সাময়িকী: শুক্র ও শনিবার
-সাঈদা নাঈম
চারপাশ এদিক ওদিক তাকিয়ে কাকে খুঁজছে সুবিনয়। হঠাৎ উপর থেকে একটি শব্দ ভেসে এলো :
-কাকে খুঁজছো সুবিনয় দা?
হঠাৎ এ কথা শুনে চমকে উঠলো সে। এরপর গাছের উপরে তাকালো। যা ভেবেছিল তা ই দেখলো। এ দস্যি মেয়ে আতা গাছের ডালে বসে পাকা আতা সাবাড় করছে। ও তাকাতেই উর্মিলা বলে উঠলো
– খুঁজো পরে। এখন উপরে উঠে এসো। কি পাকা আতা দেখো? কি যে মিষ্টি! চলে আসো।
– তুই খা। তুই তো খাদক হচ্ছিস। খেতে খেতে এত মোটা হবি যে বিয়ের পাত্র তোকে দেখে ভয়ে পালাবে।
-ইস্! বললেই হলো? তুমি আছো না? সবাই ছেড়ে চলে গেলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?
-ইস্! আমার বয়েই গেল। তোর মতো এমন কেঠবিড়ালীকে বিয়ে করবো আমি? তুই নেমে আয় তোর সাথে কথা আছে।
-না তুমি উপরে নে আসলেই আমি নামবোই না।
-তবেরে, দেখাচ্ছি মজা।
এই বলে সুবিনয় গাছে উঠে গেল। এরপর রীতিমতো টেনে নামালো।
-আহ্! ছাড়ো সুবিনয় দা, আমার হাতে লাগছে।
-নাম আগে, দেখাচ্ছি মজা। বড় হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল নেই, শুধূ ঘুরে বেড়ায়। একটু স্থির হয়ে বসতে পারিস না।
– না পারি না। কি বলবে বলো?
-কাল পহেলা বৈশাখ, মনে আছে তোর?
-থাকবে না কেন? কত আয়োজন চারপাশে দেখছো না?
-তুই আমার আয়োজন দেখবি না?
-তোমার আয়োজন! তোমার আবার আলাদা আয়োজন কি?
-আমার আলানা আয়োজন থাকতে নেই! আমার আলাদা জগৎ থাকাটা কি বেমানান?
– না, তা বলিনি। বলো। আমি শুনছি।
– এই নে এই প্যাকেট টা রাখ। তোর জন্য আমার ক্ষুদ্র আয়োজন।
-কি আছে এতে?
– খুলে দেখ।
উর্মিলা প্যাকেট খুলে দেখে লাল টকটকে একটা শাড়ী। ঠিক জবাব ফুলের মতো রঙ।
– বাহ্! সুন্দর তো। আমার জন্য?
-না আতা গাছের পেত্নীর জন্য।
– এ পেত্নী তোমার দেয়া এ শাড়ী নিতে পারবে না।
– কেন? শাড়ী কি দোষ করলো?
-শাড়ী করেনি। কিন্তু তোমার মা জানতে পারলে আমার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করবে। তোমার মায়ের যে মুখ! ওরে বাবা!
-তুই নিবি না?
– না।
-তাহলে তুই যে আমাকে কাল পাঞ্জাবী দিয়েছিস সেটাও পড়বো না।
-পড়ো না। কে তোমাকে বাধ্য করেছে? আমার পছন্দ হয়েছে, আমি কিনে তোমায় দিয়েছি। পড়া না পড়া তোমার ব্যাপার।
-সত্যি বলছিস? ভেবে বল। ফল কিন্তু ভালো হবে না?
-আরো ভালো, তুমি না থাকলে আমি আরমসে বসে আতা খেতে পারতাম।
-আমার চেয়ে আতা বড় হয়ে গেল!
-বুঝো যখন, এত কথা বাড়াও কেন? তোমার মা কে বুঝাতে পারো না?
– দেখ আমি অনেকদিনের জন্য চলে যাচ্ছি। তোর সাথে এ বৈশাখটা নিজের মতো করে কাটাতে চাই। আমাকে বঞ্চিত করিস না।
-ঠিক আছে। পেরেছি কখনও তোমার সাথে আমি?
– পারবিও না। কারণ আমি জানি তুই তোর নিজের চেয়েও বেশী ভালোবাসিস। স্বীকার করিস না।
-কি চুপ কেন? মিথ্যা বলেছি কিছু?
-সুবিনয় দা, তোমার আমার বিয়ে হবে তো?
-ভেবে দেখি। আতা গাছের পেত্নীকে বউ করা যায় নাকি?
-হেয়েলী করো না। তুমি পড়া শেষ করে যখন মস্তবড় অফিসার হবে, আমাকে ভুলে যাবে না তো?
-কোনোদিনও না।
-কথা দিচ্ছো তো?
-চৈত্রের এ শেষ প্রহরে আমি কথা দিচ্ছি।
নারীর অবুঝ মন। তুষ্ট হয়ে যায় এ ওয়াদা শুনে। চলে যায় সুবিনয় বৈশাখের পরেরদিন। রেখে যায় অনেক স্মৃতি। মাঝেমধ্যে চিঠি দেয়। ধীরে ধীরে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়।
উর্মিলা বুঝতে পারে ভবিষ্যৎ। ওর জীবনের এ অধ্যায়টি অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।
থেকে যাবে হৃদয়ের গহীণে অসমাপ্ত প্রেমকাহিনীর ইতিকথা।
Add Comment