাবী এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শাসক। একইসঙ্গে ধার্মিকও ছিলেন। সুন্নি ছিলেন তিনি। হালাল হারাম মেনে চলতেন। খুব ভালো কবিতাও লিখতেন। ইসলাম নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছেন। লিখেছেন প্রেমের কবিতাও।

প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতেন না কখনো। অপরাধীকে ক্ষমা করতেন না। জনগণের কাছ থেকে বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য পাওয়ার ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। ছদ্মবেশে নিজেই ঘুরে বেড়াতেন সাম্রাজ্যের মানুষের সমস্যাগুলো দেখার জন্য।

পারিবারিক জীবন
সুলেমানের চারজন সুলতানার মধ্যে সবচাইতে প্রভাবশালী ছিলেন হুররাম সুলতানা। হুররামের বুদ্ধিমত্তা, সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাসের জন্য সুলেমান ভীষণ ভালোবাসতেন তাকে। হুররাম ছিলেন সুলতানের পাঁচ সন্তানের মা। সুলেমানের মোট সাত পুত্র এবং এক কন্যা ছিল। এছাড়া আরও দুই শাহজাদা এবং এক শাহজাদি জন্মের কিছুদিন পরই মৃত্যুবরণ করে।

হুররামের বুদ্ধিমত্তা, সৌন্দর্য ও আত্মবিশ্বাসের জন্য সুলেমান ভীষণ ভালোবাসতেন তাকে।

যেভাবে মৃত্যুবরণ
বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন সুলতান সুলেমান। সাম্রাজ্যের সবাই ভেবেছিল সুলতান শয্যা থেকে উঠতে পারবেন না আর। সবাইকে ভুল প্রমাণ করে হাঁটা-চলা করতে কষ্ট হলেও অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে বীরের মতো মৃত্যুবরণ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই কবিরাজ এবং পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করেও হাঙ্গেরির সিগেতভার শহরে অভিযানে যান সুলতান।

অভিযানে থাকাকালীন অবস্থায় ১৫৬৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিজ তাঁবুতে মৃত্যুবরণ করেন সুলতান সুলেমান। মৃত্যুর দুই মাস আগে তার বয়স হয়েছিল ৭২। তাকে দাফন করা হয় ইস্তাম্বুলে।

তবে তার হৃদপিণ্ড, লিভার এবং আরও কিছু অঙ্গ দাফন করা হয় তুরবেক-এ। মৃত্যুর পর এক দশকের মধ্যেই তার সমাধিস্থলে বিখ্যাত সুলেমানি মসজিদ নির্মিত হয়েছে।

সূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া

আমাদের সাথে যুক্ত থাকতে লাইক বাটনে ক্লিক করুন। হ্যালোটুডে’র ইতিহাস বিভাগে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। আমাদের সমৃদ্ধ করে তুলতে পারেন, আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখা দিয়ে। হ্যালোটুডে আপনার মনের কথা বলে।

আর্কাইভ

ক্যালেন্ডার

October 2024
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031