শুভ নববর্ষ ১৪২৮
হ্যালোডেস্ক।। পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে- যাওয়া গীতি/অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা নববর্ষকে আবাহন জানিয়েছিলেন এভাবেই। কিন্তু বাঙালির জীবনে গত বছরের মতো এবারও এসেছে অন্যরকম বৈশাখ। এ বৈশাখ উৎসবহীন- মলিন।
চারদিকে বাজছে মৃত্যুর বাজনা, হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রিয় মুখ। করোনা মহামারি বিশ্ববাসীর মতো বাঙালির জীবনও করেছে তছনছ। তবুও আজ আরও একবার পুরনো বছরের জরা-জীর্ণকে পেছনে ফেলে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার সংকল্প নেবে বাঙালি।
আজ যে পহেলা বৈশাখ। বাঙালির জীবনে আজ নতুন বছরের প্রথম দিন। আজকের সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে সূচনা হলো বাংলা ১৪২৮ সালের। তবে আজকের এই বৈশাখ বাঙালির জীবনের গত বছরের বৈশাখের মতোই। করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক এই দুর্যোগের সময় আমাদের জীবন অবরুদ্ধ আবারও। ঘরে বসে পহেলা বৈশাখ উদযাপনে এবারও বাধ্য হচ্ছে বাঙালি। আজও প্রাণে প্রাণ মিলবে রাস্তা বা খোলা ময়দানে নয়, যার যার বাসায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ম্যাসেঞ্জারে।
আজ পহেলা বৈশাখের উৎসব হবে বাংলার ঘরে ঘরে, নিজেদের মতো করে। এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষের আবেদন চিরন্তন ও সর্বজনীন। তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখ বাঙালির এক আনন্দ-উজ্জ্বল মহামিলনের দিন। আনন্দঘন এ দিনে রাষ্ট্রপতি দেশে-বিদেশে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
তিনি বলেন, চির নতুনের বার্তা নিয়ে বাঙালির জীবনে বেজে ওঠে বৈশাখের আগমনী গান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির সম্প্রীতির দিন, বাঙালির মহামিলনের দিন। এদিন সমগ্র জাতি জেগে ওঠে নবপ্রাণে নব-অঙ্গীকারে। সারা বছরের দুঃখ-জরা, মলিনতা ও ব্যর্থতাকে ভুলে সবাইকে আজ নব-আনন্দে জেগে ওঠার উদাত্ত আহ্বান জানাই।’
করোনা সংক্রমণে বর্তমান বিশ্ব বিপর্যস্ত। সে কারণে গত বছরের মতো এ বছরও আমাদেরকে সীমিতভাবে সবাইকে জনসমাগম এড়িয়ে বাংলা নববর্ষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘরে বসে উদযাপনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
সব জায়গায় আজ দোলা দেবে পহেলা বৈশাখ তবে সেটা অন্যভাবে। বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশনার কারণে এবারের বৈশাখে থাকছে না শারীরিক উপস্থিতির কোনো আনুষ্ঠানিকতা। ‘কোভিড-১৯’ সারা বিশ্বকে অস্থির করে তোলার কারণে শারীরিক উপস্থিতিতে রমনার বটমূলে থাকবে না ছায়ানটের বর্ষবরণ, চারুকলায় থাকবে না মঙ্গল শোভাযাত্রা।
আর উদীচী, খেলাঘর, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, ছায়ানটসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোও গতবারের মতো এবারও উদযাপন থেকে নিজেদের বিরত রাখছে আনন্দ আর উদ্দীপনায়। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষ্যে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সব কারাগার, হাসপাতাল ও শিশু পরিবারে (এতিমখানা) উন্নতমানের ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হবে।
ছায়ানট : ছায়ানট তাদের ইউটিউব চ্যানেলে স্বল্প পরিসরে বৈশাখ বরণ করবে। ছায়ানটের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, প্রাথমিকভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল দর্শকশূন্য অবস্থায় অথবা পরিস্থিতি আরও বেশি প্রতিকূল হলে পহেলা বৈশাখের ভোরের অনুষ্ঠান আগেই রেকর্ড করে নেওয়া। সে লক্ষ্যে সম্মেলক দলের নিয়মিত মহড়াও চলছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির ক্রমান্বয় অবনতি এবং সরকারের সতর্কতামূলক বাস্তবিক সিদ্ধান্তসমূহ আমাদের মনে শিল্পীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কা গভীরতর করে তোলে।
চারুকলা অনুষদ : চারুকলা অনুষদ এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তবে নিজেদের তৈরি বিভিন্ন প্রতীক ও মোটিভগুলো তারা গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য অনুষদের আঙ্গিনায় প্রদর্শন করবে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : এদিকে পয়লা বৈশাখ সকাল ১১টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ফেসবুক পেজে অনলাইনে সরাসরি ‘নববর্ষ বরণ ১৪২৮’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। আলোচক থাকবেন লেখক, সাংবাদিক আবুল মোমেন।
ভার্চুয়াল এই আয়োজনে সংগীত পরিবেশন করবেন বুলবুল ইসলাম, অদিতি মহসিন, শারমিন সাথী ইসলাম ময়না ও বিমান চন্দ্র বিশ্বাস। নৃত্য পরিবেশন করবে স্পন্দন, আবৃত্তি পরিবেশন করবেন ইকবাল খোরশেদ জাফর ও অনন্যা লাবনী পুতুল, বাউল গান পরিবেশন করবেন বাউল দেলোয়ার ও সোনিয়া। অনুষ্ঠানটি উপভোগ করা যাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ফেসবুক পেজে
যশোরে ম্লান নববর্ষ উৎসব : যশোর ব্যুরো জানায়, এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ‘লকডাউনে’ ঘোষণায় ম্লান হলো নববর্ষ উৎসব। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাহমুদ হাসান বুলু জানান, বৈশাখের অনুষ্ঠান ঘিরে দেড়-দু’মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়। কিন্তু করোনার সেকেন্ড ওয়েব মোকাবিলায় সব আয়োজন ভেস্তে গেছে।
চাঁদেরহাট যশোরের সভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে গত বছরের মতো এবারো বাংলা বর্ষবরণ উৎসব আমরা করছি না। সুরবিতান সংগীত একাডেমি যশোরের সাধারণ সম্পাদক বাসুদেব বিশ্বাস জানান, খোলা ময়দানে এবারো নববর্ষের অনুষ্ঠান করব না; তবে অনলাইনে এ উৎসব আয়োজন করা হবে।
Add Comment